জসিম উদ্দিনের ছুড়ে ফেলা ময়দায় ভেসে উঠছে ছবি

আহসান হাবীব নীলু, কুড়িগ্রাম:
কালো কাপড়ে হাতে করা পেন্সিলের স্কেচে ময়দা ছুড়ে ফুটে তুলছেন বিখ্যাত মানুষদের ছবি। দেশের প্রধান মন্ত্রী, খেলোয়াড় সহ বিভিন্ন ব্যাক্তিবর্গের ছবি ফুটে তুলছেন ময়দা আর হাতের কারিশমায়। এমন অবাক করা হাতের কাজ দেখতে প্রতিদিন মানুষজন চোখ রাখছেন জসিম উদ্দিনের কালো কাপড়ের ক্যানভাসে। একাডেমিক শিক্ষা ছাড়াই বিখ্যাত ব্যক্তিদের ছবি এঁকে সারা ফেলেছেন কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের ছ-মিলের মিস্ত্রী জসিম উদ্দিন। অভিনব কায়দায় ময়দা ছুড়ে ছবি আঁকা দেখে অভিভুত শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা। সরকারি বা বে-সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা জসিম উদ্দিন হতে পারে একজন বড় মাপের আর্টের শিল্পী এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
দেখা গেছে,জসিম উদ্দিন একের পর এক ময়দা ছুড়ছেন কালো কাপড়ের ক্যনভাসে। আর এতেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে বিখ্যাত ব্যক্তিদের ছবি। চরাঞ্চলের একটি কলেজে ভবনের সামনে এভাবে ছবি আঁকা দেখতে ভীড় করছেন শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ।
রৌমারীর চর-শৌলমারীর কলেজ পাড়া এলাকার গোলাম হোসেন ও মহিলা বেগম দম্পতির বড় ছেলে জসিম উদ্দিন।পেশায় জসিম উদ্দিন একজন ছ মিল শ্রমিক। ছ-মিলে শ্রমিকদের সাথে গাছ কাটার কাজের ফাকে ছবি আঁকেন তিনি। প্রথমে কাঠের ফ্রেমে লাগানো কালো কাপড়ে বিখ্যাত ব্যক্তিদের স্কেস তৈরি করেন জসিম উদ্দিন। পরে সেই স্কেসের ওপর গাম লাগিয়ে পানিতে ধুয়ে কিছুটা শুকিয়ে নেন। তারপর কালো কাপড়ের সেই স্কেসের ওপর একের পর এক বাজারে কেনা খাওয়ার ময়দা ছুড়েই আঁকছেন স্পষ্ট ছবি। এভাবেই স্থানীয় কলেজ ও বিদ্যালয়ের ওয়ালে এঁকেছেন কবি নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, মেসি, সাকিব আল হাসানসহ দেশ ও সারা বিশ্বের নাম করা ব্যক্তিদের ছবি। জসিম উদ্দিনের এমন ছবি আঁকার প্রতিভা দেখে অভিভুত মিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা।
জসিম উদ্দিন জানান,পঞ্চম শ্রেনিতে পড়া অবস্থায় আর্টের নেশা শুরু করেন।সে সময় থেকে বন্ধু বান্ধব স্বজন শিক্ষকসহ সবাই তার আকা ছবির প্রশসংসা করতেন।অভাবের কারনে এসএসসি পাশ করার পর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেলেও ছবি আঁকার কাজ বন্ধ করেন নাই।সারাদিন কাজ করে বিকেল সময়টাতে ছবি আঁকতেন তিনি। সরকারি বেসরকারি ভাবে ছবি আঁকার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিতে পাড়লে ভালো কিছু করতে পারবেন এমনটা আশা তার পরিবারের
জসিম উদ্দিনের বাবা গোলাম হোসেন বলেন,সংসারে অভাব থাকায় এসএসসি'র পর আর লেখা পড়া করাতে পারি নাই। যদি কেউ সহযোগিতা করতো তাহলে আমার ছেলের স্বপ্নটা পুরন হতো।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোছাঃ সুমাইয়া জাফরিন বলেন,জসিম ভাইয়া অনেক সুন্দর ছবি আঁকেন।আমাদের বিদ্যালয়ের দেয়ালের চারপাশে তার আঁকা ছবি দেখে সবাই মুগ্ধ।ময়দা ছুড়ে এমন ছবি আঁকা কখনও দেখি নাই।
চর- শৌলমারী বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান শিকদার বলেন,জসিম উদ্দিন আমার প্রতিবেশি।ছোট বেলা থেকে সে ভালো ভালো ছবি আঁকতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পেলে জসিম উদ্দিন চিত্র শিল্পে বেশ সুনাম করতো।