কুড়িগ্রামে তিন নদীর পানি বিপদসীমার উপরে:বন্ধ রয়েছে ৩৪১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি ৬টি পয়েন্টে। নাগেশ্বরী এলাকায় দুধকুমার নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভঙ্গে (শনিবার) যাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত করছে। ফলে জেলার ৯ উপজেলার ৬০ ইউনিয়নের দুই লক্ষাধীক মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাফসান জানি জানান,ব্রহ্মপুত্রের পানি সামান্য হ্রাস পেয়ে চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার, হাতিয়া পয়েন্টে ৫৫ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ধরলার পানি তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ও কুড়িগ্রাম ধরলা ব্রীজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপরদিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো বিকাল তিনটায়। বেড়েছে তিস্তার পানিও। কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার মাত্র ১১ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে বন্যার পানি উঠায় জেলার ৯ উপজেলায় ৩৪১টি প্রাথমিক, মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদরাসায় পাঠদান সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ষান্মাসিক পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় জেলার নদ-নদীর অববাহিকার চার শতাধিক চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে ৭ দিন ধরে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে দুই লক্ষাধিক মানুষ। অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে গবাদি পশু নিয়ে উচু সড়ক ও বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবার সংকটে পড়েছেন চরাঞ্চলের বন্যা কবলিতরা। পাশাপাশি গবাদি পশুর খাদ্য সংকট নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা। তবে বানভাসি মানুষের মাঝে সরকারি ভাবে কিছু ত্রাণ সহয়তা লক্ষ্য করা গেলেও বেসরকারি ভাবে তেমন ত্রাণ সহয়তা দেখা যায়নি। রাজনৈতিক দল এবং এনজিও গুলো হাতগুটিয়ে আছে।
কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের জহুরুল হক বলেন, গত ৭-৮ দিন ধরে আমার চরের সব বাড়িতে পানি। গরু ছাগল হাস মুরগী নিয়ে পাশের উঁচু একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছি আমরা। আমার এখানকার সবারে খুব কষ্ট।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সামছুল আলম জানান, বন্যার পানি উঠার কারণে ১২১টি মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদরাসার পাঠদান সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে। বন্যা কবলিত নয়, এমন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। আর বন্যা কবলিত সকল বিদ্যালয়ের ষান্মাসিক পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন জানান, ৯ উপজেলায় বন্যায় প্লাবিত বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৫৩টি। এর মধ্যে পাঠদান বন্ধ রয়েছে ২২০টির।
জেলা কৃষি বিভাগের উপ পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, জেলায় বন্যার কারণে সবজি, বিজতলা ও বিভিন্ন ফসলের ৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমির ফসল এখন পানির নীচে। বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করা যাবে।
জেলা ত্রাণ ও পূর্নবাসন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হাই সরকার জানান, বন্যা মোকাবেলায় ৩শ ১৭ মেট্রিক টন চাল, ২১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও ১৯ হাজার ৩০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান ঢাকাস্হ বাপাউবো এর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে বলেন,
ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে অপরদিকে যমুনা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় উভয় নদীর পানি সমতল ধীর গতিতে হ্রাস পেতে পারে।
গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল সার্বিকভাবে হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, দেশের উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ২৪ ঘন্টায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
আগামী ৭২ ঘন্টায় কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলার ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যার পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
আগামী ২৪ ঘন্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতল সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে তিস্তা নদীর পানি সমতল কতিপয় পয়েন্টে স্বল্পমেয়াদে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং ধরলা ও দুধকুমার নদী সংলগ্ন কুড়িগ্রাম জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সামান্য অবনতি হতে পারে। দেশের নদ-নদীর ২১ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে এর মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলায় ৬ পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত স্টেশন (সে.মি.): ২১ টি।
পাটেশ্বরী (দুধকুমার) +৫১, কুড়িগ্রাম (ধরলা) +৩১, গাইবান্ধা (ঘাঘট) +২৬, নুনখাওয়া (ব্রহ্মপুত্র) +৫৩, হাতিয়া (ব্রহ্মপুত্র) +৫৬, চিলমারী (ব্রহ্মপুত্র) +৬৭, ফুলছড়ি (যমুনা) +৭৬, বাহাদুরাবাদ (যমুনা) +৮৬, সাঘাটা (যমুনা) +৮২, সারিয়াকান্দি (যমুনা) +৫৬, কাজিপুর (যমুনা) +৫৫, জগন্নাথগঞ্জ (যমুনা) +১১৮, সিরাজগঞ্জ (যমুনা) +৬১, পোড়াবাড়ী (যমুনা) +৩২, বাঘাবাড়ি (আত্রাই) +০১, কানাইঘাট (সুরমা) +৫১, অমলশিদ (কুশিয়ারা) +৭৭, শেওলা (কুশিয়ারা) +১১, মারকুলি (কুশিয়ারা) +২৮, কলমাকান্দা (সোমেশ্বরী) +২৯ এবং মেঘনা ব্রিজ (মেঘনা) +১২।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের উজানে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত (মি.মি.): জলপাইগুড়ি (পশ্চিম বঙ্গ) ১৬৭.০, শিলিগুড়ি (পশ্চিম বঙ্গ) ১০৪.০, দার্জিলিং (পশ্চিম বঙ্গ) ২০.০ এবং চেরাপুঞ্জি (মেঘালয়) ১৩.০।