ফুলবাড়ীতে ধরলার পানি বৃদ্ধি হাজার হাজার মানুষজন পানিবন্দি

আবব্দুল আজিজ মজনু, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম):
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধলরা বেষ্টিত ৪টি ইউনিয়নে যেপরিমান উজানের পাহাড়ী ঢল ও কাদা মিশ্রিত পানি যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা আগামী ২৪ ঘন্টায় ৪টি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষজন পানিবন্দি হয়ে পড়বে। এরই মধ্যে উপজেলা প্রশাসন ৪ হাজার ৫২০ জনের পানিবন্দির খবর জানালেও রোববার দুপুর ২ টা পর্যন্ত এ উপজেলায় প্রায় ৭/৮ হাজার লোক পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। চরাঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এদিকে শেখ হাসিনা ধরলা সেতু পয়েন্টে বিকাল ৩ টায় ধরলার পানি বিপদসীমার ৪০ সেঃ মিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
রোববার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধির কারণে বিপাকে পরেছে বানভাসি মানুষ। অনেকে ছুটছেন নিরাপদ স্থানের খোঁজে। অনেকেই মাচা ও টং তৈরি করে রাত্রিযাপন করছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ালেও এখনো সবার কাছে পৌঁছেনি সহায়তা। গো—খাদ্যের অভাবে গরু, ছাগল, ভেড়া নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে বানভাসি মানুষজন। বিশেষ করে ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে পরিবারের লোকজন আতংকগ্রস্থ। কেননা পানি যেভাবে প্রবেশ করছে তাতে করে বিপাকে রয়েছেন অভিভাবকেরা। উচু টং এ বসে রান্না করছে বানভাসিরা। এছাড়াও উপজেলার বড়ভিটা বাজার দিয়ে বড়ভিটা উচ্চ বিদালয় যাওয়ার রাস্তাটি একহাটু পানিতে তলিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা পরেছেন বিপাকে। বর্তমানে বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে উপজেলার বস্তি গোরকমন্ডল, চর—গোরকমন্ডল, যতিন্দ্রন্রায়ন, চর—যতিন্দ্রনারায়ন, সোনাইকাজী, পশ্চিম ও পূর্ব ধনিরাম, দক্ষিণ বড়ভিটা, চর—বড়লই, মেকলি, হাজির বাজার, বাংলা বাজার, খোচাবাড়ী ও রাঙ্গামাটি এলাকা। পানির তোড়ে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোরকমন্ডল বাঁধ থেকে আনন্দ বাজার যওয়ার একমাত্র রাস্তাটির উপর নির্মিত মুজিব কেল্লার পাশের সেতুটির উত্তর দিকে ডেবে গেছে এবং ধসে য়াচ্ছে রাস্তার মাটি। ফলে হাজার হাজার মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্নার অশংকায় রয়েছে।
বড়ভিটা ইউপি সদস্য শাহ আলম জানান, বন্যায় গরু বাছুর নিয়ে খুব বিপদে আছি। বর্তমানে পানিতে রয়েছে। গো—খাদ্যের খুবই সংকট। ঠিকমতো খাবার দিতে পারছি না।
ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ সুমন কান্তি সাহা জানিয়েছেন, বন্যা কবলিত এলাকার জন ৭ টা মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক ভাবে খোলা রয়েছে। ৬ হাজার পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট ও ১ হাজার খাবার স্যালাইন বিতরণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়ন ক্লিনিকে পযার্প্ত সেলাইন মজুত রয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফা ইয়াছমিন জানান, চলমান বন্যায় ২৬০শ হেক্টর ফসলি জমিন নিমজ্জিত হয়েছে। বিশেষ করে পাট, রোপা আমন বীজতলা, আউশ ধান, শাকসবজি, তিল, তিসি, চিনা, কাউন ফসল তলিয়ে গেছে। আমরা প্রতিনিয়ত খোজঁ খবর রাখছি। তবে কিছুদিন এভাবে পানি জমে থাকলে বীজতলাসহ ফসল বিনষ্ট হওয়ার আশংকা করছে চাষিরা।
বন্যা কবলিত মানুষের জন্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন থেকে ২১ মেঃ টন চাল ও ১ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জানান উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সবুজ কুমার গুপ্ত।
বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিন্টু জানান, তার ইউনিয়নের ৫টি মৌজার মানুষজন বন্যায় আক্রান্ত। পানিবন্দি রয়েছে প্রায় ৩/৪ হাজার মানুষ। সাধ্যমত চেষ্টা করছি তাদের পাশে থাকার।
ইউএনও রেহেনুমা তারান্নুম আমাদের প্রতিদিনকে জানান, ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। আমরা স্থানীয় চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে তথ্য নিচ্ছি। নিজেরাও ঘুরে ঘুরে দেখছি। বন্যা কবলিত সকল পরিবারকে আমরা খাদ্য সহায়তা প্রদান করছি। যতদিন বন্যা থাকবে ততদিন বরাদ্দ সাপেক্ষে সহায়তা অব্যাহত রাখব।
বিকাল ৩ টায় কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী রাকিবুল জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা ধরলা সেতু পয়েন্টে (তালুক শিমুলবাড়ী) ধরলার পানি বিপদ সীমার ৪০ মেঃ মিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।