১ চৈত্র, ১৪৩১ - ১৫ মার্চ, ২০২৫ - 15 March, 2025

চোখের জ্বলে বিদায় দিলেন আবু সাঈদকে

আমাদের প্রতিদিন
7 months ago
203


নিজস্ব প্রতিবেদক:

কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সমন্বয়ক আবু সাঈদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (১৭ জুলাই) সকাল ৯টায় রংপুরে পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে। এর আগে জাফরপাড়া মাদরাসা মাঠে তার জানাজা হয়। জানাজায় ইমামতি করেন আবু সাঈদের আত্মীয় মোঃ সিয়াম মিয়া।

আবু সাঈদের জানাজা ঘিরে মানুষের ঢল নামে। সকাল থেকে অনেকে জানাজায় অংশ নিতে জাফরপাড়া মাদরাসা প্রাঙ্গনে উপস্থিত হন। এর আগে মঙ্গলবার রাত দুইটার দিকে আবু সাঈদের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছায়। মরদেহ পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। ছেলের মরদেহ দেখে বাবা মকবুল হোসেন ও মা মনোয়ারা বেগম বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। তাদের শোক আর কান্নায় ওই এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে আসে।

মঙ্গলবার বিভিন্ন স্কুল কলেজের কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা রংপুর নগরীতে মিছিল বের করে পাঁচ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। এ সময় আবু সাঈদ তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। এরপর ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ শতাধিক রাউন্ড গুলি ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ আন্দোলনকারীদের হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আবু সাঈদ একাই অবিল দাঁড়িয়ে মোচকাবিলার চেষ্টা করেন। পুলিশের সামনে বুক উঁচিয়ে দিলে লক্ষ্য গুলি করলে তার বুকে বিদ্ধ হলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

হল ছাড়তে শুরু করেছে বেরোবি শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা হল ছাড়তে শুরু করেছেন। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) বন্ধ ঘোষণার পর বুধবার সকাল হতে হল ছাড়তে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দিনভর সংঘর্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী পুলিশের গুলিতে নিহতের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠে পুরো ক্যাম্পাস। পরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং ১৭ জুলাই দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশ দেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার রাতে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী।

তিনি জানান, ক্যাম্পাসে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ-ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে উত্তাল হয়ে উঠে বেরোবি ক্যাম্পাস। এই ঘটনা জানাজানি হলে পুরো ক্যাম্পাস দখলে নেয় আন্দোলনকারীরা।

রংপুর পার্কের মোড়ের নাম ‘আবু সাঈদ চত্বর’ দিলেন শিক্ষার্থীরা

পুলিশের গুলিতে নিহত কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয় কমিটির সদস্য ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদের স্মরণে রংপুর পার্কে মোড়ের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ আবু সাঈদ চত্বর’ নামকরণ করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের প্রোফাইল, বিভিন্ন পেজ এবং গ্রæপে এ দাবি জানান। বর্তমানে গুগল ম্যাপে পার্কের মোড়ের জায়গায় ‘শহীদ আবু সাঈদ চত্বর’ নাম দেখা যাচ্ছে।

ওবায়দুর রহমান নামে বেরোবির একজন ফেসবুক গ্রæপে লিখেন, ‘এরইমধ্যে গুগল ম্যাপে পার্কের মোড়ের নাম পরিবর্তন করে শহীদ আবু সাইদ চত্বর করা হয়েছে। এখন বাকিটুকু আপনাদের। তাকে সম্মান করে তার নামে এই চত্বরকে ডাকবেন নাকি অন্য নামে!’ আরেক শিক্ষার্থী ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘আজ থেকে রংপুর পার্ক মোড়ের নাম শহীদ আবু সাঈদ চত্বর- সাধারণ শিক্ষার্থী।’

বেরোবিতে আবু সাঈদের গায়েবানা জানাজা

এদিকে বুধবার (১৭ জুলাই) বিকেলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে আবু সাঈদের বিদায়ী উপলক্ষ্যে গায়েবানা জানাজা পড়েছে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী ও আশ-পাশের সাধারন মানুষ।

আগে থেকেই প্রচারণায় ছিলো বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে আবু সাঈদের গায়েবানা জানাজা হবে। তাই দুপুরের পর হতেই বিভিন্ন স্কুল-কলেজ হতে শিক্ষার্থীরা দলে দলে স্লোগান দিয়ে আসতে শুরু করে। পরে বিকেল ৩টার মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর পরিপূর্ণ হয়ে যায়। তারপরও আশপাশ হতে সাধারন মানুষ আসতে শুরু করে। পরে বিকেল সাড়ে ৩টায় গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ রংপুরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী আন্দোলনকারীরা রংপুর শহর হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নং গেটে অবস্থান নিলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। শিক্ষার্থীরা আহত সাইদকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth