কোটা বিরোধী আন্দোলনের বেরোবি’র প্রধান সমন্বয়ক
পুলিশের গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী সাঈদের বাড়িতে মাতম: সকালবেলা জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে: বেরোবি ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত: বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবী
নিজস্ব প্রতিবেদক:
রংপুরে কোটা বিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের লাশ তার পীরগঞ্জের গ্রামের বাড়ীতে সকাল সাড়ে নয়টা জানাযা শেষে বাবনপুরের পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়েছে। তার আগে জাফরপাড়া কামিল মাদ্রাসা মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেরোবি’র শিক্ষকরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। । জানাযায় সাঈদের পরিবারের সদস্য আত্নীয় স্বজন, বন্ধুসহ অনেক লোক অংশ গ্রহন করেন। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন ড.শফিক আশরাফ অংশ গ্রহন করেন। রাতে বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক নিহত শিক্ষার্থীর বাড়ীতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের শোক সমবেদনা জানান।
কড়া পুলিশ হাপড়ায় তার লাশ গ্রামের বাড়ীতে নেয়া হয় এবং জানাজাসহ কবর দেয়া পর্যন্ত পুলিশ সেখানে সতর্ক অবস্থানে ছিল। আবু সাঈদের লাশ সকাল সাড়ে ৮টায় তার গ্রামের বাড়ীতে পৌঁছিলে সেখানে এক হৃদয় বিদারক ঘটনার অবতারনা হয়। পরিবারের স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লে সেখানে উপস্থিত সকলেই শোকাহত হয়ে পড়েন। মঙ্গলবার রংপুরে কোটা বিরোধী আন্দোলকারীদের সাথে পুলিশ ও যুবলীগের ত্রিমুখি সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে নিহত হন কোটাবিরোধী আন্দোলনের বেরোবি’র প্রধান সমন্বয়ক আবু সাঈদ(২২) । তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের(বেরোবি’র) ইংরেজি বিভাগের ছিলেন। সকালে বাড়ীতে তার লাশ পৌঁছিলে শোকের মাতম শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তার বাবা—মা। নিহত ওই শিক্ষার্থী ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের ছাত্র ছিল বলে সহপাঠিরা জানান। অতি দরিদ্র পরিবার থেকে ওঠে আসা ওই নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদ ছিলেন অত্যান্ত মেধাবি। তিনি বাবার সাথে ক্ষেত মজুরি লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যেতেন। নিজের নতুন কাপড় ক্রয় করার সামর্থ না থাকায় প্রতিবেশিদের সহায়তার সে চাহিদা মেটাতেন বলে তার প্রতিবেশিরা জানান।
আবু সাইদ পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছোট ছেলে।
জানা গেছে, ৯ ভাইবোনের মধ্যে নিজের ইচ্ছায় লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন আবু সাঈদ। অভাবের কারণে অন্য সন্তানদের লেখাপড়া করাতে না পারলেও সাঈদ খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করেন। রংপুর সরকারি কলেজ থেকে একই ফলাফল নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন সাঈদ।
ভাইয়ের লাশ দেখে নিহতের ছোট বোন সুমির আর্তনাদে আকাশ বাতাশ ভারী হয়েছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, হামার ভাইকে ওরা মেরে ফেলল ক্যান? হামার ভাই বেঁচে থাকলে হামার স্বপ্ন পূরণ হতো বলে সে বিলাপ করছে।
ছেলের লাশ দেখে সাঈদের মা মনোয়ারা নির্বাক হয়ে বিলাপ করছেন। মাঝে মাঝে বাবা বাবা বলে চিৎকার করে করছিলেন তিনি। তার বাবা মকবুল হোসেনের পুত্র শোকে নির্বাক হয়ে আছেন। আবার কখনো বিলাপ করছিলেন। তার মৃত্যুতে এলাকা শোকে আচ্ছন্ন হয়েছে।
পীরগঞ্জ থানার ওসি মো.আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, পুলিশ পাহাড়ায় তার জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়েছে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিল।
এদিকে দুপুর বেলা বেরোবি’র সাধারণ শিক্ষকরা বেলা সাড়ে ১২টায় আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনা প্রতিবাদ জানিয়ে ক্যাম্পাসে শহীদ মিনারে অবসস্থান নেন। সেখান থেকে তারা পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন। তারা বলেন বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য তৎপর হলে এক অনাকাঙ্খিত মৃত্যুও দায় এড়ানো যেত। গুলিবিদ্ধসহ হামলার ঘটনায় কোন শিক্ষক নেতা ও উপাচার্য হাসপাতালে শিক্ষার্থীদেও খেঅঁজ খবর না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে শিক্ষরা মৌন শোক মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে বিশ^বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেটের সামনে রংপুর—ঢাকা মহড়কে দাঁড়িয়ে সমাবেশ করে কোটা আন্দোলকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও নিহত হওয়া ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। তাদেও মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক সমতির সভাপতি অধ্যাপক বিজন মোহন চাকী, শিক্ষক সমতিরি সাধারণ সম্পাদক আসাদ মণ্ডল, নদী গবেষক অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ, অধ্যাপক মতিউর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুকসহ একাধিক শিক্ষক।
বিকেল ৩টায় বেরোবি ক্যাম্পাসে নিহত আবু সাঈদের গায়েবনা জানাযা অনুষ্ঠিত কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে। ব্যানারে। য়েখানে বিশ^বিদ্যালয় দ্বিতীয় গেটের সামনে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হয় সেই এলাকার নাম আবু সাঈদ চত্বর নাম ঘোষণা করে সেখানে একটি সানি বোর্ড ঝুরিয়ে দেয়। পরে শিক্ষার্থীরা সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।