চিলমারী সিনিয়র আলিম মাদরাসায় অধ্যক্ষ পদে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ
হাবিবুর রহমান, চিলমারী (কুড়িগ্রাম):
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে চিলমারী সিনিয়র আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মোঃ নাজমুল হকের অভিজ্ঞতা ও চাকুরীতে প্রবেশের বয়সসীমা পূরণ না হলেও চিলমারী সিনিয়র আলিম মাদরাসায় গভর্ণিং বডি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রদানের অভিযোগ উঠেছে। অপর দিকে বিষয়টিকে আড়াল করতে প্রায় ৭মাস যাবৎ একই প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী (কাম কম্পিউটার অপারেটর) মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম কে প্রাণনাশের হুমকি ও বিভিন্ন পরিকল্পনা করে ব্যর্থ হওয়ায়, অবশেষে নিজেকে বাঁচাতে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে অধ্যক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন। এনিয়ে ঐ এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার "চিলমারী সিনিয়র আলিম মাদরাসার" অধ্যক্ষের শুন্য পদ পূরণে গত ২৩ জুলাই, ২০২৩ সালে, দৈনিক মানব জমিন ও দৈনিক যুগের আলো পত্রিকায় বেসরকারী বিধি মোতাবেক চিলমারী সিনিয়র আলিম মাদরাসার গভর্ণিং বডির সভাপতি বরাবর দরখাস্ত আহব্বান করা হয়েছে। উক্ত পদে মোট ১১ জন প্রার্থী আবেদন করেন। যাচাই-বাছাই কমিটি কর্তৃক ১১জন প্রার্থীকে বৈধ প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা করে তালিকা ভুক্ত করা হয়েছে। আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ পদে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদরাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ (২৩ নভেম্বর, ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত) মোতাবেক প্রার্থীর অভিজ্ঞতা ও চাকুরীতে প্রবেশের বয়সসীমা হলো, উপাধ্যক্ষ/সহকারী অধ্যাপক পদে ০৩ বছরের অভিজ্ঞতা এবং প্রভাষক হিসেবে (আরবি বিষয়সমুহে) ০৯ বছরের শিক্ষাকতার অভিজ্ঞতা অথবা দাখিল মাদ্রাসার সুপার হিসেবে, ০৫ বছরের অভিজ্ঞতা এবং আরবি (বিষয়সমুহে) ১০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার "নাজিমাবাদ দাখিল মাদরাসা" (আলিম স্তরে উন্নীত) থেকে আবেদনকারী মোঃ নাজমুল হকের উক্ত প্রতিষ্ঠানে সুপার পদে ০১ বছর ০৮ মাস ও আলিম স্তরে প্রতিষ্ঠানটি উন্নীত হওয়ায়, সুপার পদ থেকে সমন্বিত হওয়া অধ্যক্ষ পদে ১১ মাসের অভিজ্ঞতা নিয়ে, কাঙ্খিত অভিজ্ঞতা পূরণ না হওয়া সত্ত্বেও তার আবেদন পত্রটি যাচাই-বাছাই কমিটি কর্তৃক বৈধতা পাওয়ায় বাকী ১০ জন বৈধ প্রার্থীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়োগ কমিটির কর্ণগোচর হওয়ায় তারা নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে সন্ধিহান হয়ে পড়েন। কিন্তু অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান গভর্ণিংবডিকে ম্যানেজ করে একেবারেই শেষ সময়ে চলতি বছরে গত ২০ জানুয়ারী নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়েছে এতে মোঃ নাজমুল হককে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ প্রদান করেন। অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ কমিটি মোঃ নাজমুল হককে নিয়োগ দিবেন তা জানতে পেরে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেননি আবেদনকারী অনেকেই। "পাত্রখাতা রিয়াজুল জান্নাহ্ দাখিল মাদ্রাসার" সুপার মাঃ মোঃ আব্দুল আজিজ আকন্দ বলেন, শুনেছি অন্য কাউকে নেওয়া হবে তাই পরিক্ষায় অংশগ্রহন করিনি। পরিক্ষায় অংশ গ্রহনকারি ঐ মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মাঃ মোঃ ইয়ার আলী বলেন, আমি পরিক্ষায় দ্বিতীয় হয়েছি। আমার জানামতে নাজমুল হকের কাঙ্খিত অভিজ্ঞতা পূরণ না হওয়ার সত্ত্বেও কি ভাবে কমিটি নিয়োগ দিলো তা নিয়ে হতবাক হয়েছি। এ ব্যাপারে চিলমারী সিনিয়র আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মোঃ নাজমুল হক জানান, আমি বিধিমোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছি ও কাঙ্খিত অভিজ্ঞতা পূরণ না হওয়ায় আমি ভাইস প্রিন্সিপালের পদের বেতন নিচ্ছি। অপরদিকে অফিস সহকারী আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, শুরু থেকে বিষয় গুলো নিয়ে গভর্ণিংবডিকে অবগত করায় মোঃ নাজমুল হক তার উপর ক্ষিপ্ত হন এবং তাকে নাজেহালের জন্য সুযোগ খুজতে থাকেন। এক পর্যায়ে গভর্ণিংবডির সভাপতি, দাতা সদস্য ও শিক্ষক প্রতিনিধিদের সাথে অফিস সহকারী মোঃ আনোয়ারুল ইসলামের পারিবারিক জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরকে কাজে লাগিয়ে তাদেরকে দিয়েই গত ৫ মে মাদ্রাসা চলাকালীন সময়ে প্রাণ নাশের চেষ্টা চালায় এবং ঘটনাটিকে অন্যখাতে প্রবাহিত করেন। এবং অফিস সহকারীকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করেন অধ্যক্ষ। এ বিষয়টি জানাজানি হলে অভিভাবক ও স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মাদ্রাসার অফিস সহকারী মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমি মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট অনিয়মের বিষয়ে কথা বলায় অধ্যক্ষ আমাকে উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করেছেন, আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
চিলমারী সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল ও নিয়োগ বোডের সদস্য সচিব মাঃ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রাথীদের কাগজ পত্র গুলো ডিজিতে পাঠানো হয়েছে তারপর যাচাই বাছাই করে নিয়োগ বোড করা হয়েছে। বিধি মোতাবেক অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। টাকার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
এদিকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ নাজমুল হকের নিয়োগ বাতিল ও তদন্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোড়দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল বলে জানা গেছে।