‘জাতীয় বীর’ স্বীকৃতি চায় আবু সাঈদের পরিবার
তাহাম্মেল হোসেন সবুজ, মিঠাপুকুর (রংপুর):
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে ‘জাতীয় বীর’ স্বীকৃতি চায় পরিবার। হত দরিদ্র পরিবারের জন্ম নেওয়া মেধাবী এই শিক্ষার্থী দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করায় তাকে এই স্বীকৃতি দানে সরকারকে অনুরোধ করেন আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টার সময় অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস তার বাড়িতে যান। সেখানে তিনি আবু সাঈদের কবর জিয়ারত ও পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন। রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার জাফরপাড়া গ্রামের মকবুল হোসেনের সপ্তম সন্তান আবু সাঈদ। ২ মায়ের সংসারে মোট ৯ ভাই—বোন। বাবা মকবুল হোসেন হতদরিদ্র কৃষক। স্থানীয়ভাবে বর্গাচাষ করে চলে তার সংসার। আবু সাঈদের বড় মায়ের ৩ ভাই ও ১ বোন রয়েছে। ছোট মায়ের সংসারে রয়েছে আবু সাঈদসহ ৩ ভাই ২ বোন। এরমধ্যে আবু রায়হান নামে এক ভাই মানসিক প্রতিবন্ধি। পুরো পরিবারের একমাত্র মেধাবী ছিল আবু সাঈদ। তাই তাকে নিয়ে পরিবারের সদস্যদের আশা—আকাঙ্খা ছিল পাহাড় সমান। আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন (৩৫) বলেন, ‘দেশের জন্য আমার ভাই জীবন উৎসর্গ করেছে। আমরা গর্বিত। কিন্তু আমাদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, সেটি কোনকিছু দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন সাধারন শিক্ষার্থী ও জনতা আবু সাঈদকে যেন মনে রাখে। এজন্য আবু সাঈদকে ‘জাতীয় রীব’ স্বীকৃতি চাই।’ আপন চাচা মনজুর হোসেন (৬৫) বলেন, ‘অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করার জন্য এসেছেন। এরআগেও অনেকে এসেছে। তারা আমাদের খেঁাজ—খবর নিচ্ছেন। কিছুদিন পর সব স্বাভাবিক হলে আবু সাঈদকে সবাই ভুলে যেতে পারে। তাই সরকারী ভাবে তাকে স্বীকৃতি দেওয়ার অনুরোধ করছি।’রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে আবু সাঈদের গ্রাম জাফরপাড়া। পীরগঞ্জ—নবাবগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক হতে আধা কিলোমিটার উত্তরে তার বাড়িটি। বরেন্দ্র অঞ্চলের লাল মাটি দিয়ে তৈরী ঘরগুলো। গাছ—গাছালি দিয়ে ঘেরা গ্রামটিতে খুব বেশি উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। পুরো গ্রামটিতে কাঁচা ও আধা পাকা বাড়িঘর। বেশিভাগ মানুষের কাছে পেঁৗছাইনি পর্যাপ্ত শিক্ষার আলো। কৃষি নির্ভর গ্রামটির উজ¦ল নক্ষত্র ছিলেন আবু সাঈদ। তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেন গ্রামবাসী।
আবু সাঈদের চাচি জোসনা বেগম (৬০) বলেন, ‘আবু সাঈদকে নিয়ে আমাদের খুব আশা ছিল। সে ভাল কিছু করবে। এলাকার মানুষের মুখ উজ¦ল হবে। সে করেছে ঠিকই, তবে জীবন উৎসর্গ করে। দেশের মানুষ তাকে দীর্ঘদিন স্মরণে রাখুক এটিই চাই। এজন্য বর্তমান সরকারকে আন্তরিক হতে হবে।