দিনাজপুর শহরে সব অটোরিক্সা ও যানবাহন চলছে সারিবদ্ধভাবে:নেই কোন যানজট
ত্রিশ হাজার অটোরিক্সার শহরে পাল্টে গেছে সড়কের দৃশ্যপট
দিনাজপুর প্রতিনিধি :
হঠাৎ যেনো পাল্টে গেছে দিনাজপুর শহরের দৃশ্যপট। প্রায় ৩০ হাজার অটোরিক্সার এই দিনাজপুর শহরে সব অটোরিক্সাগুলোই চলাচল করছে সারিবদ্ধভাবে ও শৃংখলার সাথে। একটি অটোরিক্সা আরেকটিকে অভারটেক করছে না। সারিবদ্ধ অটোরিক্সা থেমে থেমে চললেও নেই কোন যানজট। একেবারেই কমে গেছে হেলমেট বিহীন মোটরসাইকেল চালকের সংখ্যা। বেপরোয়া গতিতে ও বিকট শব্দে পোংটা ছেলেদের মোটরসাইকেল চালানোর বিরক্তিকর দৃশ্যও তেমন নেই। যত্রতত্র রাস্তাও পার হচ্ছে না কেউ। শহরে পোশাকধারী একজন ট্রাফিক পুলিশ না থাকলেও সকলেই চলাচল করছে ট্রাফিক আইন মেনেই।
সাড়ে ২৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দিনাজপুর পৌরসভায় ১২২ কিলোমিটার পাকা রাস্তা। এই দিনাজপুর শহরের রাস্তায় চলাচল করে প্রায় ৩০ হাজার অটোরিক্সা। শহরের মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও কার্যত ছিলো না ট্রাফিক আইন মেনে চলার রীতি। অনিয়ন্ত্রিত অটোরিক্সা চলাচল করতো অনিয়ন্ত্রিতভাবেই। ফলে শহরজুড়ে সর্বদা লেগেই থাকতো যানজট। যানজটে প্রতিনিয়ত অতিষ্ঠ হয়ে থাকে শহরবাসী। মোটরসাইকেল চালকদের জন্য হেলমেট অপরিহার্য্য করা হলেও হেলমেট ব্যবহারের নিয়মনীতি উঠেই গিয়েছিলো। ব্যস্ততম শহরে পোংটা ছেলেদের সাইলেন্সারবিহীন মোটরসাইকেল দ্রুতগতিতে চালানোর ফলে শহরবাসীর জন্য ছিলো এক বিরক্তিকর পরিস্থিতি। বিকট শব্দে প্রতিনিয়ত হতো শব্দদুষন। সব মিলিয়ে অসহায় শহরবাসীকে এক বিরক্তিকর ও বিশৃংখল পরিস্থিতির মধ্যে শহরে চলাচল করতে হতো।
কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে দিনাজপুর শহরে পাল্টে গেছে এই দৃশ্যপট। শহরে কোন ট্রাফিক পুলিশ না থাকলেও বিশৃংখল এই পরিস্থিতি যেনো শৃংখলায় পরিনত হয়।
গতকাল শনিবার (১০ আগস্ট) দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল, যানবাহন, রাস্তা পারাপার—সবকিছুই চলছে শৃংখলার সাথে। ফলে শহরে চলাচলকারীদের নই কোন দুর্ভোগ, নেই কোন বিরক্তিকর পরিস্থিতি। আর এই বিশৃংখল পরিস্থিতি যে শৃংখলায় আনা সম্ভব, তা প্রমান করেছে শিক্ষার্থীরা।
গত ৫ আগষ্টের পর দিনাজপুর শহরে ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় জনগনের চলাচলের সুবিধার্থে রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা। বিএনসিসি, স্কাউট, গার্লস গাইড, রেডক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন স্কুল কলেজের সাধারন শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন শুরু করে। ট্রাফিক পুলিশের মতো কোন একাডেমিক প্রশিক্ষন না থাকলেও তারা দায়িত্ব পালন করে সুচারুভাবে। মানুষকে বুঝিয়ে, সম্মান দিয়ে তারা শহরে অটোরিক্সা, যানাবাহন চলাচলে শৃংখলায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। ইচ্ছা থাকলেই মানুষকে নিয়ম শৃংখলার মধ্যে নিয়ে এসে মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করা সম্ভব তা প্রমান করে শিক্ষার্থীরা।
দিনাজপুর শহরের কালিতলা এলাকার সড়কে শনিবার দুপুরে দিনাজপুর সরকারী সিটি কলেজের ছাত্রী প্রজ্ঞা ও তার এক সহপাঠি। তাকে জিজ্ঞেস করতে সে বলে, আমরা শিক্ষার্থীরাই এদেশে রাষ্ট্রীয় সংস্কার নিয়ে এসেছি। সবকিছুতেই শৃংখলা আসুক—এটাই আমরা চাই। শহরে ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে না আপাতত। এতে মানুষ তো দুর্ভোগে পড়বে। তাই আমরা ঘরে বসে থাকতে পারি না। এ জন্য নিজের দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা নেমেছি।
দিনাজপুর শহরের লিলির মোড়ে মনসুর আলী নামে এক পথচারী বলেন, ভাবতেই পারিনি দিনাজপুর শহরের বিশৃংখল সড়কে এমন শৃংখলা ফিরে আসবে। আমাদের সন্তানরা যে রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সবকিছুতেই শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে পারে তা প্রমান হলো। এ জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
খেঁাজ নিয়ে জানাযায়, ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় দিনাজপুর শহরে দায়িত্বপালন করছে বিএনসিসি, স্কাউট, গার্লস গাইড, রেডক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন স্কুল কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী।