২৮ ভাদ্র, ১৪৩১ - ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ - 12 September, 2024
amader protidin

মাস শেষ হলেও বেতন পাননি হাবিপ্রবি’র ১১০৬ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী

আমাদের প্রতিদিন
1 week ago
61


অভিভাবক ও প্রশাসনশুন্য হাবিপ্রবিতে বিরাজ করছে অস্থিতিশীল ও অচলাবস্থা :উদ্বেগে শিক্ষার্থী—শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

দিনাজপুর প্রতিনিধি :

টানা প্রায় এক মাস ধরে ভাইস চ্যান্সেলর না থাকায় অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে দেশের সর্বোত্তরের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)। অভিভাবকহীন এই শিক্ষাঙ্গনে প্রশাসন শুন্য থাকায় বিরাজ করছে অস্থিতিশীল ও একপ্রকার অচলাবস্থা। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রয়েছে উদ্বেগের মধ্যে। নানান সমস্যার মধ্যে রয়েছেন তারা। এদিকে প্রশাসন শুন্য থাকায় আগস্ট মাস শেষ হলেও বেতন পাননি হাবিপ্রবিতে কর্মরত ১ হাজার ১০৬ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। সমস্যা নিরসনে দ্রুত ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগের দাবী সংশ্লিষ্টদের।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান হাবিপ্রবি’র ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম. কামরুজ্জামান। পরবর্তীতে ৯ আগস্ট তিনি চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর বিভিন্ন প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগ করেন ৪৯ জন শিক্ষক। সবশেষ গত ১৫ আগস্ট পদত্যাগ করেন রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মোঃ সাইফুর রহমান। এতে প্রশাসনশুন্য হয়ে পড়ে হাবিপ্রবি।

গত প্রায় একমাস ধরে অভিভাবকহীন ও প্রশাসনশুন্য হয়ে পড়ায় নানাবিধ সমস্যায় রয়েছে বিশ^বিদ্যালয়টি। এরই মধ্যে গত ১৮ আগস্ট থেকে একাডেমিক কার্যক্রম (ক্লাস) শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু ক্লাস শুরু হলেও অনিরাপত্তা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। হাবিপ্রবি সূত্রে জানাযায়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল রয়েছে মোট ৯টি। এসব হলের একটিতেও নেই হল সুপার। ফলে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে হলে অবস্থানরত আবাসিক শিক্ষার্থীরা। হলগুলোতে ডাইনিং চালু না হওয়ায় আবাসিক শিক্ষার্থীদের খেতে হচ্ছে ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়ে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, অনেক শিক্ষার্থীই অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। ভাইস চ্যান্সেলর না থাকায় তারা পাচ্ছেন না সার্টিফিকেট। ডিগ্রি কমপ্লিট করে দেশের বাইরে লেখাপড়ার সুযোগ পেলেও অনেক শিক্ষার্থী দেশের বাইরে যেতে পারছেন না।

হাবিপ্রবি’র ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী সুজন রানা বলেন, ক্লাস শুরু হয়েছে, আগে যে রুটিন ছিলো—সে অনুযায়ী পরীক্ষাও হচ্ছে। কিন্তু ভাইস চ্যান্সেলর না থাকায় নতুনকরে পরীক্ষার রুটিন হচ্ছে না। ফলে অনেক পরীক্ষা আটকে রয়েছে। ভিসি না থাকায় নতুন প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্ঠা ও হলসুপারও নিয়োগ হচ্ছে না। ফলে হলগুলোকে খাওয়া—দাওয়াসহ নানান সমস্যায় রয়েছেন তারা। প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা না থাকায় বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে আলোচনার কেউ নেই। শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিরসনের দ্রুত ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগের দাবী জানান তিনি।

হাবিপ্রবিতে ভিসিসহ প্রশাসনশুন্য থাকায় সবচেয়ে বেশী সমস্যায় পড়েছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানাযায়, হাবিপ্রবিতে বর্তমানে শিক্ষক রয়েছেন ৩৮০ জন, কর্মকর্তা-২৩৮ জন এবং কর্মচারী রয়েছেন ৩৬০ জন। এছাড়াও এখানে মাস্টাররোলে কর্মরত রয়েছেন ৫৮ জন এবং নিরাপত্তা কর্মী রয়েছেন ৭০ জন। সব মিলিয়ে হাবিপ্রবিতে বর্তমানে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ১ হাজার ১০৬ জন। এছাড়াও পেনশনভোগী রয়েছেন ৫২ জন। এসব শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন হয় রেজিষ্ট্রার ও ফিন্যান্স ডিরেক্টরের স্বাক্ষরে। সবশেষে স্বাক্ষর করেন ভাইস চ্যান্সেলর। ভাইস চ্যান্সেলর ও রেজিষ্ট্রার পদত্যাগ করেছেন। আর ফিন্যান্স ডিরেক্টর মিজানুর রহমানও রাজনৈতিক কারনে বিশ^বিদ্যালয়ে আসতে পারছেন না। ফলে আটকে রয়েছে হাবিপ্রবিতে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন। আগস্ট মাস শেষ হলেও বেতন পাননি তারা। পেনশনের টাকা তুলতে পারেননি ৫২ জন পেনশন ভোগী। মাস শেষ হলেও বেতন না পাওয়ায় দুর্ভোগে রয়েছেন পেনশনভোগীসহ কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

শুধু বেতন নয়, ভাইস চ্যান্সেলর না থাকায় বেশ কয়েজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী অসুস্থ্য হওয়ার পরও চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে পারছেন না। এদের মধ্যে বিশ^বিদ্যালয়ের ভেটেরিনারী শাখার কর্মচারী অরুন কুমার দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। চিকিৎসার জন্য গত ২৬ আগস্ট ভারতে যাওয়ার কথা ছিলো তার। কিন্তু ভাইস চ্যান্সেলর না থাকায় ভারতে যেতে পারছেন না তিনি।

হাবিপ্রবি’র ডেপুটি রেজিস্ট্রার খাদেমুল ইসলাম জানান, ভাইস চ্যান্সেলর না থাকায় নানান সমস্যায় রয়েছেন তারা। ভিসি নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ গুরুত্বপুর্ণ প্রশাসনিক পদে নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। দ্রুত ভিসি নিয়োগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে গতি ফিরিয়ে আনার দাবী জানিয়েছেন তিনি।

হাবিপ্রবি’র শিক্ষক প্রফেসর ড. হাসান ফুয়াদ এলতাজ বলেন, ভাইস চ্যান্সেলর হচ্ছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক। ভাইস চ্যান্সেলর পদটি শুন্য থাকায় অভিভাবক শুন্য হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। নতুন ভিসি নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত অভিভাবকশুন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রয়েছেন উদ্বেগের মধ্যে। কারন এই মুহুর্তে কোন সমস্যা হলে সিদ্ধান্ত নেয়ার কেউ নেই। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্বেগ কাটাতে এবং বিশ্ব্বিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দ্রুত ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগের দাবী জানিয়েছেন তিনি।

 

 

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়