দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার সৎ ও যোগ্য জনবল প্রয়োজন
আঃ রহিম, পাগলাপীর রংপুর:
বাংলাদেশের জন্ম ৫৩ বছর পেরিয়ে গেছে। স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে আমাদের উন্নয়ন-অগ্রগতি যেখানে পৌঁছানোর কথা ছিল, তা আমরা পাইনি। ব্যক্তি-গোষ্ঠী, পরিবার গঠন করতে গিয়ে জনগণের কথা আমরা সবাই ভুলে গেছি। তাই প্রয়োজন হলো দেশটাকে নতুন করে আবার স্বাধীন করার। গত ১৬ বছর হাসিনা বাংলাদেশকে পৈতৃক সম্পত্তি বানিয়ে তার আশপাশের লোকদের অবৈধ সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন । হাসিনার লোকদের দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির কিছু নমুনা জনসম্মুখে প্রকাশ করেছে। আজিজ, বেনজীর, এস আলম, সালমান এফ রহমানসহ দলে দলে টাকার অবৈধ নমুনা জনগণের সামনে আসতে শুরু করেছে। ধরলেই শতকোটি, হাজার কোটি, হাসিনার পিয়নেরাও ৪০০ কোটি, টাকার মালিক। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে সৎ, যোগ্য ও নীতিবান জনবল একান্ত প্রয়োজন। পিয়ন থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান পর্যন্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারী যদি সৎ, যোগ্য ও দুর্নীতিমুক্ত হয়, তবে আমাদের এ জন্মভূমি বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হতে বেশি সময় লাগবে না। ইসলামী ব্যাংক হায়েনার ছোবলে পড়ে এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। চিকিৎসাক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক ১৯৮০ সালে শুরু করে আজকে বাংলাদেশের প্রথম কাতারে চিকিৎসার সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়ে আছে ইবনে সিনার মাধ্যমে। সর্বশেষ গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে জনগণের ক্ষোভে হাসিনা ও তার দোসররা দেশ থেকে পালিয়ে যায়। আত্মগোপনে গিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছে অনেকে। সাবেক মন্ত্রী-এমপি, অসৎ ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে আত্মগোপন করেছে, তাদের ছাড় দেয়া যাবে না। আবার আইন নিজেদের হাতে তুলে নেয়া যাবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তাদের তুলে দিতে হবে। ইতোমধ্যে ধরিয়ে দেয়ার কাজ শুরু হয়ে গেছে। বিচারপতি সহ বড় বড় নেতারা এখন আইনের আওতায় রয়েছে। রিমান্ডের ওপর রিমান্ড চলছে। আসল তথ্য বের করার চেষ্টা চলছে। পুলিশ বিভাগকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা চলছে। সৎ-দুর্নীতিমুক্ত মানুষ সব জায়গায়ই আছে। তাদের সামনে এনে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনের কাজে লাগাতে হবে। নতুন সরকারের উপদেষ্টারা তাদের কাজ করে যাচ্ছেন। হঠাৎ করেই সব শেষ করা যাবে না সময় দিতে হবে। তাদের কাজে সার্বিক সহযোগিতা করতে হবে। মনে রাখতে হবে দেশ-বিদেশের ষড়যন্ত্রের লোকেরা বসে নেই। তাই তাদের হাত ভেঙে দিতে হবে। চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। দাবির নামে কেউ যাতে ষড়যন্ত্রের শিকার না হয়, তা দেখতে হবে। আমরা পরামর্শ ও যুক্তি দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে চাই। যার যার দায়িত্ব যথাথভাবে পালন করতে হবে। আমরা আশা করি ড. ইউনূস সাহেব অভিজ্ঞ মানুষ, তিনি তার উপদেষ্টাদের সহযোগিতায় দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবেন। মনে রাখতে হবে গ্রাম থেকে শহর সবপদ থেকে চোর-বাটপারদের কে উচ্ছেদ করে ভালো মানুষ বসাতে হবে। ইউএনও, ওসি, ডিসি, এসপি সর্বক্ষেত্রে ভালো মানুষের পদায়ন করতে হবে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ইতোমধ্যে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। আরো সময় দিতে হবে- যাতে সর্বক্ষেত্রে সঠিক লোক নিয়োগের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা যায়। রাজনৈতিক দলগুলোকে যৌক্তিক পরামর্শ দিয়ে এ সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো সব শ্রেণির মানুষের সাথে মতবিনিময় করে সবাইকে দেশ গড়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশে সব মানুষ সমান অধিকার নিয়ে সমাজ পরিবর্তনের কাজে শরিক হতে রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানান। ইতোমধ্যে ভারতের কারণে আমাদের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকা পানিতে ভাসছে। ঘর পর্যন্ত ডুবে গেছে। লাখ লাখ লোক পানিতে ডুবে আছে। খাবারের অভাব পড়েছে। সরকারি ও বেসরকারি মহল, সেনাবাহিনী বন্যাদুর্গতদের উদ্ধার ও খাদ্যের ব্যবস্থা করছে। ছাত্র-জনতা এবার সবসময় বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ছাত্ররা ঢাকায় সাহায্য ক্যাম্প স্থাপন করেন। খাদ্য, কাপড়, সহ বিভিন্ন জিনিস সংগ্রহ করে দূরদূরান্তে পাঠাচ্ছেন ছাত্র-জনতা এটি খুবেই ভালো উদ্যোগ। এবার ত্রাণ চুরির লোকেরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সরকার ইতোমধ্যে রাজনৈতিক মামলাগুলো তুলে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানেই হাসিনা তাদের লোক বসিয়ে রেখেছে, তাদের বহিষ্কার করতে হবে আইন মেনেই। সৎ, দুর্নীতিমুক্ত মানুষ সরবরাহ করার কাজ করতে হবে। ভালো লোকের দিতে হবে। । সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে। বিলম্ব করা যাবে না। বন্যাদুর্গতদের সাহায্যের জন্য দেশ ও বিদেশের সাহায্য চাইতে হবে। এনজিওগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। নতুন সরকারের এ বন্যার মোকাবিলা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ভালোকরে বন্যা মোকাবিলা করতে পারলে দেশে-বিদেশে ভালো ফল পাওয়া যাবে। সেনাবাহিনী ও ছাত্র-জনতা মাধ্যমে বাংলাদেশকে সমূহ বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন। আমাদের সবার উচিত হবে ছাত্র-জনতার ত্যাগ, শহীদ হওয়ার মূল্য দেয়া এবং বাংলাদেশ দুর্নীতিমুক্ত করে সাজাতে হবে এখনি। মৃত্যুর মিছিল সারা দেশেই ছড়িয়েছিল। হাসিনা, জয়, পুতুলরা বসে নেই। ইতোমধ্যেই প্রচার হয়েছে আনসারদের উসকানি দিয়েছে । ছাত্র-জনতা সামরিক বাহিনী তাদের ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে। দেশ আমাদের, এ দেশ গড়ব আমরাই। বিদেশে থেকে ষড়যন্ত্র করে দেশের রাজনীতিতে প্রভাব খাটানোর দিন চলে গেছে। মানুষ বুঝে গেছে, কারা তাদের বন্ধু, কারা শত্রু। দেশের মানুষ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে না। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এখনই সময়। ব্যাংক লুটকারী, টাকা পাচারকারীদের দেশে এনে বিচার করতে হবে। মিল-কারখানা গুলো প্রশাসক নিয়োগ করে চালাতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে হবে । কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেকার করা যাবে না। সর্বক্ষেত্রেই সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকেরা বুদ্ধিমত্তার সাথে দুর্নীতিমুক্ত লোকদের প্রশাসনে নিয়োগ করে সচল রাখতে হবে। দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রফতানিযোগ্য পণ্য রফতানি ঠিক রাখতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রা দেশের জন্য খুবই জরুরি। হাসিনার দালালরা গা-ঢাকা দেয়েছে। চাঁদাবাজি বাংলাদেশ থেকে প্রতিরোধ করতে হবে। ইতিমধ্যেই জামায়াতে ইসলামী আমীর ডা. শফিকুর রহমান ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সতক করেছেন তাদের কর্মীদের যার যার এলাকায় চাঁদাবাজি প্রতিরোধ করতে হবে, কোনোমতেই যেন আমাদের কর্মীরা এ কাজে জড়িত না হয়।