৪০০ সিটের বিপরীতে ৮০০ ছাত্রী, কারাবন্দী থেকেও মানবেতর জীবন গণরুমে থাকা রাবি ছাত্রীদের
রাবি সংবাদদাতা:
মাত্র দেড়ফুটের দূরত্বে দুটি বেড। ৩০ থেকে ৫০টি বেড দিয়ে সাজানো একটি রুম। রুমের ধারণক্ষমতা সর্বোচ্চ ৫০ জন ছাত্রীর। কিন্তু ডাবলিং করে থাকছেন ১শ' জন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ছাত্রীদের ৬টি হলের গণরুমের চিত্র অনেকটাই এরকম।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থী রয়েছে ২৬ হাজার ৩৭০ জন। এর মধ্যে ৯ হাজার ২৯৩ জন ছাত্রী। যেখানে ৬টি হলে ৪ হাজার ২০৪ জন মেয়ে শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন। বাকি ৫ হাজার ৮৯ জন এখনো আবাসিকতা পাননি।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, গণরুম যেন এক জেলখানা। তাছাড়া হলের গণরুমের বৈদ্যুতিক লাইনে প্রায়ই শর্ট-সার্কিটের ঘটনা ঘটে। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। খালেদা জিয়া হলে রিডিং রুম থাকলেও অধিক শিক্ষার্থীর কারণে সেখানে সবার জায়গা সংকুলান হয় না। আর চারটি গণরুমের দুই শতাধিক শিক্ষার্থীদের জন্য বাথরুম মাত্র আটটি। বঙ্গমাতা হলে ৮০টি সিটের গণরুমে জানালা রয়েছে মাত্র ৪টি। ফলে সব সময় সেখানে প্রচুর গরম থাকে এমনকি বসবাস করা অনুপযোগী হয়ে উঠে বলে জানান তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মন্নুজান হলের চারটি গণরুমে দুই শতাধিক, তাপসী রাবেয়া হলের দু’টি গণরুমে ২৮০ জন, খালেদা জিয়া হলের দুটিতে প্রায় ২০০, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের একটিতে ২১০, বেগম রোকেয়া হলে পাঁচটিতে প্রায় ২৫০ ও রহমতুন্নেছা হলের কয়েকটি গণরুমে প্রায় ২৫০ জন ছাত্রী থাকেন।
ছাত্রী হলের প্রাধ্যক্ষরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের দরিদ্র পরিবার থেকে আসা অনেক ছাত্রী ভর্তি হয়। যাদের হলে না থাকলে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে হাজার কষ্ট হলেও তারা গণরুমে থাকতে চায়। একটি গণরুমে ১৫০ শিক্ষার্থীর ধারণক্ষমতা থাকলেও ২৫০ জনের মতো শিক্ষার্থীকে অ্যালট দেয়া হয়। যার ফলে সমস্যা তৈরি হয়। তবে হলে রুমের সংখ্যা বাড়াতে পারলে কিছুটা কষ্ট কমবে।
খালেদা জিয়া হলের গণরুমে থাকা দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বাইরে থেকে প্রথমবার কেউ গণরুমগুলোকে আসলে বস্তির সঙ্গে তুলনা করেন। শিক্ষার্থীদের তুলনায় বাথরুমের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। চারটি গণরুমের দুই শতাধিক শিক্ষার্থীদের জন্য বাথরুম মাত্র আটটি, তার মধ্যে দুটি বাথরুমের দরজা আটকানো যায় না।’
মন্নুজান হলের গণরুমে থাকা তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, 'গণরুমের পরিবেশ একদমই অস্বাস্থ্যকর। আমাদের পর্যাপ্ত ওয়াশরুম নেই। হলে নেই ওয়াইফাই সুবিধা। মাঝে মধ্যেই বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট হয়, ট্রান্সমিটার ব্লাস্ট হয়। সবসময়ই ঝুঁকিতে থাকি। এছাড়া রান্নার কোনো পরিবেশ নেই বললেই চলে।'
জানতে চাইলে মন্নুজান হলের প্রাধ্যক্ষ আশিয়ারা খাতুন বলেন, 'আমরা সার্বিকভাবে মনিটরিং করে ছাত্রীদের সমস্যাগুলো ক্ষতিয়ে দেখছি। হলে ওয়াইফাইয়ের ব্যবস্থা করছি। এছাড়া উপাচার্য স্যারের সাথেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আস্তে আস্তে সমস্যাগুলো নিরসনে কাজ করা শুরু করেছি।'
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকিব বলেন, 'আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। সমস্যাগুলো নিয়ে প্রশাসন অবগত। হল প্রাধ্যক্ষদের সাথে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করছি। হলে ওয়াইফাই সুবিধা থেকে শুরু করে বাথরুমের সংখ্যা বাড়ানো হবে। তবে ছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হল নির্মাণাধীন রয়েছে। সেখানে সিট সংখ্যা এক হাজার। ফলে কিছুটা সংকট কাটিয়ে নতুন করে জায়গা দেওয়ার সুযোগ হবে।'