জাতীয় গ্রীডে যোগ হচ্ছে ২৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ
চালু হলো বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিটও
দিনাজপুর প্রতিনিধি:
দুই সপ্তাহ সময় নেয়া হলেও এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই চালু করা সম্ভব হয়েছে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বন্ধ হয়ে যাওয়া তৃতীয় ইউনিটটি। ফলে কয়লা ভিত্তিক এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বর্তমানে (১৫ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টা) জাতীয় গ্রীডে যোগ হচ্ছে ২৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক।
প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিট বন্ধ থাকার পর গত ৯ আগস্ট তৃতীয় ইউনিটের ইলেকট্রো হাইড্রোলিক ওয়েল পাম্প (টারবাইন জেনারেল) নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন। চুক্তিবদ্ধ চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হারবিন ইন্টারন্যাশনাল এই ওয়েল পাম্পটি সরবরাহের জন্য দুই সপ্তাহ সময় নেয়। কিন্তু প্রধান প্রকৌশলী বিভিন্ন উদ্যোগ অব্যাহত রেখে শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলের মধ্যেই ওয়েল পাম্পটি চীন থেকে বাংলাদেশে আনতে সক্ষম হন। সেটি শনিবার দিবাগত রাত ৩টায় বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এনে ওয়েল পাম্পটি স্থাপন করার পর রোববার দুপুর ২টায় তৃতীয় ইউনিটটি চালু করা সম্ভব হয়।
প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টা থেকে ২৭৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন তৃতীয় ইউনিটটি থেকে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, এর আগে গত ১২ আগস্ট রাত ৮টা ৩২ মিনিট থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটি চালু করা হয়। ১২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন প্রথম ইউনিটটি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ৬৫ মেগাওয়াট। ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের মধ্যে দুটি ইউনিট থেকে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এই দুটি ইউনিট দিয়ে রোববার দুপুর ২টা থেকে ২৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি সুত্র জানায়, পাশ^বর্তী বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কয়লার উপর ভিত্তি করে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পর্যায়ক্রমে মোট তিনটি ইউনিট স্থাপন করা হয়। এই তিনটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৫২৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ১২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ১ নং ইউনিট, অনুরূপ ১২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ২ নং ইউনিট এবং ২৭৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ৩নং ইউনিট। দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে ২নং ইউনিটটি। যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে গত ৭ সেপ্টেম্বর বন্ধ হয়ে যায় প্রথম ইউনিটটি। সবশেষ ইলেকট্রো হাইড্রলিক ওয়েল পাম্প নস্ট হয়ে যাওয়ার কারনে গত ৯ সেপ্টেম্বর বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিটটিও। ফলে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। ১২ সেপ্টেম্বর প্রথম ইউনিট এবং ১৫ (আজ) তৃতীয় ইউনিটটি থেকে উৎপাদন শুরু হয়।
এদিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংশ্লিষ্টরা জানান, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিট চালাতে দৈনিক ৫ হাজার ২’শ মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন হয়। বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মজুদ রয়েছেন প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন কয়লা। কিন্তু কখনোই তিনটি ইউনিট এক সাথে চালানো হয়নি।
উল্লেখ্য, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কয়লার উপর ভিত্তি করে ২০০৬ সালে চীনা কারিগরী সহায়তায় দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ১ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। প্রত্যাশা ছিলো, দেশের উত্তরাঞ্চলে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো। প্রথম অবস্থায় মোট ২৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি ইউনিট স্থাপন করা হয়। পরে আরও ২৭৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন আরেকটি ইউনিট স্থাপন করা হয়। মোট ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কখনোই পুরোপুরি উৎপাদনে যেতে পারেনি। শুরু থেকেই একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটির মধ্যে থাকে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি।