ফুলবাড়ীতে স্কুল ছাত্রীকে অপহরণ পুলিশ বলছে প্রেমের ঘটনা
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দশম শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রীকে অপহরণ করা হয়েছে। ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের অনন্তপুর গ্রামে বুধবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে ওই ছাত্রীর বাবা অর্জুন চন্দ্র সেন ফুলবাড়ী থানায় অপহরণের মামলা দায়ের করেছেন। পূর্ব ঘোষণা দিয়ে এই অপহরণ করা হয় বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করলেও পুলিশ বলছে, অপহরণকারী সঙ্গে স্কুল ছাত্রীটির প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং পূর্বের হুমকির সঙ্গে এ ঘটনার সম্পর্ক নেই।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার অনন্তপুর গ্রামে সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে কে বা কারা হিন্দু পাড়ায় একটি গাছে চিঠি টাঙিয়ে দেয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয় ‘এই বাড়ির মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে এবং মুসলমান বানানো হব।’ এ ঘটনায় ৪ সেপ্টেম্বর ওই গ্রামের রনজিত চন্দ্র সেন ফুলবাড়ী থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন।
সেই দিনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেহেনুমা তারান্নুমের নির্দেশে গাছ থেকে চিঠিগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। এতে আতংকিত হয়ে পড়েন ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, অর্জুন চন্দ্র সেনের মেয়ে ছবিতা রানী সেন (১৫) অনন্তপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শেণির শিক্ষার্থী। বুধববার বিকালে ৫ টার দিকে কোচিং সেন্টার থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাকে অপহরণ করা হয়। অনন্তপুর গ্রামের মৃত আব্দুল হালিমের ছেলে আলিনুর রহমান (৩৫) তার সাঙ্গপাঙ্গ এই অপহরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন।
অর্জুন চন্দ্র সেন বলেন, ‘আমার মেয়ে খুবই শান্ত স্বভাবের। সে পড়াশুনায় খুবই মনোযোগী। আমার মেয়ে বাড়ি থেকে কোচিং যাওয়ার পথে আলিনুর ও তার কয়েকজন সাঙ্গপাঙ্গ মিলে তাকে জোরপূর্বক অপহরণ করেছে। আমার মেয়েকে তারা গোপন স্থানে বন্দি করে রেখেছে। আমি আমার মেয়েকে অক্ষত অবস্থায় ফেরত চাই।
অনন্তপুর গ্রামের অধিবাসী রনজিত চন্দ্র সেন বলেন, ‘আমরা ৪ সেপ্টেম্বর থানায় জিডি করেছিলাম। পুলিশ আন্তরিকভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখলে দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করতে পারতো। দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় আনলে আমাদের গ্রামের মেয়ে অপহরণের শিকার হতো না।’
ফুলবাড়ী থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) নওয়াবুর রহমান জানান ,জিডি করেছিলেন ওই গ্রামের রনজিত চন্দ্র আর অপহরণ করা হয়েছে অর্জুন চন্দ্রের মেয়েকে। কাজেই ওই চিঠির সঙ্গে এই অপহরণের ঘটনার মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। আলিনুর, তার ভাই আল আমিন, ভগ্নিপতি আব্দুল হানিফ ও বোন রাশেদাকে আসামী করে অপহরণের মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে এবং পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে।
ওসি আরো জানান, প্রাথমিক তদন্তে তারা জানতে পেরেছেন, অপহরণকারী যুবকের সঙ্গে স্কুল ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কয়েকমাস আগে ছেলেটি পারিবারিক চাপে বিয়ে করলেও ছাত্রীটির চাপে গত ১২ সেপ্টেম্বর তার স্ত্রীকে তালাক দেন যুবকটি।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রেহেনুমা তারান্নুম বলেন, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। অপহৃত স্কুলছাত্রীকে অক্ষত উদ্ধার ও অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জন্য তিনি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।