২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ - ১৬ মে, ২০২৫ - 16 May, 2025

মাদ্রাসা যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে মেয়েটি, আতঙ্কে আছেন পরিবার

আমাদের প্রতিদিন
7 months ago
166


সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি:

নিজ প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী মো. আল আমিন মিয়ার উত্ত্যক্তের কারণে প্রায় ১৭ দিন ধরে মাদ্রাসায় যাওয়া বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি সময়ে তাঁকে নিয়ে সোশাল মিডিয়া ফেসবুকে নানা কথা ছড়িয়ে পড়ায় মেয়েটি মানষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবরে আবেদন করেও নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছে না তার পরিবারের লোকজন। বরং উল্টো আরও তাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। তাই বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না অভিভাবকগণ ও সার্বক্ষণিক পাহারা দিয়ে রাখছেন মেয়েটিকে। মো. আল আমিন মিয়া উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর কুরুয়াবাদা ইসলামিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারী।

মেয়েটির মামা মো. আমজাদ হোসেন বলেন, 'ভাগ্নি আমাদের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে। বর্তমান সে ওই মাদ্রাসায় দশম শ্রেণিতে পড়ছে। ঘটনার দিন ভাগ্নীর মোবাইল ফোনটি আমাদের কাছে ছিলো। ঠিক সই মুহুর্তে অফিস সহকারী মো. আল আমিন মিয়ার মোবাইল নম্বর থেকে একটি এসএমএস আসে তার ফোনে। এসএমএসটি ছিলো, "ও জান কথা বলো না কেনো গো"। পরে বিষয়টি নিয়ে ভাগ্নীর সাথে কথা বলি। নিজ মাদ্রাসার অফিস সহকারী তাকে উত্যক্ত করে আসছে বিষয়টি তখন স্বীকার করে সে।'

লম্পট অফিস সহকারীর শাস্তি দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'ইউএনও অফিসে অভিযোগ দেয়ার পর থেকে অশান্তি আরও বেড়েছে। আপোষ মিমাংসা করার জন্য এলাকার এবং সুন্দরগঞ্জের অনেক মাতবর চাপ ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। আমরা গরীব মানুষ। ন্যায় বিচার পাবো কি না সন্দেহ হচ্ছে।'

মেয়ের বাবা মো. আয়নাল হক বলেন, 'মেয়ের ফোনে ম্যাসেজ দিয়েছে আল আমিন। বিচারের আশায় গত ৮ তারিখে অভিযোগ দিয়েছে আমার মেয়ে। এখনও বিচার পাইনি। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে হুমকি-ধামকিসহ খুবই চাপ দিচ্ছে আমাদের। ঘটনার দিন থেকে লজ্জায় মাদ্রাসা যাচ্ছে না মেয়েটি আমার। আমরাও বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না তাদের ভয়ে।'

সরেজমিনে গেলে কথা হয় স্থানীয়দের সাথে। তারা জানান, মাদ্রাসা আল আমিনদের নিয়ন্ত্রণে চলে। অন্য কারো কোনো পাত্তা নেই ওখানে। কারণ হলো ওর আপন সহোদর বড় ভাই ওখানকার সুপার। আরেক আপন সহোদর বড় ভাই ওই মাদ্রাসার সহকারী সুপার। এছাড়াও ওই মাদ্রাসার আরও একাধিক পদে আছেন তাদের আপনজন। সে কারণে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পায় না কেউ। স্থানীয়রা আরও বলেন, এ ধরনের ঘটনা আল আমিনের জন্য নতুন কিছু নয়। এর আগেও একাধিক ধর্ষণের ঘটনাও ঘটিয়েছেন আল আমিন মিয়া।

 

অভিযোগে উল্লেখ আছে, যে এসএমএসটিকে কেন্দ্র করে অভিযোগ দেয়া হয় সেটি গত ২ তারিখে আল আমিন মিয়ার মোবাইল ফোন থেকে মেয়েটির ফোনে আসে। তার-ও দীর্ঘদিন আগ থেকে বিভিন্ন ধরনের এসএমএস দিয়ে বিরক্ত করা হয় তাকে। ফোন করা হয় গভীর রাতেও। আল আমিনের কথা মতো চলতে বাধ্য করার জন্য শারীরিক নির্যাতনের কথাও উল্লেখ আছে অভিযোগে। বিষয়টি নিয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে একাধিক অভিযোগও দিয়েছিলেন মেয়েটি। কোনো সুরাহা না পেয়ে ইউএনও অফিসে অভিযোগ দেন সঠিক বিচার পাবার আশায়।

এ বিষয়ে কথা হয় অফিস সহকারী মো. আল আমিন মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, 'আমার মোবাইল ফোন থেকে মেয়েটির ফোনে এসএমএসটি গিয়েছে এটা ঠিক। তবে আমি পাঠাইনি। আমার মাদ্রাসার নাইটগার্ড আমার মোবাইল ফোন থেকে এসএমএসটি পাঠিয়েছেন বলেই ফোন কেটে দেন তিনি।'

 

মো. আল আমিন মিয়ার বড়ভাই ও দক্ষিণ শ্রীপুর কুরুয়াবাদা ইসলামিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মো. আনোয়ার হোসাইন এর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেয়া হয়। একবারও তিনি ফোন ধরেননি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, 'অভিযোগ পাওয়ার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।'

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth