তারাগঞ্জ ইকরচালি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম
প্রবীর কুমার কাঞ্চন, তারাগঞ্জ (রংপুর):
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে । প্রতিনিয়তই নিম্নমুখী হচ্ছে ইকরচালি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সেবার মান। রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন কাঙ্খিত সেবা থেকে। ফলে ক্ষোভ বাড়ছে স্থাণীয়দের মধ্যে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আরডিআরএস সংস্থার দেয়া ডেলিভারী রুমে নিরবিছিন্ন আলোর জন্য আইপিএস সিরবরাহ করলেও ভিজিটর সুরভী আক্তার তার বাসার রুমে ব্যবহার করছেন। প্রচন্ড গরমে রোগী এসে বসে থাকলেও তিনি তার রুমে গিয়ে আরাম—আয়েশ করেন। চিকিৎসকদের অবহেলায় মুখ থুবড়ে পড়েছে ইকরচালি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সেবার মান। এখানে চিকিৎসা নিতে এসে অনেকে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
এখানকার দায়িত্বে রয়েছেন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিক, ভিজিটর ছাড়াও বেসরকারি সংস্থা আরডিআরএস এর জননী প্রকল্পের মিড ওয়াইফ আবিদা সুলতানা, কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার জেসমিন আরাসহ ওই প্রকল্পের আয়া সাইফুন্নাহার ও নৈশ্য প্রহরী কামরুজ্জামান রোকন। এলাকাবাসী জানিয়েছে, তারা এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাপণ কেন্দ্র থেকে নুন্যতম সেবাটুকুও পাচ্ছেন না। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সামনে নিরাপদ প্রসব সেবা (ডেলিভারী) করানো হয় কোন সাইনবোর্ড দেখা য়ায়নি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে প্রতিমাসে যে পরিমান ঔষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে তার ১০ ভাগ ঔষুধ গরিব—দুঃখী মানুষের ভাগ্যে জোটে না বলে অভিযোগ করছেন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সাধারন রোগীরা।
এছাড়াও আরডিআরএস সংস্থা কতৃক জননী প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় গরীব—দুঃস্থ প্রসূতি সেবার জন্য স্বাস্থ্য কমীর্ রাখলেও তাদের দায়িত্ব অবহেলার কারনে প্রকল্প ভেস্তে যেতে বসেছে। গত ৭ মাসে মাত্র ২৮টি ডেলিভারী করানো হয়েছে। মাঠ পযার্য়ে প্রসূতি মায়েদের অবগত না কারার কারনে গর্ভ প্রসূতি মায়েরা রয়েছেন স্বাস্থ্যঝুকিতে। তারা বাধ্য হয়ে শহরের হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে গিয়ে মোটা অংকের টাকা দিয়ে সিজার করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমান অবকাঠামোর পাশেই পুরাতন অবকাঠামোটি থাকলেও তার সামনে ঝোপঝাড় ও ময়লা আবর্জনায় অফিসটি অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে। এতে করে মাশা—মাছিসহ জ্বালায় অফিসের ভিতরে গিয়ে সেবা প্রত্যাশীরা চিকিৎসা নিতে আসছেন না কেন্দ্রে। এছাড়াও রোগীরা ঔষুধ নিতে এসে ঔষুধ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এসময় কথা হয় ওই অফিসের ফার্মাসিস্ট নুরন্নবীর সাথে। তিনি বলেন, জ্বর, সর্দি কাশি, পাতলা পায়খানা, পেট ব্যাথা, কৃমি, চর্মরোগসহ সাধারন মানুষকে ২২ প্রকার ওষুধ দিয়ে থাকি। আজ রবিবার (২২ আগষ্ট) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ১০ জন রোগী ওষুধ নিতে এসেছিলেন। ফার্মাসিষ্ট বলেন, ঔষুধের সরবরাহ অনেক কম। অফিসের প্রধান ভিজিটর সুরভী ম্যাডাম উপরের ২য় তলায় আছেন, তার সাথে গিয়ে কথা বলেন। তার কথা অনুযায়ী ২য় তলায় গিয়ে দেখা যায়, এসি রুমে বসে আছেন ভিজিটর সুরভী আক্তার। কথা হলে ভিজিটর জানান, ২০২২ ইং সালের এপ্রিল মাসে আমি অত্র অফিসে যোগদান করার পর থেকে ৩ বছর ধরে ইকরচালি ইউনিয়নের সাধারন জনগনকে সেবা দিয়ে আসছি।
এরপর কথা হয় ওই অফিসের বর্তমান কর্মরত আরডিআরএস জননী প্রকল্পের মিড ওয়াইফ আবিদা সুলতানা, তারা জানান, চলতি বছরের মার্চ মাসে আরডিআরএস এর জননী প্রকল্প চালু হয়েছে। গর্ভ প্রসূতি মাদেরকে নিয়েই আমাদের কাজ। মার্চ থেকে আগষ্ট পর্যন্ত ৬ মাসে ইউনিয়নের ২৮ জন গর্ভ প্রসূতি মাকে সেবা প্রদান করা হয়েছে।
ইকরচালি ইউনিয়নের জদদীশপুর গ্রামের মৌসুমী আক্তার, মুক্তা আক্তার,খাদিজা বেগম, বরাতী চড়কডাঙ্গা গ্রামের কাল্টিমাই, আরজিনা বেগম,ইকরচালির রাজু মিয়া, হাজীপুর গ্রামের হাফিজার রহমান, রাশেদা বেগম, কমরপাড়া গ্রামের ভোলা মিয়া, লক্ষীপুর গ্রামের ফারজানা খাতুন, আবেদা বেগম অভিযোগ করে বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসি কি করি, ঔষুধ তো পাওয়া যায় না। ওই অফিসের সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সদস্য খায়রুল আলম বিপ্লবসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, এর আগে একটি এনজিও স্বাস্থ্য কমীর্রা প্রতিমাসে ৪০ থেকে ৫০ জন গর্ভবতী মায়ের নলমাল ডেলিভারির কাজ করেছেন। ভিজিটর সুরভী আক্তারের সাথে কথা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আরডিআরএস সংস্থার দেয়া আইপিএসটি আমার রুমে আছে। ডেলিভারী কারার পর ক্লান্ত হয়ে পড়লে বিদ্যুৎ না খাকলে একটু আরাম আয়েশ করি। আমরাও তো মানুষ দেখতেই ও পাচ্ছেন কি গরম। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার আব্দুল জলিল বলেন, সংস্থার দেয়া আইপিএসটি ডেলিভারী রুমে থাকার কথা। ঔষুধ সরবরাহ কম থাকায় রোগীরা ঔষুধ না পেয়ে ফিরছেন।