কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরে নার্সদের ভুলে নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ
কুড়িগ্রাম ও উলিপুর প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রামের উলিপুর হাসপাতালে নার্সদের ভুলে এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার জেলা সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। শুক্রবার দুপুরে সন্তান হারা মাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রিলিজ দিলে তার হৃদয় বিদারক চিৎকার ও কান্নাকাটিতে ঘটনা জানাজানি হয়।
অভিযোগ ও ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার সকালে উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের পূর্ব কালুডাঙ্গা গ্রামের রোজনুর জামানের স্ত্রী আসমানি বেগমের (১৯) প্রসব ব্যাথা শুরু হয়। পরে ওই গৃহবধূকে উলিপুর উপজেলা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান স্বজনরা। সেখানকার কর্তব্যরত নার্সগণ রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নরমাল প্রসব করানোর কথা বলেন। ভর্তির পর থেকে নার্সদের দফায় দফায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখে বিষয়টি সুবিধাজনক মনে হয়নি গৃহবধূর স্বজনদের।
স্বজনরা উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে অন্য হাসপাতালে নিতে চাইলে কর্তব্যরত নার্সগণ উলিপুর হাসপাতালে রাখার জন্য জোর করেন। বুধবার বিকেলে নরমাল প্রসবের প্রস্তুতি নেন কয়েকজন নার্স। এ সময় জোরপূর্বক টানা হেচরা করে বাচ্চা প্রসব করান তারা। প্রসবের পর নার্সদের মধ্যে কানাকানি দেখে সন্দেহ হলে তাদেরকে বাচ্চা দেখানোর জন্য চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু নার্সরা জানান বাচ্চা অসুস্থ দ্রুত কুড়িগ্রামে নিয়ে যেতে হবে। পরিবারের লোকজন নবজাতককে দ্রুত কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান প্রসবের সময় নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে গৃহবধূর নানী হামিদা বেগম বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ আসমানি বেগমের দাবি, সকাল সাড়ে সাতটার দিকে উলিপুর হাসপাতালে যাই। আধা ঘণ্টা পর পর সেখানকার নার্সরা এসে পরীক্ষা করান। কিন্তু এক পর্যায়ে আমি অন্য হাসপাতালে যেতে চাইলে তারা আমাকে রাগারাগি করেন। বাচ্চা ছোট আছে জানিয়ে নরমাল প্রসব হবে বলে আমাকে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু বিকেলে আমি মৃত সন্তান প্রসব করেছি বলে নার্সরা আমাকে জানান। সন্তান মারা যাওয়ার পেছনে নার্সদের অবহেলাকে দায়ি করেন এ গৃহবধূ। একই সঙ্গে তিনি দায়ী নার্স এবং সংশ্লিষ্টদের বিচারের দাবি জানান।
উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, বুধবার বিকেল চারটার দিকে ওই গৃহবধূ সন্তান প্রসব করেন। নবজাতকের শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল। বাচ্চাটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে পাঠানো হলে, সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত্যু ঘোষণা করেন। ওই গৃহবধূ এখন সুস্থ আছেন, শুক্রবার দুপুরে তাকে রিলিজ দেওয়া হয়। আর অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মন্জুর-এ-মুর্শেদ বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি এবং অভিযোগও পেয়েছি। এ বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হবে। তদন্তে দায়িত্বরত কারো গাফিলতি থাকলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।