পীরগাছায় প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
পীরগাছা (রংপুর) প্রতিনিধি:
রীনা পারভীন ২০০০ সালে সমাজ বিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন উপজেলার নটাবাড়ী দ্বি—মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে। দীর্ঘ ২৪ বছর পর সম্প্রতি জানতে পারেন তিনি ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক নন। প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবির বেতন—ভাতা করার নামে এক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে এ কথা জানান। এতে করে মানষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন রীনা পারভীন। তার মতো অন্য শিক্ষক—শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজনও প্রধান শিক্ষকের হয়রানির শিকার হয়েছেন। ক্ষমতারধর এই প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবিরের নানা অনিয়ম—দূর্ণীতির বিরুদ্ধে গতকাল রোববার সংবাদ সম্মেলন করেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান শিক্ষকের অপসারণ ও শাস্তির দাবি জানিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে সহকারি শিক্ষক মশিয়ার রহমান। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, সহকারি শিক্ষক মাহবুবুর রহমান, রীনা বেগম, আনারুল হক মন্ডল, শিক্ষার্থী মাহি আক্তার, সাথি আক্তার, এনামুল ইসলাম, সাবেক নৈশ্য প্রহরী নুরুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবির যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম করে আসছেন। তিনি নিজের আত্মীয়—স্বজনদের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও স্কুলের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়ে পারিবারিক স্কুলে পরিণত করেছেন। তিনি স্কুলের অন্য শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখান এবং নানা অযুহাতে তাদের নিকট টাকা গ্রহন করেন। গত ৬ মাস থেকে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষক—শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। কিন্ত অজ্ঞাত কারণে কোন ব্যবস্থা নেওয়া না হওয়ায় গতকাল রোববার সকালে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
তার বিরুদ্ধে কম্পিউটার ক্রয়ের নামে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত, ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা আত্মসাত, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিভাককে হুমকি, একজন মেয়ে শিক্ষার্থীর সাথে অশ্লীল আচরণ, মানুষ কেটে জোরা লাগানোর হুমকি দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরা হয়।
বিদ্যালয় হলরুমে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক—শিক্ষার্থী, অভিভাবক, এলাকাবাসীসহ দুই শতাধিক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
এসময় শিক্ষক রীনা পারভীন বলেন, আমি ২৪ বছর চাকুরী করার পর প্রধান শিক্ষক কি করে বলেন, আমি কোন শিক্ষকই নই। তাহলে তিনি আমার বেতন—ভাতা করার জন্য এক লক্ষ টাকা নিলেন কেন।
অপর শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষক আমাদের ভয়ভীতি দেখান এবং বলেন, ‘আমি প্রধান শিক্ষক হয়েছি কি এমনি, মানুষ কেটে জোড়া দিতে পারি’! তিনি বিদ্যালয় ফান্ডের ৫ লক্ষ টাকা তুলে আত্মসাত করেন।
শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, নন এমপিও ৪ জন শিক্ষকের জন্য ব্যাংকে রাখা টাকা তিনি তুলে আত্মসাত করেছেন। আমাদের তিন মাসের বেতন দিয়ে ২৭ মাসের স্বাক্ষর নিয়েছেন। পরে দেখি টাকা নাই।
কৃষি শিক্ষক সুব্রত রায় বলেন, তিনি শারিরিক ভাবে অসুস্থ্য থাকার কারণে প্রধান শিক্ষকের নিকট দুই মাসের ছুটি নিয়ে ভারতে গেলেও তার বিপরীতে অতিরিক্তি শিক্ষক দিতে হয়েছে। এজন্য প্রধান শিক্ষককে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়েছে। এছাড়াও তিনি উচ্চ মাধ্যমিকের এমপিও না হলেও অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে মোটা অংকের টাকা হানিয়ে নেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। একটি প্রভাবশালী পক্ষ ইন্ধন দিয়ে শিক্ষক ও ছাত্রদের দিয়ে এসব করাচ্ছে। সব অভিযোগ মিথ্যা। আমাকে কারণ দর্শনো নোর্টিশ দেয়া হয়েছে। আমি এসবের জবাব দেব।
জানতে চাইলে বর্তমান পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমন বলেন, তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে। সন্তোষ জনক জবাব না হলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।