২২ আশ্বিন, ১৪৩১ - ০৭ অক্টোবর, ২০২৪ - 07 October, 2024

সাবেক মেয়র মোস্তফার দুর্নীতির তদন্ত শুরু

আমাদের প্রতিদিন
5 days ago
130


রংপুর সিটি করপোরেশন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা ও দুইজন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক(দুর্নীতি দমন কমিশন) সিদ্ধান্ত। তাদের বিরুদ্ধে ৩৩টি ওয়ার্ডে সড়ক বাতি স্থাপনে ৪৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকার বৈদ্যুতিক মালামাল ক্রয়ে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে মঙ্গলবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এসব বিষয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয় নিশ্চিত করেছেন, উপ—পরিচালক মোঃ আকতারুল ইসলাম।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির কো—চেয়ারম্যান রসিকের সাবেক মেয়র মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ এমদাদ ও ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আজম আলীর বিরুদ্ধে  দুদকের গোয়েন্দা বিভাগ কিছুদিন ধরে অনুসন্ধান শুরু করে। এর পরই তারা প্রাথমিক অনুসন্ধানে তাদেও বিরুদ্ধে দুর্নীতির সত্যতা পাওয়ার পর প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে রংপুর সিটি কেপোর্রেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডে সড়ক বাতি স্থাপনে ৪৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকার বৈদ্যুতিক মালামাল ক্রয়ে দুর্নীতিসহ রংপুর শহরে দোকান থেকে কর আদায়, লাইসেন্স প্রদান, ডিজিটাল সেবা প্রদানেও ব্যাপক অনিয়মসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ সম্পর্কে সত্যতা পেয়েছে দুদক।

দুদকের উপ—পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম এর কাছে এ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, সাবেক মেয়র ও দুই প্রকৌশলীসহ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এর মালিক খায়রুল কবীর রানা পরস্পর যোগসাজশে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। শুধু তাই নয় অভিযুক্তরা রংপুর সিটি কপোর্রেশেনের বিভিন্ন উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন খাতে বরাদ্দের টাকা অনেক ক্ষেত্রে দরপত্র আহ্বন না কেও প্রকল্প দেখিয়ে নানাভাবে আত্মসাত করেছেন। এ ক্ষেত্রে পিপিআর এর নিয়ম অনুসরন করা হয়নি। নিজেদেও অনুগত ও আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে এ কাজ সম্পাদন করেছেন। 

দুদকের অনুসন্ধানের সূত্র ধরে জানা গেছে ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডে সড়ক বাতি স্থাপনে ৪৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকার বৈদ্যুতিক মালামাল ক্রয়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়।  ওই দরপত্রে এডেক্স কর্পোরেশন লিমিটেড আই খায়রুল কবির রানার দরপত্রে দাখিলকৃত কাগজপত্রে যথেষ্ট গড়মিল পাওয়া যায়। এর পরেও নিজে অনৈতিক লাভবানের উদ্দেশ্যে তাকে দরপত্রের কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। দরপত্রে বর্ননামতে  লাইটের প্রকৃত উৎপানকারী দেশে ইউরোপ, জার্মান ও হল্যান্ডের শর্ত থাকলেও এডেক্স কর্পোরেশন লিমিটেড চায়না ব্যান্ডের লাইট লেডভেন্স প্রদান করেন। শুধু তাই নয় অনুসন্ধানে জানা গেছে, সড়ক বাতি স্থাপনে যে সমস্ত বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে সে সব কাজ মেয়রসহ সিটি কপোর্রেশেনের প্রকৌশলীদ্বয় যোগশাজশে অন্যঠিকাদারী নামের প্রতিষ্ঠানে দরপত্রে কাযার্দেশ দিলেও মূলত সে সব কাজ করা হয় মেয়রের ছোট  ভাইকে দিয়ে। এ ছাড়া এই সব খুঁটি যে মানের প্রস্তুত করার কথা ছিল তা করা হয়নি। নিম্মানের কাজ করা হয়েছে। যে পরিমান পুরত্ব থাকার কথা ওই বৈদুূ্যতিক খুঁটির তা নেই।

দুদক তাদের অনুসন্ধানে আরও জানতে পেরেছে যে, দীর্ঘদিন ধরে রংপুর সিটি কপোর্রেশনের বিভিন্ন ঠিকাদারী কাজ করেছেন খায়রুল কবীর রানা।  শুধু তাই নয় সদ্য বিদায়ী মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সময়কালেও প্রায় ৭ বছর তিনিই সিটি কপোর্রেশনের কাজ করেছেন প্রায় সব কাজ করেছেন। এসব কাজের মান নিম্নমানের হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ের আর্থিক বছরে সিটি কপোর্রশনের উন্নয়নের জন্য সরকারী কোষাগারের টাকার কাজ না করে নামমাত্র কাজ দেখিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ অপচয় হয়েছে এবং দুর্নীতির মাধ্যমে তা ভাগবোটোয়ারা করেছেন অভিযুক্তরা।  

অন্যদিকে  মো. মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা ও তার স্ত্রীর ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে। তারা পরস্পর যোগসাজশে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ক্রয় প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতির সত্যতা গোপন সোর্স মূলে জানা যায়। তাদের অবৈধভাবে অর্জিত জ্ঞাত—আয় বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে বলে গোয়েন্দা তথ্যানুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে সঠিক মনে হওয়ায় প্রকাশ্য অনুসন্ধানের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। জানা গেছে, মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ২০২২ সালেজাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয় দফায় রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। এর আগেই তিনি একই রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের অন্য সব সিটি করপোরেশনের মেয়রদের সঙ্গে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকেও অপসারণ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়। এর পরে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে রংপুর সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। এর পরই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিষয়টি দুদক প্রকাশ্যে নিয়ে আসে। 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth