কাউনিয়ায় কাজেই আসছে না সেতু’ টাকা দিয়ে নদী পার হচ্ছে দশ গ্রামের মানুষরা
কাউনিয়া (রংপুর) সংবাদদাতা:
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় তিস্তা শাখা মানাস নদীর ওপর পাকা সেতু নির্মাণ হয় দশ বছর আগে। বন্যায় সেতুটি হেলে পড়ে এবং দুইপাড়ের এ্যাপোচ সড়ক ভেঙ্গে যায়। বহুবছর ধরে সংস্কারের উদ্যোগ না নেওয়ায় কাজে আসছে না ক্ষতিগ্রস্থ সেতুটি। দুই পাড়ের লোকজন টাকা দিয়ে নৌকায় পারাপার হতে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ২০১৪ সালে সরকার ও ইউএসএআইডি সংস্থার অর্থায়নে তিস্তার শাখা মানস নদীর ৩৭ লাখ ২৪ হাজার ১৮৩ টাকা ব্যয়ে ১৭ মিটার দৈর্ঘ্য একটি বক্স সেতু নির্মাণ করে। সেতু নির্মাণ হলে স্থানীয়রা আনন্দিত হয়। প্রায় সাত বছর আগে বন্যায় সেতুটি হেলে পড়ে এবং দুইপাড়ের এ্যাপোচ সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় দশ গ্রামের হাজারো মানুষ দুর্ভোগে পড়ে। স্থানীয় লোকজন ক্ষতিগ্রস্থ সেতুর দুইপাড়ে অস্থায়ীভাবে সাঁকো নির্মাণ করে। চলতি মাসে উজান থেকে নেমে আসা আকস্মিক বন্যায় পানির সে্্রাতে সেতুটির সংযোগ সড়কটি ভেঙ্গে যায়।
স্থানীয়রা জানান, সেতুটি নির্মাণের প্রায় ৫ বছর পরে বন্যার পানির ে¯্রাতে দুইপাড়ের মাটি ধসে গিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের। কিন্তু গত পাঁচ বছর সংযোগ সড়ক নির্মাণে কোনো উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন কিংবা জনপ্রতিনিধিরা। এমন অবস্থায় সেতু পার হতে বাঁশ ও কাঠের সাঁকোটিই ছিল পারাপারের অন্যতম মাধ্যম। সেটিও এবার ধসে গেছে আকস্মিক বন্যার পানির ে¯্রাতে।
এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন স্থানীয় গোপীডাঙ্গা, আরাজী খোদ্দর্ ভূতছাড়া, মৌলভী বাজারসহ অন্তত ১০ গ্রামের লোকজন বিভিন্নস্থানে যাতায়াত করেন। এছাড়া লালমনিরহাটের রাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতের ভরসা এই সেতুটি। এর দুই প্রান্তের মাটি ধসে পড়ায় কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সহ দশ গ্রামের হারাজও মানুষকে প্রতিদিন টাকা দিয়ে নৌকায় ঝঁুকি নিয়েই পারাপার করতে হচ্ছে।
সোমবার মৌলভি বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, হেলে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্থ সেতুর পশ্চিম পাড়ে সড়ক ভেঙ্গে গেছে। দুইপাড়ের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সহ এলাকার মানুষেরা নৌকায় পারাপার হচ্ছে।
স্থানীয়দের দাবি, সেতুটির দুইপাশে ধসে যাওয়া মাটির সংযোগ সড়কটি দ্রুত সংস্কার করে মূল সেতুর সাথে চলাচল উপযোগী করা হোক। সরকারি বরাদ্দ মিললে নতুন করে সেখানে সেতু নির্মাণেরও দাবি করছেন গ্রামবাসী।
গোপীডাঙ্গা গ্রামের সামছুল ইসলাম (৬৫) সহ অনেকে বলেন, তিস্তার মানস নদী পার হওয়ার জন্য দশ গ্রামের মানুষের চাওয়া ছিল একটি পাকা সেুত। কিন্তু যে সেুতটি হয়েছে সেটিও ক্ষতিগ্রস্থ, বহু বছর ধরে নেই সংযোগ সড়ক। ক্ষতিগ্রস্থ সেতু ও সড়ক সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
আরাজী খোদ্দর্ ভূতছাড়া গ্রামের কৃষক আমিন আলী বলেন, হেলে পড়া সেতুর দুইপাড়ে সংযোগ সড়ক না থাকায় তাদেরকে টাকা দিয়ে নৌকায় নদী পার হয়ে এলাকার উৎপাদিত কৃষক পন্য হাট—বাজারে নিয়ে যেতে হচ্ছে।
বালাপাড়া ইউনিয়ের তিন নাম্বার ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) হাফিজুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন আগে তিস্তার ে¯্রাতে সেতুর দুইপাড়ের সংযোগ সড়কের মাটি সরে গিয়ে চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এলাকার মানুষেরা নিজেদের উদ্যোগে সেতুতে চলাচল করতে দুইপাড়ে বাঁশ ও কাঠের সাঁকো তৈরি করেছিল, সেটিও আবার আকস্মিক বন্যায় ভেঙে গেছে। দুইপাড়ের মানুষেরা প্রতিজন ১০ টাকা করে দিয়ে নৌকায় নদী পারাপার হচ্ছে। এতে করে দশগ্রামের কয়েক হাজার মানুষ নদী পারাপার হতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনছাড় আলী বলেন, দুই পাড়ের লোকজনের ভোগান্তি লাগবে জরুরি ভিত্তিতে সেতুর ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক সংস্কার করা প্রয়োজন। কিন্তু সেটি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে সম্ভব নয়। উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন উদ্যোগ নিলে দুইপাড়ের মানুষে কষ্ট লাঘব হবে।
সেতুটির সংযোগ সড়কের সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জেমি বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ সেতুটির এলাকা সরেজমিনে সার্ভে করা হয়েছে। আকস্মিক বন্যার পানির তোড়জোড়ে সেতুর সংযোগ সড়ক ধসে গেছে। চলতি সপ্তাহে ঢাকা থেকে একটি দল আসবে এবং তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবে। অর্থ বারদ্দ সাপেক্ষে নতুন করে সেতু নির্মাণসহ এ্যাপোচ সড়কের কাজ করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহিদুল হক জানান, খুব দ্রুত সময়ে ক্ষতিগ্রস্থ স্থানে কাঠের সাঁকো নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহে সাঁকো নির্মাণ করা শুরু করা হবে।