রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরি কাজে ব্যস্থ গাছিরা
আজাদুল ইসলাম আজাদ, পীরগঞ্জ রংপুর:
সকালের এবং রাতের কুয়াশা বলে দিচ্ছেন আগাম শীতের বার্তা। খেজুরের গাছও বলে দিচ্ছে কুয়াশা সামনে অপেক্ষা করছে। শীতের আমেজে খেজুরের রস এবং খেজুরের গুড় দিয়ে পিঠা পায়েস খাওয়ার মজাই আলাদা । আর এই খেজুর গুড়ের পিঠা পায়েস খেতে কার না ভালো লাগে। কার্তীক মাসের শুরুতেই রস সংগ্রহ কাজে ব্যস্থ হয়ে পড়েছে গাছিরা। কার আগে কে কত রস থেকে গুড় তৈরি করতে পারে বিষয়টি নিয়ে প্রতিযোগিতা চলছে এলাকায়। গুড় ব্যবসায়ীরাও আগাম তাগিদ দিচ্ছে গুড় তৈরির করতে গাছিদের কে।
রংপুরের পীরগঞ্জের গ্রাম পল্লীতে প্রতিবছরের ন্যয় এবারও কয়েকটি স্থানে খেজুরের গুড় তৈরির কারখানা চালুর কাজে কারিগররা দিনরাত্রি সমান করে কাজে লেগে পরেছেন।
গত বুধবার সকালে উপজেলার গ্রাম পল্লী ঘুরে কথা হয়, রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার মৃত আক্কিল হোসেনের ছেলে গাছি তাজেল মিয়ার সাথে তিনি বলেন, শুধু পীরগঞ্জের মাটিতেই ২৮ বছর খেজুরের রস থেকে গুড় উৎপাদন কাজ করে আসছি। প্রতিবছর অন্যের কারিগর হিসাবে কাজ করছি। এবার আমার ছেলে লালন মিয়া কে সাথে নিয়ে কাশিমপুর গ্রামে ১ শত খেজুর গাছ লিজ নিয়ে গাছ পরিস্কার করছি। আশা করি কুয়াশার আগাম বার্তা জানান দিচ্ছে এবছর গাছ ভালো রস দিবে। তাই গাছের ডাল-পালা পরিস্কার এবং চেষে প্রস্তুত করছি। ক দিন আগে আমরা এসেছি এলাকায়। এখানে এসে আগে রাত্রি যাপনের জন্য ঘর এবং গুড় তৈরির চুল্লী তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এখন জোরেসোরে রস সংগ্রহের জন্য আমরা গাছ চেষে প্রস্তুত করছি।
স্থানীয়রা বলছেন, রাজশাহী জেলা থেকে ৩ টি দল প্রতিবছর এ এলাকায় খেজুরের রস চুল্লীতে আগুন দিয়ে গুড় তৈরি করে থাকে। কাশিমপুর, ভাগজোয়ার এবং জাহাঙ্গীরাবাদ এলাকায় এরা গুড় তৈরির কারখানা প্রতিবছর চালু করে। এলাকার গুড়ের চাহিদা মিটিয়ে কয়েক জেলায় এখানকার গুড় আমদানি হয়ে থাকে। প্রায় অর্থশতাধিক লোকজন গুড় তৈরি কাজে লেগে পড়ে এখানে।
এলাকার অধিকাংশ খেজুরের গাছ রাস্তা এবং পুকুর পারে রয়েছে। এক পায়ে দাড়িয়েছে থাকা এই খেজুরের গাছ থেকে বাড়তি ভাবে আয় করে থাকেন গ্রামের লোকজন, যে কারনে এলাকার রাস্তাঘাটেসহ পরিত্যক্ত স্থানেও নতুন করে খেজুরের গাছের বীজ রোপণ করে যাচ্ছে।
খেজুর গাছ মালিক কাশিমপুর গ্রামের মতিন হাজির পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গাছ প্রতি ২ কেজি হারে গুড় পাবে তারা। প্রতিবছর একইভাবে তারা গাছগুলোর কন্টাক্ট দিয়ে থাকেন বলে জানাযায়।
ভাগজোয়ার গ্রামের ফজলু মিয়স বলেন, আমাদের এখানে প্রায় মানুষের বাড়িতে, পুকুর পারে, আবাদি জমির আইলে এবং রাস্তার দুই পাশে এসব খেজুর গাছ রোপণ করেছে। এই গাছ আসোলে কারোই ক্ষতি করে না। সবমিলিয়ে এলাকার ঘরে ঘরে খেজুরের গুড় পৌঁছে যায়। গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে গুড় মজুদ করে রাখেন এবং সেই গুড় বছর ধরে খায়। তবে এলাকায় খেজুরের রস বিক্রি হয় না কারন এখানে স্থানীয় লোকজনসহ বাহিরের লোকজন গুড় উৎপাদন কাজে ব্যস্থ থাকেন। এলাকার গুর ভেজাল মুক্ত।
একই উপজেলার আরেক গাছি মুক্তার হোসেন আমাদের প্রতিবেদকে জানান, রাতের এবং সকালের কুয়াশা বলে দিচ্ছেন শীতের আভাস। কাশিমপুর, ভাগজোয়ার এবং বৌউবাজার এলাকায় ৩ শত গাছ আমার লিজ নেয়া আছে কথা বলার সময় নেই। ১২ থেকে ১৫ জন শ্রমিক আমার কারখানায় রস সংগ্রহ এবং গুড় তৈরি কাজে নিয়োজিত থাকে। আরও আগে থেকে আমাদের গাছ পরিস্কার করা লাগতো শ্রমিকদের অলসতার কারনে কিছুটা সময় দেরি হয়ে গেলো। গাছ চাষা, চুল্লী এবং গুড় তৈরি সরঞ্জাম প্রস্তুত করতেও সময় লাগে। রস সংগ্রহ করতে গিয়ে ফিনিশিং চাষ দিতে গাছে ২ থেকে ৩ বার উঠতে হয়। তিনি আসা করছেন এব বছর গাছগুলো থেকে ভালো রস নামবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকার জানান, পীরগঞ্জ উপজেলার সবখানেই খেজুর গাছ রয়েছে বিশেষ করে মিঠিপুর, শানেরহাট এবং পাঁচগাছি ইউনিয়নে বেশিরভাগ গাছ রয়েছে। প্রতিবছর রাজশাহী এলাকা থেকে গাছিরা এখানে এসে গুড় তৈরি কাজে নিয়োজিত থাকে। তাদের দেখে এলাকার কিছু লোকজন রস সংগ্রহ এবং গুড় তৈরি কাজে জড়িয়ে পরে। উপজেলায় খেজুর গাছের বাগান না থাকলেও প্রায় এলাকায় এবং বসতবাড়িতেসহ কৃষি জমির আইলেও গাছ রোপণ করেছে। এ অঞ্চলের কৃষক খেজুর গাছ থেকে বাড়তি আয় করে থাকেন। গাছিদের খেজুর গাছ কাটার কাজটি শিল্প আর দক্ষতায় ভরা। ডাল কেটে গাছের বুক বের করার মধ্যে রয়েছে এদের অনেক বুদ্ধি। রস সংগ্রহ কাজে প্রকৃত গাছিদের কদর রয়েছে।