প্রতিহতের ঘোষণা থেকে সরে এলো জাতীয় পার্টি
কাল রংপুরে আসছেন সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে রংপুরে আসতে না দেয়ার হুমকির অবস্থান থেকে সরে এলো জাতীয় পার্টি।কাল শনিবার ওই দুই নেতা রংপুরে আসছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সমাবেশে। এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় দলের এক কর্মীসভা থেকে সংবাদ মাধ্যমকে তাই জানালেন জাতীয় পার্টির কো—চেয়ারম্যান ও রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
এরপর রাতে নগরীতে দলের পক্ষে জাতীয় পার্টির পক্ষে ওই দুই সমন্বয়কের কর্মসূচির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেন নেতাকর্মীরা।
উল্লেখ্য গত ১৪ অক্টোবর সোমবার রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাতীয় পার্টির কো—চেয়ারম্যান ও মহানগর সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা দলের এক কর্মী সমাবেশ থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্¥য়ককে রংপুরে আসতে না দেয়ার হুমকী দেন। তিনি বলেন, সারজিস আলম আর হাসনাত আব্দুল্লাহকে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে যে ঘোষণা দিয়েছেন এরপর আর ওই দুই সমন্বয়ককে রংপুরে আসতে দেয়া হবে না বলে হুমকি দেন।
এরপরও তিনি আরও বলেন, তার পরেও যদিওই দুই সমন্বয়ক ফেস বুকে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে কোন ম্যাসেজ দেন তাহলে জাতীয় পার্টির সকল নেতা কর্মী সমর্থক যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে রংপুরে পার্টি আফিসে চলে আসবেন। তার এই ঘোষণা দেয়ার সময় রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডস্থ জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি অফিসে দলের কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সংসদে সাবেক বিরোধীদরীয় নেতা দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
তিনি বলেন আমরা তাদের দেখিয়ে দিতে চাই রংপুরে জাতীয় পার্টির শক্তি কতটুকু। আমাদের আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য পুলিশ র্যাব বিজিবি ঠেকাতে আসে তাহলে তাদের সুপারসিট করে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে না পারি তাহলে নাকে খত দিয়ে জাতীয় পার্টি থেকে চলে যাবো।
তিনি জাতীয় পার্টির নেতা কর্মীদের উদ্দেশে বলেন আপনারা কান খুলে শুনেন জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি থেকে যে ঘোষণা আসবে সারজিস আলম আর হাসনাত আব্দুল্লাহ কোন প্রোগ্রাম রংপুরের মাটিতে হতে দেয়া হবে না। একই সাথে প্রশাসন ও আর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর যারা আছেন তারাও কান খুলে শুনে রাখেন এর পরে রংপুরে কোন রাজনৈতিক সংলাপে যদি জাতীয় পার্টিকে আমন্ত্রণ করা না হলে সে সংলাপ আমরা করতে দেবো না। তিনি বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারের উদ্দেশে বলেন সারজিদ আর হাসনাতের মতো দুজন টোকাইকে প্রশ্রয় দেন তাহলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন।
তিনি বলেন আমরা জাতীয় পার্টি থেকে সংস্কার করার জন্য ড. ইউনুছ মহোদয়কে আরো সময় দিতে চাই। আমরা সব সময় বলেছি সংস্কার করতে যত সময় লাগে অংশ গ্রহণ মুলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সে সময় আমরা সব সময় দিতে চাই।
সাবেক মেয়র বলেন, আমরা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে রংপুরে সর্বতোভাবে অংশ গ্রহণ করেছি। আমাদের সরলতাকে দুর্বল ভাবার কোন কারণ নেই। সভায় আগামী দিনের সকল আন্দোলন সংগ্রামে সকলকে সক্রিয় থাকার আহবান জানান তিনি।
রংপুরে শনিবার ২৬ অক্টোবর পুলিশ প্রধান আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম এনডিসি রংপুরে আসছেন। তিনি এদিন বিভিন্ন কর্মীসূচিতে অংশ গ্রহণ করবেন। একই দিনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাকে রংপুরে আসছেন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষে তারা রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সমাবেশে অংশ গ্রহণ করবেন। এই খবর পাওয়ার পর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মাঝে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতিরমুখে দলের পক্ষ থেকে রংপুর সেন্ট্রাল রোডস্থ কার্যালয়ে জরুরি কর্মী সভা ডাকা হয়। সেখানে সাংবাদিকদের সাবেক মেয়র ও জাতীয় পার্টির কো—চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার মোস্তফা বলেন দুই সমন্বয়কের সাথে আমার কোন ব্যক্তিগত রেশারেশি নেই। দলের বিপক্ষে তারা অবস্থান নেয়ায় আমাদের দলের নেতাকর্মীদের সেন্টিমেন্টের কারণে ওই ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন দেখছি তারা একা রংপুরে আইজিপি’র অনুষ্ঠানসূচির আড়ালে তারা রংপুরে দলের কাজের জন্য আসছেন। কিন্তু আইজিপির অনুষ্ঠান ঘিরে নগরীতে কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্ঠি না হয় বা কোন বড় রকমের সংঘাত না হয় তাই আমরা সতর্কভাবে তাদের এই মুহূর্তে প্রতিহত করছি না। দলের চেয়ারম্যান এমননি নির্দেশ দিয়েছেন। যেহেতু রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে নানান সংকট তৈরি হয়েছে সেখানে কেউ আমাদের কোন কর্মসূচির আড়ালে অন্য কোন ফায়দা হাসিল করুক তা সে সুযোগ দিতে চাই না। কর্মী সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর সাধারন সম্পাদক, আব্দুর রাজ্জাক কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রমুখ।
তারা পুলিশ প্রটোকল পাওয়ার যোগ্য নয় তবুও আইজিপির অনুষ্ঠানের আড়ালে পুলিশ পাহারায় রংপুরে আসছেন এমনটি শুনেছি। তাই আমরা শুধু শুক্রবার রাতে ও শনিবার সকালে প্রতিবাদ মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছি তা বাস্তবায়ন করব। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে অনড় আছি। বৃহত্তর রংপুরের মাটিতে জাতীয় পার্টির সে সক্ষমতা আছে। প্রয়োজনে সে সক্ষমতা দেখানো হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।