২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ - ১৬ মে, ২০২৫ - 16 May, 2025

তিস্তা নদীর দূর্গম চরে আশ্রয়ন প্রকল্প, ভোগান্তিতে বাসিন্দারা

আমাদের প্রতিদিন
6 months ago
304


ডিমলা(নীলফামারী) প্রতিনিধি-

তিস্তা নদীর দুর্গম চরে নির্মাণ করা হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫০টি ঘর। বর্ষা মৌসুমে এখানে পানি উঠে তখন বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়ে বাসিন্দাদের। বাধ্য হয়ে এসব ঘরের অনেক বাসিন্দারা অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫০টি ঘর নির্মান করা হয়েছে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের কেল্লাপাড়া গ্রামে। উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নটি তিস্তা নদীবেষ্টিত আর কেল্লাপাড়া গ্রামটি তিস্তার দুর্গম চরে অবস্থিত। এলাকাটিতে জনবসতি কম সেই সাথে সেখানে আবাদি অনাবাদি ফসলি জমি বেশি। অভিযোগ উঠেছে, অপরিকল্পিতভাবে নিচু জায়গায় আশ্রয়ন প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়েছে। যে স্থানে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি উঠে। প্রকল্পের দেড় শতাধিক মানুষ বছরে থেকে মাস পানি বন্দি থাকে। ভুক্তভোগীরা জানান, যে স্থানে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে কয়েকবছর আগে তিস্তার নদী ছিল। সেখানে চর জেগে ওঠায় চরে অপরিকল্পিতভাবে আশ্রয়ণের ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়। পিআইও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চার বছর আগে উপজেলা প্রশাসনের তত্বাবাবধানে কেল্লাপাড়া গ্রামে তিস্তা নদীর জেগে ওঠা চরে আশ্রয়ন প্রকল্পের ৫০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। জনপ্রতি শতক জমিসহ একটি ঘর নির্মাণে বরাদ্দ ছিল কোটি ৯১ হাজার টাকা। সরজমিনে দেখা গেছে, প্রকল্পের ঘরগুলো তিস্তার দুর্গম চরে নির্মাণ করা হয়েছে। এলাকাটির চারদিকে তিস্তা নদী বেষ্ঠিত। বর্ষায় বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকে। নদী ভাঙনেও রয়েছে আতঙ্কও ভুক্তভোগী শফিকুল ইসলাম বলেন, সামান্য বন্যার পানিতে তিস্তা নদীর পানি ঘরে ঢুকে পড়ে। গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হয়। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে কেউ এসব ঘরে থাকতে চাইবে ? প্রশ্ন করেন তিনি। ভুক্তভোগী বানেছা বেগম বলেন, সরকার হামাক এমন জায়গাত ঘর দিছে, বছরের পাঁচ মাস পানিবন্দী থাকির নাগে ছাওয়া গিলা স্কুল যাবার পায়না। বড় বান আসিলে হামাক ঘরোত পানিতে মইরবার নাগিবে। এলাকার ভুক্তভোগী লোকজনের অভিযোগ,জেনেশুনে নদীর চরে এসব ঘর নির্মাণ করা ঠিক হয়নি। উঁচু জায়গায় ঘরগুলো করে দিলে বাসিন্দাদের এত দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য সোহেল হাসান বলেন , এই আশ্রয়ণ প্রকল্প ভূমিহীনদের জন্য বড় আশীর্বাদ হতে পারত। কিন্তু নিচু জায়গায় অপরিকল্পিত ভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। দিন শেষে তাদের উদ্বাস্তু হওয়ারই দশা হয়েছে। সেই সঙ্গে সরকারের কোটি কোটি টাকাও অপচয় হলো। ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরী বলেন, আমি চেয়ারম্যান হওয়ার আগেই সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়। তবে বাঁধের বাইরে  নদীর চরে ওই ঘরগুলো নির্মাণ করা ঠিক হয়নি। বাঁধের ভিতরে ঘর নির্মাণ করলে সমস্যা হতো না। ঘর নির্মাণ কমিটির সদস্যসচিব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মেজবাহুর রহমান বলেন, প্রকল্পের জায়গা নির্ধারণের দায়িত্ব ভুমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তারা শুধু প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল মিয়া বলেন, আমি উপজেলায় যোগদানের অনেক আগে আবাসন প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে প্রকল্পের বাসিন্দাদের সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার হবে জানান তিনি। বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক নায়িরুজ্জামান বলেন, কেন, কি কারনে নদীর চরে প্রকল্পের জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছিল বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে। সেই সাথে প্রকল্পের বাসিন্দাদের সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth