রত্নাই নদীর ওপর সেতু নির্মাণকাজে ধীরগতি সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহনে জটিলতা
২০৭’শ কোটি টাকা ব্যয়ে ধরলা সেতু র্নিমিত হলেও চলছে না ভারি যানবাহন
আব্দুল আজিজ মজনু,ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম):
২০৭’শ কোটি ব্যয়ে র্নিমিত ফুলবাড়ী ধরলা সেতুটির উদ্বোধনের সাড়ে ৬ বছর পেড়িয়ে গেলেও কাঙি্ক্ষত সুফল পাচ্ছেন না কুড়িগ্রামের উত্তর ধরলার মানুষ। ফলে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে স্থানীয় জনগণ ও ব্যবসায়ীদের মাঝে। অভিযোগ রয়েছে ফুলবাড়ী লালমনিরহাট সড়কে কুলাঘাট এলাকায় রত্নাই নদীর ওপর সেতু নির্মাণ কাজে ধীরগতি। অন্যদিকে সেতুটি সংযোগ সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহন নিয়েও রয়েছে নানান জটিলতা। যেকারনেই ভগ্ন বেইলী সেতুর কারণে ফুলবাড়ীসহ লালমনিরহাট ও বৃহত্তর রংপুরের ব্যবসায়ীরা পাচ্ছে না ২০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ধরলা সেতুর সুফল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দেড় কিলোমিটার দুরে লালমনিরহাটের রত্নাই উপর স্টীলের সেতুটি দিয়ে ভারি যানবাহন চলাচল না করায় পাশেই ওই নদীর উপর লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগ ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩০ মিটার দৈর্ঘ্যে ও ১০ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থের সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করে ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর। ২০২৫ সালের ১৮ জানুয়ারী সেতুটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার চুক্তি রয়েছে। কিন্তু নির্মাণ কাজ এতই ধীরগতিতে চলছে যে ২০২৫ সালের জানুয়ারীতে সেতুটি উম্মুক্ত করে দেওয়ার কথা থাকলেও তা কোন ক্রমে সম্ভব হবে না। এরই মধ্যে সেতুটির ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়কের কোন কাজেই শুরু হয়নি। এরই মধ্যে জানাগেছে সংযোগ সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহন নিয়েও রয়েছে নানান জটিলতা। সেতুটির দু’পার্শ্বে সংযোগ সড়ক নির্মাণে জমি অধিগ্রহনের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সেতুটির নির্মাণকাজ করছে কংক্রিট এন্ড স্টীল টেকনোলোজি নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অবহেলিত উত্তর ধরলার মানুষের জন্য ২০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ধরলা সেতু নির্মাণ করা হলেও সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষ রত্না্ই নদীতে সেতু নির্মাণ না করেই ফুলবাড়ী ধরলা সেতু নির্মাণ কাজ সম্পুর্ন করে এবং উম্মুক্ত করে দেয়। এমনি অবস্থায় সেসময়কার সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের দুরদর্শিতার না থাকায় সেতুটির সুফল পাচ্ছেন না এ এলাকার লোকজন। ফুলবাড়ী ধরলা সেতুটির উদ্বোধনের সাড়ে ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও কাঙি্ক্ষত সুফল পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। বিশেষ করে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটসহ বৃহত্তর রংপুরের ব্যবসা—বাণিজ্যে অর্থনৈতিক সফলতার দ্বার উন্মোচন করতে পারেনি এই সেতুটি।
বর্তমানে ভগ্নদশা রত্নাই সেতু দিয়ে ভারি চানবাহন চলাচল করছে না। যে কোন সময়ে ভেঙ্গেও পড়তে পারে। ফলে পূর্বের মত ৫০ কিলোমিটার ঘুরে মালামল নিয়ে আসছে ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামরী উপজেলায় ব্যবসায়ীরা। চলছে না ঢাকা বা আঞ্চলিক রুটের বাসগুলো। তাই রত্নাই নদীর ওপর সেতু নির্মান কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য আবেদন জানিয়েছে এলাকার লোকজন।
জানাগেছে,ফুলবাড়ীর উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নে ফুলবাড়ীÑলালমনিহাট সংযোগ সড়কে সাড়ে ৬ বছর আগে দুই’শ ৭কোটি টাকা ব্যয়ে নিমার্ন করা হয় ফুলবাড়ী ধরলা সেতু। এ সেতুটি নিমার্নের প্রাণের দাবী ছিল উত্তর ধরলার মানুষের। ৯৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯.৮ মিটার প্রস্থের এই সেতুটি নিমার্ন কাজ শেষ হলে ২০১৮ সালের ৩ জুন সাবেক ক্ষমতাচুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। সেদিন থেকে সাধারণ মানুষ চলাচল শুরু করলেও চলাচল করছে না ভারি যানবাহন বা ঢাকা ও আঞ্চলিক রুটের গাড়ী। সেতুটির পশ্চিম পাড়ের দেড় কিলোমিটার দুরে ফুলবাড়ী লালমনিরহাট সড়কের কুলাঘাট এলাকায় রত্নাই নদীর ওপর স্টীলের বেইলি সেতুটির সমস্যার কারণে। এক’শ ৩৮ মিটার দৈর্ঘ্য এই স্টীলের বেইলী সেতুটির ভগ্নদশা হওয়ায় শুধু হালকা যানবাহন ছাড়া পারাপার হতে পাচ্ছে ভারি যানবাহন। পাহাড়া বসানো হয়েছে আইন শৃংখলা বাহীনির। ব্যস্ততম সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ দাঁড়িয়ে থাকা সেতুটির মধ্যখানে এংগেলের পাতি দিয়ে আটকে দেন সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষ। কষ্ট করে মোটরসাইকেলসহ পথচারীরা পারাপার হচ্ছে। এ ভাবেই চলছে সাড়ে ৬ বছর। ফলে পণ্যবাহী ও ঢাকাগামী নাইটকোচ এবং আঞ্চলিক রুটের বাসগুলো পূর্বেরমত ৫০ কিলোমিটার ঘুরে কুড়িগ্রাম শহর হয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চরে। এ জন্য পেছিয়ে পড়েছে উত্তর ধরলার ছোট—বড় সব ধরণের ব্যবসায়ীরাসহ সাধারনেরা। অতিরিক্ত খরচ দিয়ে নিয়ে আসতে হচ্ছে পণ্য।
ফুলবাড়ী জেএম পেপার হাউর্জের মালিক জাহাঙ্গীর আলম জানান, লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাটে রত্নাই নদীর ওপর অনেক পুরাতন ও জরাজীর্ণ বেইলী । সেটি নতুন করে নিমার্ণ না হওয়ায় কারণে শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর সুফল থেকে আমরা ব্যবসায়ীরা বঞ্চিত। ঢাকা,রংপুর ও লালমনিরহাট জেলা শহর থেকে পণ্য আনা নেওয়া করতে পারছি না। এ জন্য আমরা অর্থনৈতিকভাবে এখনো পিছিয়ে রয়েছি।
ব্যবসায়ী সোলেমান যুগান্তরকে জানান,’ রত্নাই নদীর ওপর সেতু নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ায় আমরা ঠিকঠাক ব্যবসা—বানিজ্য করতে পারছি না। ট্রাকের পরিবর্তে ইজিবাইক ও ট্রলিতে মালামাল পরিবহন করতে হচ্ছে। এ কারনে আমাদেরকে অতিরিক্ত পরিবহন ভাড়া ব্যয় করতে হচ্ছে।’ “সেতুটির নির্মাণকাজ খুবই ধীরগতিতে চলছে। নির্মাণকাজ শেষ হতে আরোও কতদিন লাগবে বুঝতে পারছি না। তিনি আরও জানান, রত্নাই নদীর ওপর সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে লালমনিরহাটের সাথে কুড়িগ্রামের ৩টি উপজেলার ব্যবসা—বানিজ্য প্রসার লাভ করবে। এসব উপজেলার মানুষজনের যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতি আসবে। এতে স্থানীয়দের অর্থনিতক সচ্ছলতা আসবে”।
লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ—বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ সাইফুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, সংযোগ সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহন নিয়ে একটু জটিলতা ছিল। জেলা প্রশাসন দ্রুত অধিগ্রহনকৃত জমি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যেই জমি অধিগ্রহনের জন্য ২ কোটি ৯০ লাখ টাকার অনুমোদন হয়েছে। দ্রুত জমির মালিকদের টাকা বুঝে দেওয়া হবে। সেতুটি নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে এটি যাতায়াতের জন্য ২০২৫ সালে উম্মুক্ত করা হবে।