২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ - ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ - 07 December, 2024

মিঠাপুকুরে একই ঘটনায় দুই মামলা,হামলার শিকার যুবককে ফাঁসাতে চায় পুলিশ!

আমাদের প্রতিদিন
3 weeks ago
203


মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি:

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শাল্টি গোপালপুর গ্রামে একটি পুকুরে দুই শিশুর গোসল করা নিয়ে বিরোধের জেরে মিঠাপুকুর থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। ঘটনার দিন দুই শিশু পুকুরে গোসল করা নিয়ে উভয়পক্ষের পরিবাবের লোকজনের মধ্যে বাকবিতন্ডা হলে সেই ঘটনার সুত্র ধরে একই দিন রাতে হামলার শিকার হন শাকিল মিয়া (২৪) নামে শারীরিক প্রতিবন্ধী এক যুবক। সেদিন যখন প্রতিপক্ষের লোকজন দলবদ্ধ হয়ে ভুক্তভোগী শাকিলের বাড়িতে হামলা চালান তখন ৯৯৯ কল করে পুলিশের সহযোগীতা চায় স্থানীয়রা। ঘটনার সত্যতা থাকায় গত ১৯ অক্টোবর মিঠাপুকুর থানায় ১৪৩/ ৪৪৮/ ৩২৩/ ৩২৫/ ৩০৭/ ৩৮০/ ৪২৭/ ৫০৬ ও ৩৪ ধারায় ১০ জনকে আসামী করে একটি মামলা হয়। মামলাটির তদন্ত করেন সাব-ইন্সপেক্টর (এসএই) বিদ্যুৎ কুমার মজুমদার। আর হামলার শিকার শাকিলকে এমনভাবে আঘাত করা হয়েছে যে, তিনি এখনো ঠিকমতো উঠে দাড়াতে পারছেন না এবং বাকরুদ্ধ ট্রমায় রয়েছেন।

অভিযোগ উঠেছে, ভুক্তভোগীর করা মামলার ৪ দিন পর ৩ নাম্বার আসামী বালা মিয়া বাদী হয়ে উল্টো ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধেই কাউন্টার মামলা করেছেন। এই কাউন্টার মামলাটির তদন্ত করেন সাব-ইন্সপেক্টর (এসএই) নুর আলম সরকার। একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুটি মামলায় পুলিশের উদাসীনতার পাশাপাশি তদন্ত নিয়েও ওই এলাকার জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিষয়টি রহস্যজনক এবং হামলার শিকার যুবককে উল্টো ফাসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এ ছাড়াও এসএই নুর আলম সরকারের বিরুদ্ধে এর আগেও লতিবপুর, খোড়াগাছ ও কাফ্রিখাল ইউনিয়নে মামলার তদন্ত নিয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলার শাল্টি গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই একটি পুকুর রয়েছে। সেই পুকুরে গত ১৩ অক্টোবর দুপুরে স্থানীয় দুই শিশু গোসল করা অবস্থায় তাদের মধ্যে ঝগড়া হলে তাদেরকে থামাতে সেখানে যান শাকিল। তাদের সামান্য শাসনও করেন। কিন্তু প্রতিবেশী বালা মিয়া তার ছেলেকে শাসন করার বিষয়টি নিয়ে শাকিলকে নানাভাবে হুমকি দেন। এরপর কোনকিছু বুঝে উঠার আগেই সেদিন রাতেই শাকিলের বাড়িতে এসে হামলা চালায় বালা মিয়া ও তার লোকজন। এতে শাকিল গুরুত্বর আহত হয়। ভেঙে ফেলা হয় তার ঘরের দরজা-জানালা। হামলাকারীদের তান্ডব থামাতে ৯৯৯ কল করেন স্থানীয়রা। এ ঘটনায় মিঠাপুকুর থানায় একটি মামলা হয়। 

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে অভিযুক্ত বালা মিয়া বাদী হয়ে পরের মামলা নিয়ে, মামলাটি ১৪৩/৪৪৮/৩৪১/৩২৩/৩২৬/৩০৭/৩৮০/৩৫৪/৪২৭/১১৪ ও ৩৪ ধারায় ৬ জনকে আসামী করে একটি মামলা রের্কড করা হয়েছে। জানা গেছে,  গুলি বা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কেউ মুমূর্ষু অবস্থায় চলে গেলে বা গুরুতর আহত হলে দণ্ডবিধি আইনের ৩২৬ ধারায় মামলা নেওয়ার বিধান আছে। কিন্তু মিঠাপুকুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর (এসএই) নুর আলম সরকার ৩২৬ ধারায় এমন একটি ঘটনায় মামলা নিয়েছেন যেখানে বাদী গুরুতর আহত তো হনইনি বরং তার গায়ে আঘাতের কারণে কোনো সেলাই বা এ ধরনের কোনো চিকিৎসারও প্রয়োজন হয়নি। এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন রংপুরের কয়েকজন আইনজীবী। তারা বলছেন, যে ঘটনায় গুরুতর কোনো আঘাত নেই সে ঘটনায় ৩২৬ ধারায় মামলা রহস্যজনক। তবে বালা মিয়ার দাবি, তার স্ত্রী ও সন্তানের উপর হামলা হয়েছে। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাও নিয়েছেন।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, শাকিলকে অন্যায়ভাবে মারপিট করা হয়েছে। ছেলেটা কোনরকমে প্রাণে বেচে আছে। পুলিশ প্রথমে সত্য ঘটনাকে গুরুত্ব দিলেও পরে বালা মিয়াকে দিয়ে মামলা করিয়ে একটা গেম খেলছে। এটা ঠিক নয় একে তো পুলিশের উপর সাধারণ মানুষের আস্থা নেই তার উপর এমন কাজ পুলিশকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

 

মানবাধিকার কর্মী আশিকুর রহমান বলেন, ৩২৬ ধারা প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশকে সতর্ক থাকা দরকার। একটি সাধারণ ঘটনায় জামিন-অযোগ্য ৩২৬ ধারা দিয়ে পুলিশ অপেশাদার আচরণ করেছেন। কেউ একজন এজাহার নিয়ে আসল, আর এটির ভিত্তিতে মামলা হয়ে গেল? এজাহারের সত্যতা প্রাথমিকভাবে অবশ্যই যাচাই করতে হবে। দৃশ্যমান গুরুতর আঘাত না থাকলে ৩২৬ ধারায় মামলা হওয়াটা উদ্বেগের।

এ বিষয়ে থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তফা কামাল বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই মাঠ পর্যায়ে মামলার তদন্ত করে প্রতিবেদন দেন। একই ঘটনায় বাদী চাইলে দুটি মামলা হতেই পারে। এ বিষয়ে আরও  কিছু জানতে চাইলে থানায় আসেন।

দণ্ডবিধির ৩২৬-এ যা বলা আছে ৩২৬ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি গুলিবর্ষণের, ছুরিকাঘাতের বা কাটার যন্ত্র বা হাতিয়ার দ্বারা গুরুতর আঘাত করে, অথবা যে হাতিয়ারটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার ফলে মৃত্যু ঘটতে পারে, সে হাতিয়ার দ্বারা গুরুতর আঘাত করে অথবা কোনো বিষ বা ক্ষয়কারী দ্রব্য কর্তৃক গুরুতর আঘাত করে, অথবা কোনো বিস্ফোরক দ্রব্য দ্বারা গুরুতরভাবে আহত করে, অথবা যে দ্রব্য শ্বাস কর্তৃক গ্রহণ করলে, উদরস্থ করলে বা রক্তে গ্রহণ করলে তা মানবদেহের পক্ষে ক্ষতিকর হয়, সে দ্রব্য দ্বারা গুরুতর আহত করে অথবা কোনো পশু দ্বারা গুরুতর আঘাত করে, তবে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে অথবা ১০ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth