১৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ - ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ - 03 December, 2024

মিঠাপুকুরে দখলকৃত বাস্তভিটা উদ্ধারে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অসহায় দিনমজুর

আমাদের প্রতিদিন
1 week ago
38


পারিবারিক কবরস্থানে কুঁড়েঘর বানিয়ে বসবাস করছেন

মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধ:

রংপুরের মিঠাপুকুরে দখলকৃত বাস্তভিটা উদ্ধারে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এক অসহায় দিনমজুর। দির্ঘদিন ধরে বেদখলে থাকা জমি উদ্ধার করতে না পেরে পারিবারিক কবরস্থানে বানিয়েছেন কুঁড়েঘর। সেখানে স্ত্রী, ছেলের বৌ ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে দিনযাপন করছেন তিনি। এছাড়াও বসবাসের স্থান না থাকায় বাড়িতে থাকছেন না ২ ছেলে ও তাদের স্ত্রী-সন্তানরা। বেদখলে থাকা সম্পত্তি উদ্ধারে একাধিকবার গ্রাম্য শালিস বৈঠক ও আদালতের রায় পেলেও বাস্তভিটা উদ্ধার করতে পারছেন না ওই দিনমজুর। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার রাণীপুকুর ইউনিয়নের হাবিবপুর গ্রামে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাবিবপুর গ্রামে আব্দুস সোবহান (৬৫) পৈত্রিক সূত্রে ১৪ শতক বাস্তভিটার জমি পেয়েছেন। এরমধ্যে প্রায় ১০ শতক জমি বেদখলে রেখেছে প্রতিবেশি নয়া মিয়া, মিজানুর রহমানসহ আরও ৩ জন প্রতিবেশি। বাধ্য হয়ে আব্দুস সোবহান পারিবারিক কবরস্থানে ৩টি কুড়েঘর তৈরী করে জীবন যাপন করছেন। সেখানে স্ত্রী ও এক ছেলের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন আব্দুস সোবহান। আরও ২ ছেলে ও তাদের স্ত্রী-সন্তানরা জায়গার অভাবে বাড়িতে থাকেন না। দিনমজুর আব্দুস সোবহান বলেন, দির্ঘদিন ধরে কয়েকজন প্রতিবেশি আমার বাস্তভিটা বেদখল করে রেখেছে। আমি গ্রামে শালিস বৈঠক দিয়েছি, আদালতে মামলা করে রায়ও পেয়েছি। কিন্তু বাস্তভিটার জমি উদ্ধার করতে পারিনি। আমার প্রতিপক্ষের লোকজন আওয়ামী লীগের নেতা। এরই প্রভাবে জমিগুলো বেদখল করে রেখেছে। আমি অসহায় দিনমজুর। আমি সঠিক বিচার চাই।

আব্দুস সোবহানের স্ত্রী হানিফা খাতুন বলেন, আমরা জমি উদ্ধার করতে গেলে প্রভাবশালীরা আমাদের হুমকি দেয়, মারপিট করে। আমরা গরীব মানুষ। আমরা জমিটুকু উদ্ধার করতে পারছিনা। আমরা সঠিক বিচার চাই। আব্দুস সোবহানের ছেলে স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, আমরা কবরস্থানে বসবাস করছি। প্রতিবেশিরা আমাদের বাস্তভিটা বেদখল করে রেখেছে। আমরা গ্রামে ও ইউনিয়ন পরিষদে শালিস বৈঠক দিয়েছিলাম। কোন কাজ হয়নি। বেদখলকারীরা প্রভাবশালী। তারা আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে দির্ঘদিন ধরে জমি বেদখলে রেখেছে। আমরা জমি উদ্ধার চাই।

কয়েকজন গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, আব্দুস সোবহানের প্রতিপক্ষ গ্রæপ শক্তিশালী। তারা রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত। একারণে একাধিকবার বৈঠক হলেও তারা সেই রায় মেনে নেয়নি। উল্টো তারা প্রাণনাশের হুমকি দিত। ভয়ে গ্রামের লোকজনেরা প্রতিবাদ করার সাহস পায়না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রতিবেশি জানান, আব্দুস সোবহানের অসহায় মানুষ। আর বেদখলকারীরা প্রভাবশালী। একারণে তিনি বাস্তভিটার জমিটুকু উদ্ধার করতে পারছেন না।

বাস্তভিটা বেদখলের অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম মিজানুর রহমান। তিনি আওয়ামী লীগের স্থানীয়  নেতা। একারণে প্রভাব খাটিয়ে বাস্তভিটার জমি বেদখলে রেখেছেন।-এমনি অভিযোগ করা হলে তিনি সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আব্দুস সোবহানের জমি বেদখলে রয়েছে, এটি সত্য। তবে পুরোপুরি আমার কাছে নেই। আমার পাশের বাড়ির লোকজনেরা জমিগুলো বেদখলে রেখেছেন। তারা ছেড়ে দিলে, আমিও জমি ছেড়ে দেব। রাণীপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু ফরহাদ পুটু বলেন, বাস্তভিটা বেদখলের বিষয়ে একাধিকবার শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু কোন সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। পরে তারা আদালতের দ্বারস্ত হয়েছিলেন। 

 

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth