বদরগঞ্জে ৬৪ একর জমি ভূমিখোরদের দখলে
ভুয়া লিজ দেখিয়ে অট্টালিকা নির্মাণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
গত ২৬ নভেম্বর বদরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন হলরুমে মাসিক আইন-শৃঙ্খলা সভা অনুষ্ঠিত হয় । সভায় বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সরকারি কর্মকর্তাসহ রাজনৈতিক,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপি উপজেলা শাখার আহবায়ক সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী,বিএনপি নেতা সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মাদ আলী সরকার, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির রুস্তম আলী, উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক অধ্যাপক মোফাজ্জল হোসেন , পৌর বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক এম আজিজুল হক প্রমুখ ।
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতে আইন শৃঙ্খলা ভালো বলে অভিমত দেন । বক্তাগণ বদরগঞ্জের মেলা বিষয়ে বক্তব্য দেন । বিএনপি উপজেলা শাখার আহবায়ক অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী বলেন, শতবর্ষী এই মেলা আজ ধ্বংসের পথে । বিগত সরকারের মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আহাসানুল হক চৌধুরী টুটুল সবাইকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মেলাকে উপেক্ষা করে বদরগঞ্জ হাট বাজার ১২ মাসের জন্য লিজ দেন । অথচ বিগত সময়ে হাট ডাক হতো ১১ মাসের জন্য, ০১ মাসের জন্য ডাক হতো মেলা কিন্তু সে নিয়ম ভঙ্গ করেন তিনি । এছাড়াও রংপুর জেলার বদরগঞ্জে একমাত্র মেলার মাঠ এখন ভূমিখোরদের দখলে । প্রায় ৬৪ একর জমি মেলার মাঠ হিসেবে দান করেছিলেন একজন দানবীর নন্দলালা ও জগবন্ধু সিংহ দুগর । তা বর্তমানে বিভিন্ন অজুহাতে দখল করে নিয়েছেন একদল প্রভাবশালী মহল । এতে সহযোগিতা করেছেন সাবেক মেয়রসহ অসাধু কর্মকর্তা- কর্মচারী । দেখার যেন কেউ নাই । প্রতি বছর ১৩ পৌষ বদরগঞ্জ মেলা সরকারি নিলাম ডাকের মাধ্যমে ডাক হয় । মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে মেলা ডাক হলেও জায়গার অভাবে মেলা বসতে পারে না । হাজার বছরের ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে ।
পৌর বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক এম আজিজুল হক বলেন, মেলার মাঠের মাজখানে পুকুর কেটে রাখা হয়েছে, থানা পাড়া নামে খ্যাত বদরগঞ্জ থানা হতে শ্মশান পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে মেলার মাঠ দখল করে বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে । গরুহাটি বলে পরিচিত থানার মোড় থেকে মেলার মাঠ পর্যন্ত দখলদারগণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন । এছাড়াও থানা মোড় থেকে ওয়ারেছিয়া মাদ্রাসা হয়ে যমুনেশ্বরী নদীর পাড় পর্যন্ত প্রভাবশালী মহল দখল করে ৫তলা,৭তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন । সাবেক মেয়র উত্তম কুমার সাহা ক্ষমতার অপব্যবহার করে মেলার মাঠের জমি দখল করে ব্যবসার গোডাউন ঘর নির্মাণ করেছেন । এছাড়াও এক শ্রেণির বালুখোর অবৈধভাবে যমুনেশ্বরী নদী থেকে বালু তুলে নদীকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। তাই মেলার মাঠ ও নদীকে বাঁচানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে ।
উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে ,থানা মোড় থেকে ওয়রেছিয়া মাদ্রসা হয়ে যমুনেশ্বরী নদীর পাড় পর্যন্ত ১৮৮৯ (হাল দাগ-২০৫৫ ও ২০৫১) দাগে ৭ একর ৯৭ শতক জমি রয়েছে । সর্বশেষ ৯০ এর জরিপে প্রথমে ১.১ খতিয়ান ভুক্ত হয়, ভুল বুঝে তা পরে ০১ খতিয়ান ভুক্ত হয় । তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাশেদুল হক স্বাক্ষরিত বদরগঞ্জ উপজেলা অফিসের এক প্রতিবেদন দেখা যায় ( স্মারক নং ৩১.০২.৮৫০৩.০০০.০৬.০১৩, তাং-৬/০৩/২০১৮ ইং) বদরগঞ্জ মৌজার ০১ নং খতিয়ান ভুক্ত ১৮৮৯ দাগে ৮.৬৫ একরের মধ্যে ৭.৯৭ একর জমি খাস। ০৮ নং রেজিস্টার এর পার্ট-১ অংশে উক্ত দাগ মেলার মাঠ হিসেবে চিহ্নিত আছে । উক্ত মেলা প্রতি বছর মোটা অঙ্কের অর্থে ডাক হয় ।
তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব),রংপুর রশিদুল মান্নাফ কবীর স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে দেখা যায় ( স্মারক নং-০৫.৫৫.৮৫০০.০০০.০০.০০০.১৮, তাং-২০/০৮/১৮ ইং ) বদরগঞ্জ মৌজার ০১ নং খতিয়ান ভুক্ত ১৮৮৯ দাগে ৮.৬৫ একরের মধ্যে ৭.৯৭ একর জমি খাস। সায়রাত রেজিস্টার ৬ দৃষ্টে দেখা যায় ১১১ নং দাগে ১.৩৩ একর,৪৮ দাগে ১.১০ একর,৪৯ দাগে .২০ একর, এবং ১৮৮৯ দাগের ১.০০ একর মোট ৩.৬৩ একর জমি বদরগঞ্জ হাট বাজার পেরিফেরি ভুক্ত । সায়রাত রেজিস্টার ৬ এর ১৮৭১ দাগে ১৭.৭৪ একর এবং ১৮৮৯ দাগে ৭.৯৭ একর জমি বদরগঞ্জ মেলা হিসেবে চিহ্নিত আছে । বর্তমান ডিপি-০১ খতিয়ান এর ১৮৮৯ দাগের ১.৮১০১ একর জমিতে বিভিন্ন ব্যক্তি বাড়ি-ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ০৭ একর জমিতে প্রভাবশালী মহল দখল করে ৫তলা,৭তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন । কেউ কেউ ২০ লাখ ৩০ লাখ টাকা শতক মূল্যে বিক্রিও করছেন । বাড়ি নির্মাণ বা জমি দখল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে সবাই বলেন তাদের ডিসিআর কাটা আছে । কেউ লিজের কাগজ দেখাতে পারেন নাই । দু একজন দেখাতে পারলেও তা সঠিক নয় বলে অনেকেই জানান। গরু/বাঁশহাটি সংলগ্ন মেলার মাঠে বসবাসকারী একজন দখলদার নিজ নামে প্রায় ০২ একর জমি লিজ দেখিয়ে ২০/৩০ লক্ষ টাকা শতক মূল্যে বিভিন্ন জনের নিকট বিক্রি করছেন।
সর্বশেষ মাঠ জরিপ ১৯৯০ মোতাবেক নকশায় দেখা যায় সিট নং ০২ এ ৭ একর ৯৭ শতক জমির কোথাও কোন স্থাপনা নেই । অন্যান্য গোটা এলাকা ফাঁকা পড়ে রয়েছে । কিন্তু২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রæয়ারি সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্বাক্ষরিত এক জরিপে দেখা যায় ১৮৮৯ দাগ জুড়ে বাড়ি,দোকান বা রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ।
বক্তাদের দাবি মেলার মাঠ দখলদারদের নিকট থেকে উদ্ধার করে মেলার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনাহোক
। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাঁর বক্তব্যে বলেন, যদি কোথাও কোন নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে ।