স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নামে প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ ভুমিহীনদের অনুপ্রবেশ "তহশিলদারের দৌড় ঝাপ"
আজাদুল ইসলাম আজাদ, পীরগঞ্জ:
রংপুরের পীরগঞ্জে মুজিবর্ষের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর পঞ্চম ধাপে ১০২ টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। শানেরহাট ইউনিয়নের দামোদরপুর ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন ১৬ টি ঘরের মধ্যে অধিকাংশ ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে স্বচ্ছ ব্যক্তিদের নামে । সেই সাথে নিম্নমানের সামগ্রিক দিয়ে কাজ করা কারনে ঘরের মেঝে ফাটল এবং জোড়াতালি দিয়ে ঘরের জানলা ঢেকে রেখেছে, প্রকল্পের বাসিন্দাদের অভিযোগ।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে কথা হয় শানেরহাট ইউনিয়নের দামোদরপুর ও পারর্তীপুর গ্রামের লোকজনের সাথে এখানকার অনেকেই বলছেন, দামোদরপুর ঈদগাহ মাঠের সাথে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৬ টি নবনির্মিত ঘর স্বচ্ছ ব্যক্তির নামে দলিল করা হয়েছে। দলিলিক কাগজপত্র নিয়ে ৬ টি ঘরে লোকজন উঠলেও তাদের মধ্যেও ৪ জনই স্বচ্ছ ব্যক্তি। এছাড়াও এখানে পারবড়তীপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য সাদেক মিয়ার ছেলে রেজাউল করিম এর নামেও ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দামোদরপুর গ্রামের মিথি খাতুন আবেদ আলী, রাবেয়া বেগম পিতা জবির মিয়া, জলিল মিয়া পিতা জোব্বার আলীর নামেও জমি রয়েছে তারাও এখানে ঘর বরাদ্দ পেয়েছে। অই কেন্দ্রের প্রায় মানুষের বাড়িঘর এবং তাদের নামে জমি রয়েছে। স্বচ্ছল মানুষের নামে ঘরগুলো দলিল করার কথা শুনে দামোদরপুর এবং পারবর্তীপুর গ্রামের দরিদ্র এবং ভুমিহীন ১০ টি পরিবারের লোকজন প্রকল্পের ঘরগুলোতে জোরপূর্বক ভাবে ভুমিহীনদের অধিকারে প্রবেশ করেছে উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই।
দামোদরপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম জানান,সরকার অসহায় এবং ভুমিহীনদের জন্য এই ঘরগুলো বরাদ্দ দিয়েছে কিন্তু ইউনিয়ন ভুমি অফিসার বা তহশিলদার মনগড়া ভাবে স্বচ্ছ ব্যক্তিদের নাম তালিকা অন্তর্ভুক্ত করে দলিল করেছে। যে কারনে তহশিলদার এখানে আসছে না অনুপ্রবেশকারীদের ঘর ছাড়তে দেয়া হচ্ছে বারবার নোটিশ। ভুমিহীন অনুপ্রবেশ পরিবারের লোকজন গুলো কিছুতেই ঘর ছাড়ছে না। দেশে সরকার নেই কে শুনে কার কথা। ফলে তহশিলদারের দৌড় ঝাপ শুরু হয়েছে।
অনুপ্রবেশ ভুমিহীন পরিবারের আনারুল ইসলাম বলেন, প্রকৃত ভুমি ও গৃহহীনরা যেন এই প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ পায়। ঘরগুলো নির্মাণের সময় থেকে আমরা উপজেলা প্রশাসনের লোকজন কে বলেছি এই কেন্দ্রে দামোদরপুর এবং পারবর্তীপুর গ্রামের ভুমিহীন ও গৃহহীন মানুষদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রশাসনের লোকজন আমাদের কে বলেছে আগে দুই গ্রামের মানুষ ঘর পাবে এরপর যদি সেইরকম লোকজন না পাওয়া যায় তাহলে বাহিরের লোকজন এখানে আনা হবে। তা না করে তহশিলদার পকেট গরম করে স্বচ্ছ মানুষদের নামে ঘর বরাদ্দ দিয়েছে আমি ঘর চাই। পুরাতন আশ্রয়ণ কেন্দ্রের ঘর বিক্রি করে এখানে এসে নতুন করে ঘর বরাদ্দ নিয়েছে এরকম ব্যক্তিও রয়েছে।
শানেরহাট ইউনিয়ন সহকারী (ভুমি) কর্মকর্তা (তহশিলদার) আব্দুল মোমেন এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, অই ঘরগুলোর তালিকা প্রনয়নের কাজ করেছে আমার তহশিল অফিসের লোকজন। যে কারনে কিছু এলোমেলো হয়েছে অনুপ্রবেশকারিদের ঘর ছাড়তে আমরা নোটিশ করেছি এরপরও তারা ঘর ছাড়ছে না।
শানেরহাট ইউপি চেয়ারম্যান মেছবাহুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের ইউনিয়নে অনেক ভুমিহীন রয়েছে। অনেকেই পরিষদ এবং ইউনিয়ন ভুমি অফিসে কাগজপত্র জমা দিয়েছে। ঘরের বরাদ্দ রয়েছে অনেক বর্তমান নির্বাচিত সরকার নেই, যে কারনে ঘরের কাজ বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া ঘরের তালিকা প্রণয়নের কাজগুলো তহশিলদার করেছে।
ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এমন ব্যক্তিদের নামের তালিকা চেয়ে
কথা হয় সহকারী কমিশনার (ভুমি) ত্বকীর ফয়সাল তালুকদার এর সাথে তিনি বলেন, তালিকা দেয়া যাবেনা আপনার খোঁজখবর নেন কতজন স্বচ্ছ মানুষ ঘর পেয়েছে। ঘরগুলোতে যারা অনুপ্রবেশ করছে তাদেরকে ঘর ছাড়তে নোটিশ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা বেগম এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, যদি কোনো ব্যক্তির নামে জমি থাকে এবং সেই ব্যক্তিকে প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দেয়ার প্রমাণ মেলে তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখনো সময় আছে পরিবর্তন করে ভুমিহীন ব্যক্তিকে বরাদ্দ দেয়া যাবে।