দিনাজপুরে আরেক দফায় বেড়েছে চালের দাম:অস্বস্তিতে ভোক্তারা
অস্থিরতা কমছে না চালের বাজারে
দিনাজপুর প্রতিনিধি:
নতুন আমন ধান পুরোদমে বাজারে উঠলেও অস্থিরতা কমছে না চালের বাজারে। ধানের জেলা দিনাজপুরে আরেক দফায় বেড়েছে চালের দাম। একের পর এক দাম বেড়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন ভোক্তারা। সবচেয়ে বেশী বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দিনাজপুরে চালের দাম আরেক ধাপ বেড়েছে প্রতি কেজিতে ৩ টাকা। দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে বরাবরের মতোই চাল বিক্রেতারা দুষছেন মিল মালিকদের, আর মিল মালিকরা বলছেন বাজারে ধানের দাম বেশী থাকায় বেড়েছে চালের দাম।
দিনাজপুর শহরের প্রধান চালের বাজার বাহাদুরবাজার এন.এ মার্কেটে শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) গিয়ে দেখা যায়- বিআর ২৯ জাতের চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৩ থেকে ৬৪ টাকা, বিআর-২৮ প্রতিকেজি ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা, মিনিকেট চাল ৭৪ থেকে ৭৬ টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও মোটা বিভিন্ন স্বর্ণা জাতের চাল ৫২ থেকে ৫৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে প্রকারভেদে দাম বেড়েছে ৩ টাকা থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত। তবে পাইকারি বাজারে চলতি সপ্তাহে ৫০ কেজির বস্তায় দাম বেড়েছে এক থেকে দেড়শ টাকা পর্যন্ত।
এর আগেও চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে কেজিতে চালের দাম বেড়েছিলো ৪ থেকে ৫ টাকা। আমন ধান বাজারে উঠলেও দফায় দফায় চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের ক্রেতারা। শুক্রবার বাহাদুরবাজারে চাল কিনতে আসা অটোমোবাইল মেকার আরমান হোসেন জানান, এখনও যদি এভাবে চালের দাম বাড়তেই থাকে, তাহলে আমরা চাল কিনে খাবো কি করে। আমাদের তো আয় বাড়েনি। নির্দিষ্ট আয় দিয়ে চাল কিনে খেতে হিমসিম খেতে হচ্ছে আমাদের।
বাজাদুর বাজার এন.এ মার্কেটের চাল বিক্রেতারা জানান, মিল মালিকরা চালের দাম বৃদ্ধি করে দেয়ায় বেড়েছে চালের দাম। চাল বিক্রেতা লিয়াকত আলী জানান, তারা মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল এনে বিক্রি করেন, নতুন ধান উঠায় যেখানে দাম কমার কথা, সেখানে মিল মালিকরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এ জন্য বেশী দামে চাল কিনে এনে তাদের বেশী দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। বাড়তি দামে চাল বিক্রি করতে গিয়ে ক্রেতাদের সাথে তাদের প্রায়ই বচসা বাঁধছে।
অপরদিকে মিল মালিকরা বলছেন-বাজারে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে চালের দাম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিল মালিক বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীরা বাজারে ধান কিনে অবৈধভাবে মজুদ করছে। এ কারনেই বাজারে ধানের দাম উর্দ্ধমুখী। বাজারে ধানের দাম উর্দ্ধমুখী থাকার কারনেই এর প্রভাব পড়ছে চালের বাজারে।
দিনাজপুর জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মোসাদ্দেক হুসেন বলেন-আমরা ধান কিনে চাল তৈরী করে বিক্রি করি। বাজারে ধানের দাম বাড়লে আমাদের অবশ্যই বেশী দামে চাল বিক্রি করতে হবে, নইলে মিল বন্ধ করে দিতে হবে। মোসাদ্দেক হুসেন বলেন, বোরো ধান কৃষকরা ঘরে রাখতে না পারলেও আমন ধান বাড়ীতে রাখতে পারে। এ জন্য কৃষকরা বাড়তি দামের আশায় তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ধান বিক্রি করছে। এর ফলেই বাজারে বেড়েছে ধানের দাম।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান জানান, দিনাজপুর জেলায় এবার ২ লাখ ৭২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় ফলনও হয়েছে বেশ ভালো।
উল্লেখ্য, দিনাজপুর জেলায় প্রতিবছর প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়। এই জেলার চাহিদা পুরন করে ৯ লাখ মেট্রিক টন চাল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়।