সচিবালয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে নিহত সোহানুর জামান নয়নের বাড়িতে শোকের মাতম
বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন মা নার্গিস বেগম
মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি:
কথা বলার শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলেছেন নার্গিস বেগম। ক্ষীণ স্বরে কথা বালার পরই মুর্ছা যাচ্ছিলেন। বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন।
ফায়ার ফাইটার সোহানুর জামান নয়নের হতভাগিনী মা। মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ী বন্দর থেকে ছড়ান-আফতাবগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ধরে ৩০ কিলোমিটার দুরে বড়বালা ইউনিয়নের আটপুনিয়া গ্রামের কৃষক আক্তারুজ্জমান। তাঁর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বাড়ির ভেতরে নারীদের জটলা। সেখানে ক্রন্দন করছেন নয়নের একমাত্র বোন সীমা আক্তার। বলেন, ‘ভাই নয়নের এই মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য ট্রাক চালক ও পুলিশ প্রশাসন দায়ী। পুলিশ যদি রাস্তায় ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতো, তাহলে নয়ন মারা যেতো না। আমি দায়িদের কঠোর শাস্তি দাবি জানাচ্ছি।’
ঘটনার দুই দিন আগে তার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হয়েছিল বলে জানান সীমা।
পরিবারের জন্য সামান্য কিছু জমি ছিল। আক্তারুজ্জামান সেই জমি চাষাবাদ করে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করতেন। কিন্তু ২ বছর আগে আবাদি জমির প্রায় সবটুকু বিক্রি করে ছেলের চাকুরীর জন্য দিয়েছিলেন। আশা ছিল- চাকরি করে জমি কিনে আবারও পরিবারকে স্বাবলম্বি করবেন নয়ন। কিন্তু তার অকাল মৃত্যুতে আজ তিনি নিঃস্ব।
এলাকাবাসি জানান, বাকরুদ্ধ হওয়ার আগে সকালের দিকে নয়নের মা নার্গিস বেগম হাউমাউ করে কান্না করতে করতে প্রতিবেশিদের কাছে বলেছিলেন, ‘মোর ছইল (আমার ছেলে) বিএ পরীক্ষার রেজাল্ট হইলে আরও ওপর পদে (প্রমশন) গেইলো হয়। তারপর ছইলোক বিয়া দিনু হয়। মোর আশা আর পূরণ হইলনা।
খালু আব্দুল খালেক ও মামা নুর ইসলাম বলেন, ‘হামরা আর কাকে নিয়া বাঁচমো। হামার সউগ শ্যাষ। ওই ছইল কোনায় সবার ভরসা আছিল।’
প্রতিবেশি আবদুর রাজ্জাক ও মুকুল মিয়া বলেন, ‘নয়ন খুব ভালো ছেলে। সবার সাথে তার সদ্ভাব ছিল। বাড়িতে আসলে সবার খোঁজ খবর নিতো।’
নয়ন ২০২৪ সালে ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেন। পরে তিনি
তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনে আসেন। সেখানে ২১ দিন ট্রেনিং করে বর্তমান বিশেষ টিমে কাজ করেছিলেন।
উল্লেখ্য, ২৫ ডিসেম্বর (বুধবার) আনুমানিক রাত ২টার দিকে সচিবালয়ের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি ট্রাক পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে সোহানুর জামান রাস্তার ওপর পড়ে যান। তাঁকে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত ৪টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।