মিলছে না ক্রেতা, ফুলকপি এখন চাষিদের বোঝা
আজাদুল ইসলাম আজাদ, পীরগঞ্জ রংপুর:
লাভের আশায় সবজি চাষ করে লোকসানের বোঝা টানতে হবে চাষিদের কিছু দিন। জমিতে সবজি পচন ধরছে ক্রেতা নেই। বীজের টাকাও উঠছে না। চাষিদের মাথায় হাত, অনেকেই গবাদিপশুর খাদ্য হিসাবে চালিয়ে নিচ্ছে ফুলকপি।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা ফুলকপি চাষ করে হতাশায় ভুগছেন চাষিরা। এ উপজেলা সবজির অঞ্চল হিসাবে পরিচিত। কৃষি পল্লীতে সবজির বাজার অনেকটাই মন্দা। লাভের মুখ দেখতে পারছেনা সবজি চাষীরা। সবজি চাষাবাদের লোকসানের বোঝা হালকা করতে অনেকটাই বেগ পেতে হবে এবার চাষিদের। সেই সাথে সিম বেগুনের দাও কমেছে।
শুক্রবার সরেজমিনে উপজেলার সবজি পল্লী ঘুরে কথা হয় চাষিদের সাথে এখানে অনেক চাষি বলছেন, লাভের জন্য আবাদ করা হয়েছে, সেখানে লোকসানের বোঝা টানতে হচ্ছে। ফুলকপি হাটবাজারে নিয়ে গেলে মনে হয় এগুলো অচল মাল, সবজির সাথে বস্তাও যায়। অনেক সময় ক্রেতা না পেয়ে বাজারে ড্রেনে ফেলে আসতে হচ্ছে ফুলকপি।
ফুলকপি চাষিরা জানান, দেড় থেকে দুই টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে প্রতিটি চারা। এরপর জমির হালচাষ সার কীটনাশক এবং শ্রমের বিষয়টি নাহয় বাদ দিলাম। ফুলকপি চাষে বীজের টাকা তোলাই কঠিন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে এক মন কপি বাজারে নিয়ে গেলে পাইকাররা মন হিসাবে দাম বলে না, বস্তা হিসাবে দাম বলে। তাও আবার কপির সাথে বস্তাও যায় ফ্রী। এতো কষ্টের আবাদ পানিতে পড়ে গেলো।
ঘোনা চোতরা গ্রামের ফুলকপি চাষি একরাম মিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার আমি ধাপের হাটে ফুলকপি নিয়ে গিয়ে ৮০ টাকা মন হিসাবে বিক্রি করি। কপি বিক্রি করে শুধু মাত্র ভ্যান ভাড়া এবং হাটেরজমা দিতেই টাকা শেষ। নিজের শ্রমের কোনো মূল্য নেই। অনেক দিন থেকে সবজির চাষাবাদ করছি কিন্তু এবারের মতো সবজির বাজার কখনো দেখিনি।
জামালপুর গ্রামের নুরুন্নবী জানান, কপি বিক্রি করে বীজের টাকাও উঠছে, হালচাষ সার কীটনাশক এবং কিষান পাটের টাকা ঘর থেকে পূরণ করতে হচ্ছে। ফুলকপি চাষ করে লোকসান আর লোকসান।
ফুলকপি ব্যবসায়ীরা জানান, এখন ২০ হাজার টাকা দিয়ে এক ট্রাক ফুলকপি ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ২০ হাজার টাকার মাল বিক্রি করা হচ্ছে মাত্র ১৬ হাজার টাকা। কয়েক সপ্তাহ আগে এক গাড়ি মালের জন্য ১ লাখ টাকা ব্যায় পর্যন্ত খরচ হতো তারপরও লাভ হয়েছে লোকসান হয়নি। বর্তমানে সবজি কিনলেই ক্যাশ থাকেনা । কৃষকদের জমি থেকে ২ টাকায় ফুলকপি কিনে মোকামে পৌছাতে ৮ টাকা পরে কিন্তু মোকামেই প্রতি পিস কপি দাম ৮ থেকে ১০ টাকা এরপর আবার নষ্ট মাল বেড় হয় গাড়ি থেকে। যে কারনে কাচামাল কিনতে ভয় হয়। তাছাড়া ফুলকপি এখন সারাদেশে আবাদ করা হচ্ছে। আমরা যেখানে মাল বিক্রি করি সেখানে টাটকা মাল মেলে, আমাদের গাড়ির বাসি মাল। ক্রেতারা সবসময় টাটকা মাল খোজে। বর্তমান ফুলকপি কিনলেই পাইকারদের ব্যবসায় পুঁজি বসিয়ে যাচ্ছে, যে কারনে বাজারে মিলছে না দূরের পাইকার। গত বছর যেখানে প্রতিদিন কয়েক গাড়ি মাল ঢাকায় যায় বর্তমানে এক গাড়ি মাল কিনতে ভয় লাগে।
উপজেলার কৃষি বিভাগের লোকজন বলছেন, বর্ষা মৌসুমের শেষ নাগাদ চাষীরা এক সাথে সবজির চাষাবাদ করেছে এবং সেই সবজির আমদানি একসাথে শুরু হয়েছে। কাচামাল উৎপাদন বেড়েছে যে কারনে বাজার গুলোতে সবজির আমদানি বেড়েছে। তবে দুই এক সপ্তাহের মধ্যে সবজির বাজার টান ধরবে বলে জানাযায়।