৩ মাঘ, ১৪৩১ - ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ - 16 January, 2025

সরকারী খাদ্য গুদামে ধান দিতে অনীহা কৃষকদের

আমাদের প্রতিদিন
2 weeks ago
82


দিনাজপুর প্রতিনিধি:

নানান রকম হয়রানী ও জটিলতা এবং সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারেই ভালো দাম পাওয়ায় সরকারী খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহ করতে অনীহা ধানের জেলা দিনাজপুরের কৃষকদের। এ জন্য চলতি আমন সংগ্রহ অভিযানের প্রায় দেড় মাস হলেও দিনাজপুর জেলা খাদ্য বিভাগ মোট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪ শতাংশ ধান সংগ্রহ করতে পেরেছে কৃষকদের কাছ থেকে। যদিও এই সময়ে মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করা হয়েছে মোট লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশ। গত বোরো সংগ্রহ অভিযানেও দিনাজপুর খাদ্য বিভাগ কৃষকদের কাছ থেকে কাংখিত ধান পায়নি, মিল মালিকদের কাছ থেকে কাংখিত চালও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। 

দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী জানান, চলতি আমন সংগ্রহ অভিযানে দিনাজপুর জেলায় কৃষকদের কাছ থেকে ৩৩ টাকা কেজি দরে ১৭ হাজার ৯৯১ মেট্রিক টন ধান, মিল মালিকদের কাছ থেকে ৪৭ টাকা কেজি দরে ৪৬ হাজার ৪৮৪ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং ৪৬ টাকা কেজি দরে ১১ হাজার ৬২০ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। গত ১৭ নভেম্বর থেকে দিনাজপুরে শুরু হয় সরকারী খাদ্য বিভাগের আমন সংগ্রহ অভিযান। এই অভিযান চলবে আগামী ২৮ ফেব্রæয়ারী পর্যন্ত।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জানায়, গত বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) পর্যন্ত কৃষকদের কাছ ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৮’শ মেট্রিক টন। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪ শতাংশ। অন্যদিকে মিল মালিকদের কাছ থেকে সিদ্ধ চাল সংগ্রহ হয়েছে ১৮ হাজার ৫৯৪ মেট্রিক টন এবং আতপ চাল সংগ্রহ হয়েছে ৩ হাজার ৪৮৬ মেট্রিক টন। কৃষকদের কাছ ধান সংগ্রহ মোট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪ শতাংশ সংগ্রহ হলেও মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ হয়েছে মোট লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশ। অর্থ্যাৎ মিল মালিকরা সরকারী খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করলেও সরকারী খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহ করতে অনাগ্রহী কৃষকরা।

এ প্রসঙ্গে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী জানান, মুলত কৃষকদের ন্যায্যমুল্য নিশ্চিত করতেই সরকার কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কৃষকরা যদি বাজারেই ধান বিক্রি করে লাভবান হন-তাহলে তারা সেখানেই ধান বিক্রি করবে-এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, সরকারের বেধে দেয়া দামের কারনেই কৃষকরা বাজারে ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন। যদিও আগামী ২৮ ফেব্রæয়ারীর মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ ধান কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক।

এদিকে দিনাজপুরের বিভিন্ন ধানের হাটে খোঁজ নিয়ে জানাযায়, বর্তমানে মোটা জাতের ধান কৃষকরা বাজারে বিক্রি করছে ১ হাজার ৩৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪’শ টাকা মন দরে। প্রতিকেজিতে যার মুল্য দাঁড়ায় ৩৪ টাকা থেকে ৩৫ টাকা। কিন্তু সরকারী মুল্য প্রতিকেজি ৩৩ টাকা। সরকার নির্ধারিত মুল্যের চেয়ে বাজারেই নগদ টাকায় বেশী দাম পাওয়ায় সরকারী খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহ করতে অনীহা কৃষকদের।

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার হাসিলা গ্রামের কৃষক সোহরাব হোসেন বলেন, এবার সরকারী খাদ্য গুদামের চেয়ে বাজারেই দাম বেশী। তাই সরকারী খাদ্য গুদামে তারা কেনো ধান দেবো? যেখানে বেশী দাম পাবো, সেখানেই তো ধান বিক্রি করবো।

দিনাজপুর সদর উপজেলার নশিপুর গ্রামের কৃষক বাবুল হোসেন জানান, বাজার মুল্যের চেয়ে সরকারী খাদ্য গুদামে কেজিতে ১/২ টাকা বেশী পেলেও তারা সেখানে ধান বিক্রি করবেন না। পুর্বের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, সরকারী খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে অনেক সময় বিভিন্ন অভিযোগ তুলে আমাদের ধান ফিরিয়ে দেন। তাছাড়া তারা ধানের টাকা পরিশোধ করতে সময় নেন এবং ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করে থাকেন। এছাড়াও চেক নিতে গিয়ে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন হয়রানীর শিকার হতে হয়। এক্ষেত্রে কৃষকদের অনেক ঝামেলা ও হয়রানী শিকার হতে হয়। কিন্তু বাজারে অথবা বাড়ীতে ব্যবসায়ীদের কাছে কোন ঝামেলা ছাড়াই নগদ টাকায় ধান বিক্রি করতে পারেন তারা। এ জন্য সরকারী খাদ্য গুদামের চেয়ে ব্যবসায়ীদের কাছেই ধান বিত্রি করতে আগ্রহী তারা।

বাবুল হোসেন বলেন, সরকার যদি কৃষকদের ন্যায্যমুল্য প্রদানের কথা আন্তরিকভাবেই চিন্তা করে থাকেন, তাহলে কৃষকদের কাছ থেকে বাজারে বা কোন কেন্দ্র করে সরাসরি নগদ টাকা দিয়ে ধান ক্রয় করার ব্যবস্থা করতে হবে এবং এক্ষেত্রে কৃষকদের হয়রানী করা চলবে না। তাহলেই সরকারের এই উদ্দেশ্যে সফল হবে।

উল্লেখ্য, গত বোরো সংগ্রহ অভিযানেও কৃষকদের কাছ থেকে কাংখিত ধান পায়নি দিনাজপুর জেলা খাদ্য বিভাগ। পুরন হয়নি মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাও। বোরো সংগ্রহ অভিযানে দিনাজপুরে কৃষকদের কাছ থেকে ১৪ হাজার ৯৫১ মেট্রিক টনের মধ্যে ধান সংগ্রহ হয় ১১ হাজার ৩১০ মেট্রিক টন। আর মিল মালিকদের কাছ থেকে ১ লাখ ২ হাজার ৩৩৫ মেট্রিক টনের মধ্যে সিদ্ধ চাল সংগ্রহ হয় ৯১ হাজার ৬২১ মেট্রিক টন এবং ১৭ হাজার ১৩২ মেট্রিক টনের মধ্যে আতপ চাল সংগ্রহ হয় ১৩ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth