৩ মাঘ, ১৪৩১ - ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ - 16 January, 2025

ভাওয়াইয়া কিংবদন্তী আব্বাসউদ্দীনের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আমাদের প্রতিদিন
2 weeks ago
9


বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি:

লোকসঙ্গীতের সম্রাটখ্যাত কালজয়ী কিংবদন্তি আব্বাসউদ্দীন আহমদ ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার। অসংখ্য জনপ্রিয় ভাওয়াইয়া গানের অমরশিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমদ আধুনিক, স্বদেশী, ইসলামি, পল্লীগীতিসহ সবই তিনি গেয়েছেন। তবে পল্লী গানের সুর যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন তা আজও অদ্বিতীয়। এই গুণী ব্যক্তির আজ মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৫৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর এই মহান সঙ্গীতশিল্পীর জীবনাবসান ঘটে।

আব্বাসউদ্দীন আহমদের পৈতৃক নিবাস কোচবিহারের তুফানগঞ্জ মহকুমার বলরামপুর গ্রাম। ভাওয়াইয়া গানকে যিনি সর্বোচ্চ উচ্চতায় সমাসীন করেছেন, তিনি আব্বাসউদ্দীন আহমদ। জননেতা একে ফজলুল হকের সঙ্গে এ উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জনসমাবেশে গান গাওয়ার সুবাদে তিনি যেখানে যে ভাওয়াইয়া ও লোকগীতিটি পেয়েছেন, সেখান থেকে সেটি সযতেœ সংগ্রহ করে পরিশীলিত সুরে পরিবেশন করেছেন। তিনি শতশত বছরের প্রাচীন এই ভাওয়াইয়া গান এবং লোকগান গ্রামোফোন রেকর্ডের মাধ্যমে সারা উপমহাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। ভাওয়াইয়া ও লোকগানকে তিনি তার সুরেলা কণ্ঠের মাধুরী মিশিয়ে পরিবেশন করায় এ গান এত জনপ্রিয় হয়েছিল যে, পরবর্তী রেকর্ডে আব্বাসউদ্দীনের কণ্ঠে কোন গানটি বাজারে আসছে তা শোনার জন্য গ্রামোফোন রেকর্ডের হাজার হাজার শ্রোতা অপেক্ষার প্রহর গুনতেন এবং গ্রামোফোনের কাঙ্খিত রেকর্ডটি বাজারে এলেই গ্রামোফোনের (কলের গানের) চারপাশে ভিড় করতেন। তাই, বহু প্রকার লোকগানের মধ্যে ভাওয়াইয়া গানের অবস্থান অনেক উচ্চে উঠেছিল, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

আব্বাসউদ্দীন আহমদ ১৯০১ সালের ২৭ অক্টোবর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ মহকুমার বলরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা জাফর আলী আহমদ ছিলেন তুফানগঞ্জ মহকুমা আদালতের উকিল। আব্বাসউদ্দীন আহমদ শৈশব থেকেই তী² বুদ্ধি ও মেধাসম্পন্ন ছিলেন। তিনি ১৯২০ সালে ম্যাট্রিক পাস করেছিলেন তুফানগঞ্জ হাই স্কুল থেকে। ম্যাট্রিক পাস করার পর তিনি ভর্তি হয়েছিলেন কোচবিহারের ভিক্টোরিয়া কলেজে। কৃতিত্বের সাথে আইএ পাস করার পর তিনি বিএ পড়তে আসেন রংপুর কারমাইকেল কলেজে এবং পরবর্তীতে রাজশাহী কলেজেও ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তিনি এ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেশিদিন লেখাপড়ার সুযোগ পাননি। এরপর তিনি বিএ ভর্তি হন কোচবিহার কলেজে। কিন্তু এখানেও বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। কোচবিহারের এক অনুষ্ঠানে আব্বাসউদ্দীন আহমদের গান শুনে কাজী নজরুল ইসলাম বিমোহিত হয়েছিলেন। তাকে তিনি কলকাতায় আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আব্বাসউদ্দীন আহমদ মাত্র ২৩ বছর বয়সে কলকাতার গ্রামোফোন কোম্পানিতে দু’টি আধুনিক গান রেকর্ড করেছিলেন বিমল দাস গুপ্তের সহায়তায়। গান দু’টি সে সময় খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। গান দুটি ছিল ‘কোন বিরহীর নয়ন জলে বাদল ঝরে গো’ এবং ‘স্মরণপারের ওগো প্রিয়’। কাজী নজরুল ইসলামের অনুপ্রেরণা এবং সহযোগিতায় আব্বাসউদ্দীনের কণ্ঠে ইসলামী গানের পাশাপাশি একাধিক ভাওয়াইয়া গানের রেকর্ড হয়েছিল। এই গানগুলো সে সময় যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তিনি সংগ্রহ করেছেন অনেক দুর্লভ ভাওয়াইয়া গান, যার বেশিরভাগ গানে তিনি সুর সংযোজন করেন। তার ছোট ভাই আব্দুল করীমের লেখা ভাওয়াইয়া গানগুলোতেও তিনি সুরারোপ করেছিলেন। শুধু দেশে নয়, লস এ্যাঞ্জেলস, শিকাগো, নিউইয়র্ক, লন্ডন, প্যারিস, টোকিও, মেলবোর্নসহ পৃথিবীর বহু দেশে তিনি এই ভাওয়াইয়া গান পরিবেশন করে ভাওয়াইয়া গানকে বিশ্বসভায় স্থান করে দিয়েছিলেন। দেশ বিভাগের সঙ্গে সঙ্গে আব্বাসউদ্দীন ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় এসে তিনি সরকারের প্রচার দপ্তরে এডিশনাল সং অর্গানাইজার হিসেবে চাকরি করেন। ঢাকায় নতুন করে তার জীবন শুরু হয়। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট রাত ১২টার পর ঢাকা বেতার থেকে প্রথম সঙ্গীত পরিবেশন করেন তিনি। পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৫৫ সালে ফিলিপাইনের ম্যানিলায় আয়োজিত এশীয় সঙ্গীত সম্মেলনে বাংলা লোকসঙ্গীত সম্পর্কে ভাষণ দেন। সেখান থেকে ফেরার পথে রেঙ্গুনে কয়েকটি সভায় যোগ দেন ও গান গেয়ে শোনান। ১৯৫৬ সালে তিনি জার্মানির স্টুটগার্ট শহরে আয়োজিত আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত সম্মেলনে যোগ দেন। বাংলা লোকসঙ্গীত সম্পর্কে বিশ্বসভায় প্রদত্ত তার ভাষণ ও তার গান শ্রোতামন্ডলীর অকুণ্ঠ প্রশংসা লাভ করে। মৃত্যুবার্ষিকীতে তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

 

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth