৫ মাঘ, ১৪৩১ - ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫ - 18 January, 2025

উল্টো চিত্র দিনাজপুরের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পদচারনায়

আমাদের প্রতিদিন
2 weeks ago
43


২০২৪ সালের একাল-সেকাল

দিনাজপুর প্রতিনিধি:

২০২৪ সাল। ব্যাপক আলোচিত এই বছরে গোটা দেশবাসী রাজনৈতিক পটপরিবর্তন দেখলেও দিনাজপুরবাসী দেখছে এই জেলার প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের পদচারণার উল্টো চিত্র। এই বছরের প্রথম ৭ মাসে বিএনপি ও জামায়াতের উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দের তেমন প্রকাশ্যে খুঁজে না পেলেও পরবর্তী ৫ মাসে এখন পর্যন্ত হদিসই পাওয়া যাচ্ছে না অধিকাংশ আওয়ামীলীগ নেতাদের। তখন মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে বিএনপি ও জামায়াত নেতা-কর্মীরা ছিলো বাড়ীছাড়া। আর দীর্ঘদিন দৌর্দন্ড প্রতাপে ঘুরে বেড়ালেও এখন ২৭টি মামলায় বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন আওয়ামীলীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মীরা। গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আওয়ামীলীগের চিহ্নিত কর্মীরাও। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পদচারনার ক্ষেত্রে এই উল্টো চিত্রই বেশ আলোচিত দিনাজপুরবাসীর মধ্যে।

বিগত বেশ কয়েক বছরের মতো চলতি ২০২৪ সালের শুরু থেকেই দিনাজপুর জেলায় আওয়ামীলীগ নেতাদের ছিলো দৌর্দন্ড প্রতাপ। রাজনৈতিক, সামাজিকসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ছিলো অবাধ বিচরণ। জেলা আওয়ামীলীগ থেকে শুরু করে শহর, উপজেলা, ওয়ার্ড এমনকি গ্রাম পর্যন্ত আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগি সংগঠনের নেতাদের বিচরণ ছিলো প্রভাবের সাথে। এই সময়ে বিএনপি ও জামায়াত এবং এদের সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সরব উপস্থিতি তেমন লক্ষ্য করেনি দিনাজপুরবাসী। বিএনপি’র নেতৃবৃন্দের হঠাৎ দেখা গেলেও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের প্রকাশ্য পদচারণা ছিলো একেবারেই কম। অসংখ্য মামলায় গ্রেফতার আতঙ্ক আর প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অলিখিত সীমাবদ্ধতা থাকায় বিএনপি’র কর্মকান্ড ছিলো অফিস ভিত্তিক।  আর জামায়াতের কর্মকান্ড ছিলো শহরের বিভিন্ন সড়কে হঠাৎ ক্ষনিকের জন্য।  একপ্রকার লোকচক্ষুর আড়ালেই ছিলো তাদের কর্মকান্ড ও পদচারনা। ফলে সে সময় বিএনপি ও জামায়াতের নেতৃবৃন্দের অবাধ পদচারনা তেমন পরিলক্ষিত হয়নি জেলাবাসীর কাছে।

কিন্তু চলতি বছরের ৫ আগস্ট সরকারের পট পরিবর্তনের পর দিনাজপুরবাসী এখন দেখছেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পদচারনায় উল্টো চিত্র। বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের এখন প্রকাশ্য পদচারনা ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে দেখা গেলেও, দেখা মিলছে না আওয়ামীলীগ নেতা-কমীদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দিনাজপুর শহরের এক অধিবাসী জানান, তখন বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের তেমন খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিলো না, এখন মাঠে ময়দানে তাদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও পাওয়া যাচ্ছে না আওয়ামীলীগ নেতাদের। চলতি ২০২৪ সালেই এমন উল্টো চিত্র দেখা যাবে তা ভাবিনি।

দিনাজপুর জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিরল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আ.ন.ম বজলুর রশিদ কালু বলেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামীলীগ আমার বিরুদ্ধে অন্তত ১৮টি মামলা দায়ের করেছে, যার সবই মিথ্যা মামলা। এসব মামলায় গ্রেফতার হয়েছি অসংখ্যবার। বাড়ীতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। ১৫ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ১ হাজারটি রাত কখন কোথায় কিভাবে কাটাতে হয়েছে-তা বলার মতো নয়, অমানবিক। এক প্রকার গোপনেই চালাতে হয়েছে রাজনৈতিক কর্মকান্ড। চলাফেরা করতে হয়েছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে একপ্রকার এড়িয়ে।

এখন একই অবস্থা আওয়ামীলীগ নেতাদের-এমন প্রশ্নে আ.ন.ম. বজলুর রশিদ কালু বলেন, বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো ছিলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ন। তারা রাতের অন্ধকারে নিজেরাই নাশকতা ঘটিয়ে বিএনপি নেতাদের উপর মামলা দিয়েছে রাজনৈতিকভাবে দমন ও হয়রানী করার জন্য। বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার হীন মানসে। কিন্তু আওয়ামীলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে-তা প্রকাশ্য দিবালোকের ঘটনায়। তারা প্রকাশ্য দিবালোকে হামলা ও গুলি চালিয়েছে। এতে অসংখ্য মানুষ হতাহত হয়েছে। অতএব তাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে-এগুলো তাদেরই কর্মের ফল।

দিনাজপুর জেলা জামায়াতের আমীর আনিসুর রহমান বলেন, আওয়ামীলীগের আমলে আমার বিরুদ্ধেই ৪টি মামলা হয়েছে, যার সবই মিথ্যা। মিছিল করতে গিয়ে আমাকে ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বেশ কিছুদিন জেলখানায় থাকতে হয়েছে বিনা দোষে। আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, অত্যাচারীর ভুমিকায় বেশীদিন টিকে থাকা যায় না। তারা আমাদের প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে দেননি। বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানী ও অত্যাচার করেছে। তাই যে কোনভাবেই হোক মহান আল্লাহপাকের ইচ্ছায় তাদের পতন হয়েছে। তারা আজ লুকিয়ে বেড়াচ্ছে।

এ বিষয়ে আওয়ামীলীগ নেতাদের মতামত জানতে চাওয়ার চেষ্ঠা করা হলে তেমন কাউকে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এদিকে দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের ঘটনায় দিনাজপুরের বিভিন্ন থানায় মোট ২৭টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় এজাহার নামীয় আসামী  ১ হাজার ৬২০ জন এবং অজ্ঞাত আসামী কয়েক হাজার। এসব মামলার মধ্যে কোতয়ালী থানায় ৮টি, বিরল থানায় ২টি, চিরিরবন্দর থানায় ২টি, পার্বতীপুর থানায় ৩টি, বীরগঞ্জ থানায় ৩টি, বোচাগঞ্জ থানায় ১টি, কাহারোল থানায় ১টি, খানসামা থানায় ১টি, বিরামপুর থানায় ২টি, নবাবগঞ্জ থানায় ১টি, হাকিমপুর থানায় ১টি এবং ঘোড়াঘাট থানায় ২টি। ১৩টি থানার মধ্যে শুধুমাত্র ফুলবাড়ী থানায় কোন মামলা দায়ের হয়নি।

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth