১ ফাল্গুন, ১৪৩১ - ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ - 13 February, 2025

গঙ্গাচড়ায় দশটায় শুরু দেড়টায় ছুটি:বেহাল দশায় চরাঞ্চলের প্রাথমিক শিক্ষা

আমাদের প্রতিদিন
4 weeks ago
325


নির্মল রায়,গঙ্গাচড়া (রংপুর):

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় সকাল দশটায় স্কুলে এসে মাত্র দু-তিনটি ক্লাস নেন শিক্ষকরা। এরপর বেলা ১-২টা বাজতেই বিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে পড়েন তারা। সে দিনের মতো স্কুল ছুটি। স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা স্হানীয় সহকারি শিক্ষকদের নির্দেশেই চলে বেশ কিছু বিদ্যালয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এমনটাই নাকি রেওয়াজ আলমবিদিতর ইউনিয়নের উত্তর গণেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ফলে প্রতিদিনই কমছে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এতে ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার সময়  ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, অফিস কক্ষসহ শ্রেণিকক্ষগুলোতে ঝুলছে তালা। বিদ্যালয়ের বারান্দায় কয়েকজন শিশু শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় শিশুরা হইচই করছে। মাঠে চড়ছে গরু-ছাগল। এক পাশে রশিতে শুকানো হচ্ছে স্হানীয়দের জামা-কাপড়।

এ সময় স্কুল সংলগ্ন বাড়ির বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন অভিযোগ করেন, সকাল ৯টা থেকে স্কুল শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু শিক্ষকরা এসে পৌঁছান বেলা ১০টা থেকে ১১টা নাগাদ। তারপর চলে দেড় থেকে পৌনে ২টা পর্যন্ত ক্লাস। এরপরেই একে একে বাড়ি ফিরতে শুরু করেন শিক্ষকেরা। যদিও অন্য সব স্কুলের মতোই বিকাল সোয়া ৪টা পর্যন্ত পাঠদান চলার কথা। কিন্তু তা না হয়ে দীর্ঘদিন যাবত সকাল দশটা থেকে দুপুর এক-দুইটার মধ্যেই স্কুল ছুটি দিয়ে বাড়ি চলে যান শিক্ষকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অপর দুই বাসিন্দা বলেন, “এলাকার লোকজন বহুবার স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে স্কুল সঠিক সময়ে খোলার ও যথাযথ পাঠদানের আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক এলাকাবাসীর কথায় আমল দেননি। তারা জানান, এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকায় রয়েছেন (স্কুলের সামনেই বাড়ী) সহকারি শিক্ষিকা ফাহিমা খাতুন। তিনি ওই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতিদের পরিবারের বধূ। তাই তার নির্দেশেই বিদ্যালয় চলে, ফলে উপেক্ষিত হয় প্রধান শিক্ষকের নির্দেশ।

দুপুর দেড়টায় স্কুল বন্ধ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক তহমিনা বেগম বলেন, আমার ব্যক্তিগত কাজ থাকায় গঙ্গাচড়া বাজারে এসেছি। অন্যান্য শিক্ষকরা তো স্কুলে থাকার কথা, কিন্তু কেন স্কুল বন্ধ করে গেছে তা আমি জানিনা।

এছাড়াও একই ইউনিয়নের কুতুব তুলসীর হাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একই দিন দুপুর বারোটায় উপস্থিত হলে দেখা গেছে বিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষকের মধ্যে উপস্থিত রয়েছেন মাত্র দুজন। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান জানান, ক্যাবের প্রোগ্রামে তিনি উপজেলায় রয়েছেন। অপর একজন শিক্ষক কয়েক মাস ধরে প্রশিক্ষণরত রয়েছেন। অপর সহকারি শিক্ষক সোলায়মান গনিকে অনেক বলার পরেও তাকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত করানো সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে স্থানীয়দের অভিযোগে জানা গেছে,  সোলায়মান গণি বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক হওয়ায় বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সাথে তার খুব ভালো সম্পর্ক। এছাড়া তিনি সাব বিবাহ রেজিস্টারের দায়িত্ব পালন করেন। এ কারণেই তিনি প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ে প্রায়ই অনুপস্থিত থাকেন।

উপজেলার লক্ষিটারী ইউনিয়নের শংকরদহ পুরাতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সরেজমিন উপস্থিত হলে বিদ্যালয়টি বন্ধ দেখা যায়। এ সময় স্থানীয়রা  জানান, দুপুর ২ টায় স্কুল ছুটি দিয়ে সবাই চলে গেছেন। তারা স্কুলে আসেনও দেরিতে।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক দিল শামীমা নুরিনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি রিসিভ করেননি।

এসব স্কুলের মতই চলছে উপজেলার চরাঞ্চলের প্রায় সব স্কুলই। চরাঞ্চলের স্কুলগুলোর অধিকাংশতেই উপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরাও। ফলে তারা তাদের সন্তানদের পার্শ্ববর্তী কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন টাকা খরচ করে। গত বুধবার সরেজমিন উপস্থিত হলে এমন চিত্র দেখা গেছে চরাঞ্চলের স্কুলগুলোতে। এসব স্কুলে শিক্ষকরা যেমন দেরিতে আসেন, তেমনি ছুটি দেন দুপুর একটার পরপরই।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার সংশ্লিষ্ট কয়েকজন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছেন বলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাগমা শিলভিয়া খান জানান।

এ বিষয়ে রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth