১ ফাল্গুন, ১৪৩১ - ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ - 13 February, 2025

সরকারী নির্দেশ অমান্য-রাষ্ট্রীয় কাজে বাঁধা :বহিস্কৃত সদস্যদের নামে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মামলার প্রস্তুতি

আমাদের প্রতিদিন
3 weeks ago
561


রংপুর প্রেসক্লাব

তালা ভেঙ্গে দখলের চেষ্টা ও অবৈধ কমিটির ভোটের আয়োজন দ্রুত সরকারী নির্দেশ বাস্তবায়নের দাবি রংপুর কর্মরত সাংবাদিকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সরকারী নির্দেশ অমান্য ও রাষ্ট্রীয় কাজে বাঁধা দেয়াসহ তালা ভেঙ্গে ক্লাবের অফিস দখলের চেষ্টা চালিয়েছে রংপুর প্রেসক্লাবের বহিস্কৃত কমিটির সদস্যরা। গতকাল বুধবার বিকেলে অনুমান সাড়ে ৪টায় তারা কিছু বহিরাগতদের নিয়ে এ অপচেষ্টা চালিয়েছে। এবং কথিত ভোটাভোটির মাধ্যমে সদস্য অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রম চালায়। সময় তারা সমাজসেবা অধিদপ্তরের নোটিশ ছিড়ে ফেলে। এদিকে দ্রুত সরকারী নির্দেশ বাস্তবায়নের দাবি রংপুর কর্মরত সাংবাদিকদের  এ নিয়ে বৈষম্য বিরোধী সাংবাদিক আন্দোলনের নেতাকর্মীদের উত্তেজনা বিরাজ করছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্রআন্দোলনের নেতৃবৃন্দ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

উল্লেখ্য যে  প্রেসক্লাব পরিচালনায় আর্থিক দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অনিয়ম হওয়ায় রংপুর প্রেসক্লাবের নির্বাহী কমিটিকে বরখাস্ত করেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। সরকারী বরাদ্দকৃত জমিতে পাঁচ তলা নির্মানাধীন ভবনে দীর্ঘদিন ধরে প্রেসক্লাবের ৩৩জন সদস্য নিজেদের অনিয়ম-দুর্নীতি ঢাকতে রংপুরে কর্মরত পেশাদার সাংবাদিকদের ক্লাবের সদস্য হতে দিচ্ছেন না। এমন অভিযোগ রংপুরের পেশাদার সাংবাদিকদের। নানা কালাকানুন দেখিয়ে সাধারন পেশাদার সাংবাদিকদের সদস্য হওয়া পথ রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রংপুর প্রেসক্লাব সমাবসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধিত সংগঠন হিসেবে অনুমোদিত গঠনতন্ত্রে লেখা রয়েছে

 ধারা-২ এর উপধারা-(ক) ক্লাবের গঠনতন্ত্রের প্রতি  আনুগত্য প্রদর্শনকারী রংপুরে কর্মরত সকল জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্র এবং সংবাদ সংস্থা সমূহের নিয়োগ প্রাপ্ত রংপুরে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ সাধারণ সদস্য হতে পারবেন।

(খ) রংপুর থেকে প্রকাশিত দৈনিক ও স্পাতাহিক পত্রিকার সম্পাদকগণ পদাধিকার বলে সদস্য হতে পারবেন।

(গ) রংপুর থেকে প্রকাশিত দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার রংপুর শহরে সার্বক্ষনিক কর্মরত সাংবাদিকগণ সাধারণ সদস্য হতে পারবেন। পত্রিকার সম্পাদকগণ সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের মনোনীত করবেন।

 (ঘ) প্রেসক্লাবের কোন সাধারণ সদস্য একটানা একযুগ সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত থাকলে নিয়োগকারী পত্রিকা বন্ধ হওয়ার পরও তিনি ইচ্ছা করলে সাধারণ সদস্যপদে বহাল থাকতে পারবেন।

ধারা-৫ এর উপধারা -ক,খ,গ ও ঘ এ বলা আছে সদস্য হতে আগ্রহী হতে হবে, পত্রিকার নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র, ন্যুনতম ৬ মাসের অধিক নিয়োগের মেয়াদ থাকতে হবে। ভর্তি ফি-১০টাকা।

কিন্তু বর্তমান প্রেসক্লাবে এই নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে গঠনতন্ত্রের সকল ধারার বিপরীতে নানা কালাকানুন চাপিয়ে দিয়ে ক্লাবের সদস্য হওয়ার পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তর রংপুর নিবন্ধন আইনের ১৯৬১ সনের ৪৬ অধ্যাদেশ বলে নিবন্ধনের অনুমোদন দেয় ১৯৯১ সালের ১৪ জুলাই।

ওই অনুমোদিত গঠনতন্ত্রে কোথাও বলা নেই, সংশ্লিষ্ট পত্রিকার প্রকাশনা এক বছর থাকতে হবে, প্রত্যেক স্থানীয় সংবাদ পত্রের ৪জন সদস্য হতে পারবেন, স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকগণ লিখিত আবেদন করে ও ভোটের মাধ্যমে সদস্য হতে হবে, রংপুরের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে, ক্লাবের সদস্য হতে শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক পাশ থাকতে হবে, যাছাই-বাছাই করে সদস্য হওয়ার জন্য চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা, এর পর তাদের সাধারণ সদস্যের কাছে ভোট প্রার্থনা করে তাদের ৬০শতাংশ ভোট প্রাপ্তির পর তিনি সদস্য হতে পারবেন। এই সব কালাকানুন যুক্ত করে সকল পেশাদার সাংবাদিকদের ক্লাবের সদস্য হওয়ার পথ রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বৈষম্য বিরোধী সাংবাদিক অন্দোলনের নেতৃবৃন্দ সমাজসেবা অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। প্রায় ৬মাস আগে ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ডিজি কার্যালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটির  তদন্ত প্রতিবেদনে প্রেসক্লাবের আর্থিক দুর্নীতি-অনিয়ম প্রমানিত হয়। এর পর গত ১৫ জানুয়ারি’২৫ সমাজ সেবা অধিদপ্তর প্রেসক্লাবের নির্বাহী কমিটিকে বরখাস্ত করেন ৪ সদস্যের একটি অন্তবর্তী তত্বাবধায়ক কমিটি গঠন করে।

চার সদস্যের তত্ত্বাবধায়ক কমিটিতে রয়েছেন, আহবায়ক হিসেবে পরিচালক, বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়,রংপুর, সদস্য- অতিরিক্ত পরিচালক, বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়,রংপুর, উপপরিচালক বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়,রংপুর, সমাজসেবা অফিসার, শহর সমাজসেবা কার্যালয়,রংপুর।

বর্তমান বরখাস্তকৃত কমিটির সদস্যরা হলেন, সাবেক সভাপতি মোনাব্বার হোসেন মনা, সহ-সভাপতি আবু তালেব, গংগাচড়া আলমবিদিতর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোমিনুল ইসলাম মোমিন, সাধারণ মেরিনা লাভলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসের বাপি, কোষাধ্যক্ষ পীরগাছা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ শরিফুজ্জামান বুলু, দপ্তর ও যোগাযোগ স্পাদক সদ্য অবসরপ্রাপ্ত রংপুর হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান, ক্রীড়া সম্পাদক জিতু কবীর, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ফরহাদুজ্জামান ফারুক, সদস্য হলেন উত্তর বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার, সদরুল আলম দুলু, এসএম পিয়াল, সাইফুল ইসলাম জাহাঙ্গির।

রংপুর প্রেসক্লাব ১৯৯১ সালে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের অধিন একটি নিবন্ধিত সংস্থা। তাই রেজিষ্ট্রেশন আইনের নিয়ম-নীতি অনুসারে এর কার্যক্রম চলামান থাকার কথা। কিন্ত তার কোন তোয়াক্কা না করে ক্লাবের ইচ্ছেমত নিয়ম আরোপ করে কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল।

এ বিষয়টি নিশ্চত হওয়া গেছে, ১৫ জানুয়ারী’২৫ বুধবার সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান স্বাক্ষরিত এক পত্রে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত পত্রে জানা গেছে, বিগত কয়েক মাস পূর্বে প্রেসক্লাব রংপুর (নিবন্ধন নং-রংপুর/৩৫৯/৯১) পক্ষ থেকে আলাদা দুইটি কমিটি অনুমোদনের জন্য উপপরিচালক সমাজসেবা কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়। বিষয়টি সমাজসেবা অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হলে তদন্তের জন্য সংস্থটির একজন উপ-পরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এরপর নিয়মতান্ত্রীক পদ্ধতিতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা পুলিশ ও ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতে রংপুর প্রেসক্লাবের দায়ীত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন। বিষয়টি জানতে প্রেসক্লাবের ৩৩জন সদস্য ক্লাবের দরজায় তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যান। পরে ১৯ জানুয়ারি’২৫ পুলিশ ও ম্যাজিষ্ট্রেট এর উপস্থিতিতে বৈষম্য বিরোধী সাংবাদিক অন্দোলনের নেতৃবৃন্দসহ রংপুরে প্রায় শতাধিক পেশাদার সাংবাদিক উপস্থিতিতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, পুলিশ ও ম্যাজিষ্ট্রেট ক্লাবের দরজায় তালা ঝুলিয়ে ক্লাবের নিয়ন্ত্রন নিয়ে সেখানে সমাজসেবা অধিদপ্তরের গার্ড নিযুক্ত করেন।

এর পরে ২২ জানুয়ারী’২৫ প্রেসক্লাবের অবৈধ্য কমিটির সদস্যরা কিছু বহিরাগতদের সাথে নিয়ে বিকেল অনুমান ৪টায় প্রশাসনের দেয়া তালা ভেঙ্গে ক্লাবের ভেতর অনুপ্রবেশ করে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা সংস্থাটি (প্রেসক্লাব রংপুর) পরিচালনার ক্ষেত্রে আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম প্রতীয়মান হয়েছে বলে মতামত প্রদান করেন। সংস্থাটির সদস্যগণ আদেশ প্রাপ্তির পর দায়িত্ব গ্রহণের পর গঠনতন্ত্র অনুসারে সদস্য তালিকা হালনাগাদসহ খসড়া ভোটার তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন। পরে নির্বাচিত কমিটির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।

এছাড়াও দেশের স্বনামধন্য অডিট ফার্ম নিয়োগের মাধ্যমে আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরুপন করবেন। কোন সদস্যের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সংস্থার স্বার্থে বিদ্যমান গঠনতন্ত্রটির যে সব ধারা যুগোপযোগী হওয়া দরকার সে সব সংশোধনী এনে তা নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন উদ্যোগ নিতে পারবেন।

রংপুর প্রেসক্লাবের বহিস্কৃত সদস্যরা বর্তমান সরকারের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে যে অপচেষ্টা চালিয়েছে এতে ক্ষুব্ধ রংপুরের সর্বস্তরের সাংবাদিকরা।

এ বিষয়ে রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের সদস্য সচিব জেষ্ঠ্য সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদল বলেছেন,রংপুর প্রেসক্লাবের বিষয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত সেটি রংপুরের সকল সাংবাদিক সাধুবাদ জানিয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে রংপুর প্রেসক্লাব হবে রংপুরে কর্মরত পেশাদার সাংবাদিকদের মিলন স্থল। সরকারের এই নির্দেশ অমান্য করে রংপুর প্রেসক্লাবের বহিস্কৃত সদস্যরা আবারও সাংবাদিকদের প্রেসক্লাবের সদস্য হওয়ার পথ রুদ্ধ করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। আমরা সরকারের সংশিষ্ট দপ্তরকে দ্রুত সদস্য আহ্বন কওে সদস্যভুক্তি করন ও নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত কমিটির নিকট দায়ীত্ব হস্থান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

প্রসঙ্গত হাতে গোনা কিছু সাংবাদিক ও অসাংবাদিকদের নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে প্রেসক্লাব রংপুরকে কুক্ষিগত করে রাখে এই মহল। জুলাই আন্দোলনের পর বৈষম্যের শিকার সাংবাদিকরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলন শুরু করলে প্রেসক্লাবের অসাংবাদিকদের রোষানলে পড়ে হেনস্তা ও মামলার শিকার হন বেশ কিছু সাংবাদিক। এমনকি রংপুর সার্কিট হাউসে তথ্য উপদেষ্টার মতবিনিময়সভা ভণ্ডুল করেন এই অপসাংবাদিকরা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মামলার দায়রের প্রস্তুতি চলছে।

 

 

 

 

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth