রংপুর প্রেসক্লাবের তালা ভেঙে অনুপ্রবেশ, ১৯ জনের নামে মামলা

সমাজসেবার দুই কর্মচারীকে জিম্মি করে
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সরকারি নির্দেশ অমান্য ও রাষ্ট্রীয় কাজে বাধা দেয়াসহ তালা ভেঙে কিছু বহিরাগতদের নিয়ে রংপুর প্রেসক্লাব এর অফিস দখলের চেষ্টা চালিয়েছে সংগঠনটির বহিষ্কৃত কমিটির সদস্যরা। গতকাল (২২ জানুয়ারি) বুধবার বিকেল অনুমানিক সাড়ে ৪টায় তারা এ অপচেষ্টা চালিয়েছে। এ সময় তারা সমাজেসবা অধিদপ্তরের কর্মচারীদের ক্লাবের অফিস কক্ষে আটক রেখে গোপন মিটিং করে।
এ ঘটনায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষে রংপুর শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বাদী হয়ে বুধবার রাতেই ১৯জনকে আসামি করে কোতয়ালী থানায় মামলা করেছেন।
মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রেসক্লাবের বহিষ্কৃত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মেরিনা লাভলী(চ্যানেল আই টেলিভিশন), সভাপতি মোনাব্বর হোসেন মনা(আগামীর সন্ধানে), লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জের উত্তর বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার(আগামীর সন্ধানে) ও সদরুল আলম দুলু(ইউএনবি)সহ ১৯জনকে।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রংপুর প্রেসক্লবের পাঁচতলা সুপার মার্কেট থেকে বিপুল পরিমাণ আয়ের টাকা নির্মাণ কাজের নামে আত্মসাৎ করা, উল্লেখ্য যা ইতিপূর্বে জেলা সমবায় অফিস ও বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক (ডিএসএ) অফিসের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে আত্মসাৎকৃত টাকার পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ২৮লাখ ৬৫ হাজার টাকা।
উল্লেখ্য রংপুর প্রেসক্লাবের পাঁচ তলা ভবনের নির্মাণ কাজে বিগত অভিযুক্ত কমিটির সময় আড়াই কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়। পরে ২০২১-২৩ সালের কমিটির সাবেক সভাপতি মাহবুব রহমান এই হিসাবের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১ কোটি ৩লাখ টাকার নিরীক্ষা করেন। নির্বাহী কমিটি ও সাধারণ সভার সিদ্ধান্তের আলোকে ওই নিরীক্ষা করা হয়। ওই নিরীক্ষা সম্পন্ন করেন দুই দফায় জেলা সমবায় অফিস ও বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক (ডিএসএ) অফিসের নিরীক্ষা কর্মকর্তাবৃন্দ। ওই নির্মাণ কাজের জন্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় দেখানো হয়। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে মাত্র ১ কোটি ৩ লাখ টাকার নিরীক্ষা করলে ওই টাকা আত্মসাত করার ফাঁস হয়ে পড়ে। এর মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ের মধ্যে কত টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে তা নিরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি আত্মসাতের সাথে জড়িতদের বাধার কারনে।
এামলার এজাহারে সূত্র ধরে ও সরকারি দুটি প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুসন্ধান করে আরও জানা গেছে, প্রেসক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি(মোনাব্বর হোসেন মনা), সাধারণ সম্পাদক(রফিকুল ইসলাম সরকার ওরফে রফিক সরকার) ও লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জের উত্তর বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার(আগামীর সন্ধানে), এই আমলে তহবিল তছরুপ ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা প্রমাণিত হয়েছে।
এই আত্মসাতের ঘটনা ধামাচাপা দিতে ক্লাবের সদস্য হওয়ার পথ রুদ্ধ করে মাত্র ৩৩জন সদস্য ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন আইন অমান্য করে ক্লাবের কার্যাদি পরিচালনা করে আসছিলেন। নিবন্ধন আইনের আওতায় ক্লাবের গঠিত কমিটি অনুমোদন নেয়া হয়নি। এই অনিয়ম ও অন্যায়ের প্রতিকার চেয়ে গত গত ২৮ জুলাই ২০২৪ তারিখ বৈষম্য বিরোধী সাংবাদিক আন্দোলনের নেতা সাংবাদিক এসএম জাকির হোসেন সমাজসেবা অধিদপ্তর রংপুর জেলা কার্যালয়ে উপ-পরিচালক বরবরে ১২ সদস্যের একটি কমিটি দাখিল করে অনুমোদন প্রার্থনা করেন।
বিষয়টি জানতে পেরে বর্তমান বহিষ্কৃত কমিটির সভাপতি মোনাব্বর মনা সভাপতি দাবি করে তার স্বাক্ষরিত ১৩ সদস্যের একটি কার্যকরি কমিটি অনুমোদনের জন্য একই দপ্তরে আবেদন জানান। এই পরিস্থিতির উদ্ভব হলে সমাজসেবা জেলা কার্যালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির বিরুদ্ধে ক্লাবের বহিষ্কৃত সভাপতি মোনাব্বর হোসেন মনা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।
এর পরে সমাজসেবা অদিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে গঠিত একটি পৃথক তদন্ত কমিটি করা হয় সংস্থার একজন বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মর্যাদার কর্মকর্তার সমন্বয়ে। ওই কমিটি তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে মহাপরিচালকের দপ্তরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। তদন্তে মামলায় বর্নিত ঘটনাগুলি প্রমাণিত হলে এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ জানুয়ারি-২৫ তারিখ সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে রংপুর প্রেসক্লাব এর কমিটিকে বরখ্াস্ত করে। এর পর সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালককে প্রধান করে চার সদস্যের তত্ত্ববধায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি গত ১৯ জানুয়ারি’২৫ পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট এর উপস্থিতিতে বৈষম্য বিরোধী সাংবাদিক অন্দোলনের নেতৃবৃন্দসহ রংপুরে প্রায় শতাধিক পেশাদার সাংবাদিক উপস্থিতিতে ক্লাবের দরজায় তালা ঝুলিয়ে ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেখানে সমাজসেবা অধিদপ্তরের গার্ড নিযুক্ত করে নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়।
এর পরে ২২ জানুয়ারি’২৫ প্রেসক্লাবের অবৈধ্য কমিটির সদস্যরা কিছু বহিরাগতদের সাথে নিয়ে বিকেল অনুমান ৪টায় প্রশাসনের দেয়া তালা ভেঙে ক্লাবের ভেতর অনুপ্রবেশ করে। এ সময় এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় বলা হয় আসামিরা বে-আইনিভাবে তালা ভেঙে অনাধিকার প্রবেশ করে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সেখানে উপস্থিত কর্মচারীদের বাধা দেয়, ভয়ভীতি প্রদর্শন করে সেখান থেকে জোর করে চলে যেতে বাধ্য করার অপচেষ্টা করে। পরে ক্লাবের ভেতর প্রবেশ করে গোপন মিটিং করে এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মচারীদের ক্লাবের কার্যালয়ের ভেতর আটক করে রাখে। এ সময় ভাঙচুর করায় ১হাজার ৫শ’ টাকার সম্পদের ক্ষতি সাধন করে। ,
এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় সারমর্মে বলা হয়, আসামিগণ পেনাল কোড এর ১৪৩, ৪৪৮,৪২৭, ১৮৬, ১৮৮, ১৮৯, ৩৫৩, ৪০৬, ৪২০, ৫০৬, ১১৪ ৩৪ ধারায় আসামিরা অপরাধ সংগঠন করেছেন। তারা বেআইনি জনতা দলবদ্ধ হয়ে অনাধিকার প্রবেশ কওে, ক্ষতিসাধন, সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও আদেশ অমান্য,সরকারি কর্মচারীকে ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে হুমকি, বল প্রয়োগ, প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ভয়ভিতি প্রদর্শন করেছে।