মিঠাপুকুরে মাজারে মাহফিল নিয়ে উত্তেজনা! পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি:
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় একটি মাজার প্রাঙ্গণে বাৎসরিক মাহফিলকে কেন্দ্র করে পক্ষ-বিপক্ষে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ নিয়ে ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি সামাল দিতে কয়েকবার টহল দিয়েছে মিঠাপুকুর থানা পুলিশ। একপক্ষ মাজার প্রাঙ্গণে বাৎসরিক ওরস ও মিলাদ মাহফিল করার পক্ষে অবস্থায় নিয়েছে। অপরপক্ষ মাজার প্রাঙ্গণে শিরক-বেদত এর অভিযোগ তুলে বাৎসরিক ওরসের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এ বিষয়ে পক্ষ- বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের জারুল্যাপুর মুন্সিপাড়া গ্রামে ফকিরনি দরবার শরীফে বাৎসরিক ওরস ও মিলাদ মাহফিল হয়ে আসছে। ওরসকে কেন্দ্র করে মিলাদ-কিয়াম, হামদ নাত ও তবারকের আয়োজন করে আসছেন দরবার শরীফের উত্তরসূরী ও ভক্তরা। কিন্তু এ বছর দরবার শরীফের অনুষ্ঠান সমূহ ইসলামী পরিপন্থী কার্যক্রমের অভিযোগ তুলে বাঁধা দেয়া শুরু করেন একই গ্রামের একাংশের লোকজন। এমনকি গত শুক্রবার জুমার খোতবায় মিলাদ কিয়াম এবং ওরস পালন শিরক বিদআত উল্লেখ করে বয়ান করেন জারুল্ল্যাপুর বকুলতলা জামে মসজিদের খতিব। তিনি খোতবায় মাজারকে কেন্দ্র করে ইসলামবিরোধী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে কঠোর প্রতিবাদ করার আহবান জানান মুসুল্লিদের। এরপর দুটি পক্ষে বিভক্ত হয় এলাকার বাসিন্দারা। পরে বিষয়টির সমাধান ও নিরাপত্তা চেয়ে মিঠাপুকুর থানায় অভিযোগ করেন। এরপর উল্টো জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন মাজার বিরোধী লোকজন। এ নিয়ে ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যে কোন সময় বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করছেন সাধারন জনগন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, মাজার শরীফকে কেন্দ্র করে একটি পক্ষ অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছে। ইসলামে মিলাদ কিয়াম শরীয়ত বিরোধী কাজ নয়। আমাদের বাপদাদারা যুগ যুগ ধরে ওরস ও মিলাদ কিয়াম করে আসছেন। এখন শুনছি ওসব বিদাত। আমরা কোন সংঘাত চাই না। ইসলাম শান্তির বার্তা দেয়।
এ বিষয়ে ফকিরনি দরবার শরীফের উত্তরসূরী সাজ্জাদূর রহমান বলেন, ফকিরনি দরবার শরীফে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। মাহফিলকে কেন্দ্র করে সুফীবাদ মতাদর্শের অনুসারী ও ভক্তদের সমাগম ঘটে। এ বছর শফিকুল ইসলাম, রেদোয়ান হাসান, জনি মিয়া, নামুন মিয়াসহ কয়েকজন এবার মাহফিল করতে দিবেনা মর্মে হুমকি দিচ্ছে। এমনকি মাজার ভেঙে ফেলার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে আমি ও আমার পরিবারকে মারপিট করার হুমকি দিয়েছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
অপর পক্ষের মুফতি রেদোয়ান হাসান বলেন, মরহুম মাওলানা হাবিবুর রহমানের কবরকে কেন্দ্র করে ইসলামবিরোধী কাজ হচ্ছে। কবর প্রদক্ষিণ, কবরের কাছে প্রার্থনা, নাচ-গান ও মাদকের আসর বসছে। এটিকে এলাকাবামি সমর্থন করছে না। ঘরোয়া ভাবে মিলাদ মাহফিল করতেই পারে। কিন্তু কবরকে মাজার বানিয়ে ইসলাম পরিপন্থি কাজ এলাকাবাসি মেনে নিচ্ছে না। একারণে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
উপজেলা নির্বাহি অফিসার বিকাশ চন্দ্র বর্মন বলেন, মাওলানা হাবিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী গত বছর পালিত হয়েছে। এবার কর্মসুচীতে পক্ষে-বিপক্ষ বাধা আসতেছে। একারণে শুধু মিলাদ মাহফিল হবে বলে শুনেছি।