নাগেশ্বরীতে বিধবা নারীর জমি জবরদখল ও বাড়ি উচ্ছেদের অভিযোগ দেবরদের বিরুদ্ধে

নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে এক বিধবা নারীর জমি জবর দখল করে ভোগ দখলের অভিযোগ
উঠেছে ওই তার স্বামীর ভাইদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও ওই নারীর বসতবাড়িতে হামলা ও ভাংচূর
করে বসতবাড়ি উচ্ছেদের চেষ্টাও করছে অভিযুক্তরা। এ নিয়ে চম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন
বিধবা নারীর পরিবার। এ বিষয়ে মোজাম্মেল হক, আব্দুল লতিফ সরকার, হাবিবুর রহমান ও
মৃত জয়মুদ্দিনের ছেলে ছকিয়ত আলীকে আসামী করে নাগেশ্বরী থানায় একটি
অভিযোগ দায়ের করেছেন উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়নের পশ্চিম বালাটারী এলাকার মৃত
মনসুর আলীর স্ত্রী ভুক্তভোগী মাজেদা বেগম (৫০)। অভিযোগে জানা যায় মাজেদা বেগমের
স্বামী মনসুর আলী ও তার বাবা ওমর আলী জীবিত থাকাকালীন সময়ে উপজেলার নেওয়াশী
ইউনিয়নের নেওয়াশী মৌজার, জেএল নং-১৬, খতিয়ান নং-১৫৮৯, দাগ নং-৭১০৭, ৭১৪১,
৭১৫২, ৭১৫৮ দাগসমূহে মোট ২৫৬ শতক জমি মনসুর আলী ও তার ভাই মোজাম্মেল হক,
আব্দুল লতিফ সরকার, হাবিবুর রহমানসহ ৫ ছেলের নামে রেজিস্ট্রি করে লিখে দেয়। এর
প্রেক্ষিতে মাজেদা বেগম উল্লেখিত বিবাদীদের বসতভিটার পাশাপাশি বসবাস করে
আসছে। এক সময় তার স্বামী ও শ্বশুরের মৃত্যু হলে মোজাম্মেলহকসহ অন্যান্য ভাই মিলে
তাদের ভাগের জমি জোরপূর্বক জবর দখল করে নিয়ে ভোগ দখল করে আসছে। এ নিয়ে মৃত
মনসুর আলীর স্ত্রী মাজেদা বেগম ও তার ছেলে মাহাবুর রহমান তাদের জমির ভাগ চাইতে
গেলে বিভিন্নভাবে হুমকী ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিল। একপর্যায়ে ওই জমির ভাগ বুঝে
চাওয়াকে কেন্দ্র করে মোজাম্মেলহকসহ অন্যান্য বিবাদীগন গেলো ১৮ জানুয়ারি মাজেদা
বেগমের বাড়িতে হামলা ও ভাংচূর করে এবং মা ছেলেকে মারপিট করে হত্যা চেষ্টা করে।
এছাড়াও মাজেদা বেগম ও তার মেয়েকে শ্লিলতাহানীর চেষ্টা করে এবং ছেলে মাহাবুরের
কাছে থাকা প্রায় ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি স্মার্টফোন ছিনতাই করে নিয়ে
যায়। এ সময় তাদের আর্ত চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এসে তাদেরকে উদ্ধার করে
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। ফলে সেই লোকজনসহ তার পরিবারের লোকজনকে
নানাভাবে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ ও প্রাণ নাশের হুমকী প্রদান করে। এরপর বিষয়টি
স্থানীয়ভাবে মিমাংসা হওয়ার কথা থাকলেও বিবাদীরা মিমাংসা না করে পূণরায় ২৫
জানুয়ারি সকালের দিকে আবারও তাদের বাড়িতে হামলা ও ভাংচূর করে আসবাবপত্রসহ প্রায়
৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি করে। এ সময় ছেলে মাহাবুর রহমান বাধা দিতে গেলে তাকেও বেধরক
পিটিয়ে আহত করেছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, মৃত মনসুর আলী, মোজাম্মেলগণের বেমাতা ভাই। তাদের বাবা জীতিব
থকতে তাদেরকে জমি লিখে দিলেও তাদের ভাগের জমি বুঝে দিচ্ছে না। উল্টো মনসুরের
বিধবা স্ত্রী ও তার ছেলে মেয়ে অসহায় ও গরিব হওয়ায় তাদেরকে উচ্ছেদের চেষ্টা করছে।
তারা ভীষণ অসহায় জীবনযাপন করছেন বলেও জানান স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে মামমলার বাদি মাজেদা বেগম জানায়, তার স্বামী মারা যাওয়ার ফলে দীর্ঘদিন ধরে
ভাই ভাগিরা তার পরিবারের উপর নানাভাবে অন্যায় অত্যাচার ও জুলুম নির্যাতন করে
আসছে। এমনকী তাদের বসতভিটা জবর দখলের চেষ্টাও করছে। নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকী
দিয়ে আসছে। এখন তিনি ছেলে-মেয়েকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। তিনি আরও
জানান তাদের এই জমি সংক্রান্ত কলহের কারনে তার ছেলে ও মেয়ের লেখাপড়া নিয়ে ভবিষ্যৎ
অনিশ্চিৎ হয়ে পড়েছে। তাই তিনি তার স্বামীর ন্যায্য পাওনা বুঝে পেতে সঠিক বিচার
প্রার্থনা করছেন।
নেওয়াশী ইউপি চেয়ারম্যান মাহাফুজার রহমান মুকুল বলেন, আমরা এ নিয়ে একাধিকবার
শালিসী বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি মিমাংসা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু মোজাম্মেল
হকসহ অন্যান্য অভিযুক্তরা মানেনি। মাজেদার স্বামী না থাকায় তারা ঠকানোর চেষ্টা
করছে। মূলতঃ ওই বিধবা নারী বৈষম্যের শিকার।
এ বিষয়ে মামলার বিবাদী মোজাম্মেল হকের সাথে কথা বলতে একাধিকবার ফোন দিলেও
তিনি রিসিভ করেননি। নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ রেজাউল করিম অভিযোগের
বিষয়ে বলেন, প্রতিদিন অনেকগুলো অভিযোগ জমা হয়। মাজেদার অভিযোগ কোন
অফিসারকে তদন্ত করতে দেয়া হয়েছে এই মূহুর্তে বলা মুশকিল, রেজিষ্টার দেখে বলতে হবে,
আমি বাইরে আছি। এটার অগ্রগতি সম্পর্কে জেনে পরবর্তিতে বলতে পারবো।