আগামীর বাংলাদেশ হবে সকলের বাংলাদেশ, একটি দল বা গোষ্টির বাংলাদেশ নয়--আমির খসরু মাহমুদ বিএনপি নেতা

কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তা নদীর পাড়ে সমাবেশে
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে সকলের বাংলাদেশ, একটি দল বা গোষ্টির বাংলাদেশ নয়। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার থেতরাই পাকার মাথায় অবস্থিত তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি আয়োজিত অবস্থান কর্সূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
আমীর খসরু বলেন, আজকের এই দাবি আমাদের প্রাণের দাবি-আন্তর্জাতিকভাবে ন্যায়নীতির ন্যায্য দাবি। প্রত্যেকটি দেশে এই ধরনের যখন নদী বিভিন্ন দেশ দিয়ে প্রবাহিত হয়, সেখানে এগুলো পরিচালনার জন্য সবগুলো দেশের সমন্বয়ে হয় ও ব্যবস্থাপনা থাকে যৌথ। আজকের সেই ব্যবস্থপনা ব্যর্থ হয়েছে। আজকের এই দাবি হচ্ছে সকল ব্যবস্থপনা ফিরিয়ে আনার। তিস্তা নদীর পানি বাংলাদেশের মানুষের ন্যায্য দাবি। এই দাবি পূরণ করতে হবে ভারতকে।
তিনি আরো বলেন, আমরা দেখেছি যখনই তিস্তার দাবি আসে তখনই পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ ফেনী নদীতে সাতটি চুক্তি হয়েছে। সেখানে ভারতের লাভ হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে যেখানে পানি পাওয়ার কথা সেখানে পিছিয়ে দিয়ে মরুভূমি করা হয়েছে। তিস্তা নদীকে ঘিরে মানুষের জীবন বাঁচার সংগ্রাম, সেখানে জীব বৈচিত্রও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, তিস্তা নদীতে পানি না থাকায় ১৫লক্ষ টন চাল ও গম কম উৎপাদন হচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফল শুরু হয়ে গেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের তিস্তা বাচাঁও আন্দোলনের যে ডাক দিয়েছেন,এই ডাক বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছে। পানি যত দিন না আসবে ততদিন আন্দোলন অব্যাহত থাকবে ‘জাগো বাহে তিস্তা বাচাই’।
যে কোনো দাবি বাস্তবায়ন করতে গেলে জনগণের সমর্থন ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। বিএনপি জনগণের সর্মথন নিয়ে এই আন্দোলন শুরু করেছে। বিএনপি জনগণের সর্মথন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে, যা আমাদের আগামী দিনে কাজে লাগবে।
জানা যায়, ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তা নদী বেষ্টিত লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ১১টি পয়েন্টে সমাবেশ, পদযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজন করে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি। দুইদিন ব্যাপী কর্মসূচির আজ শেষ দিন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান এসব সমাবেশে ভার্চ্যুয়াল বক্তব্য্ রাখবেন ।
জাগোবাহে তিস্তা বাঁচাই উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের পাকার মাথায় অবস্থিত তিস্তা নদীর তীরবর্তীতে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি উলিপুর শাখার আয়োজনে কর্মসূচিতে সাবেক উলিপুর বিএনপির সভাপতি হায়দার আলী মিয়ার সভাপতিত্ব করেন।
সাবেক উলিপুর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান বুলবুলের সঞ্চালনায় বক্তব্য্রাখেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, সদস্য সচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ, যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম বেবু, হাসিবুর রহমান হাসিব প্রমুখ। পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান ভার্চুয়ালি বক্তব্য্ রাখেন।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান,
তিস্তা নদী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদে মিলিত হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ৪১৪কিলোমিটার। বাংলাদেশে ১১৩কিলোমিটার। বাংলাদেশের রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট,গাইবান্ধা এবং নীলফামারী জেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এরমধ্যে কুড়িগ্রামে ৪০কিলোমিটার তিস্তা নদী। কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীতে ঝুকিপূর্ণ পয়েন্ট ২৭কিলোমিটার। অতি ঝুকিপূর্ণ ২২কিলোমিটার। প্রতিবছর গড়ে ২শ মিটার বা ৩শ হতে ৪শ ফুট করে নদী ভেঙ্গে বসতবাড়ি,কৃষি জমি বিলিন হচ্ছে। তিস্তা নদীর স্থায়ীভাবে দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৫ কিলোমিটার বøক দিয়ে তীররক্ষা প্রকল্প এবং চলতি বছর অতি ঝুকিপূর্ণ এলাকায় জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধে ৬কিলোমিটার পয়েন্টে ৪০কোটি টাকার প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।