৮ চৈত্র, ১৪৩১ - ২৩ মার্চ, ২০২৫ - 23 March, 2025

১২ বছরের নুরুজ্জামানের ঘাড়ে সংসারের ভার

আমাদের প্রতিদিন
2 weeks ago
62


(খানসামা ও বীরগঞ্জ)প্রতিনিধি:

বাদাম না কিনলে, না খেয়ে থাকতে হবে বাদাম বিক্রির টাকায় চলে সংসারের চাকা,কাঁধে বাদামের ঝুলি। ছুটে চলেছেন এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত। যে বয়সে পথ ধরার কথা ছিল স্কুলের বারান্দায়, সে বয়সে টানছেন সংসার নামক ঘানি। মাঠে যখন তার বয়সী ছেলেগুলো খেলছিল, সে তখন বাদাম বিক্রিতে ব্যস্ত। মাত্র ১২ বছর বয়সী নুরুজ্জামান জীবনযুদ্ধে এক অক্লান্ত হার না মানা সৈনিক। জন্মের পর থেকেই দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত এই কিশোরের জীবন অন্যদের চেয়ে ভীষণ আলাদা। সে উত্তরের জেলা দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের কাজল গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে।

তার বাবা শারীরিক প্রতিবন্ধী, মা মানসিক ভারসাম্যহীনের মতো, সংসারের উপার্জনক্ষম কেউ নেই। ছোট্ট বয়সেই নুরুজ্জামান হয়ে উঠেছে পরিবারের একমাত্র ভরসা।

জানা গেছে, প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে সে বাদামের ঝুড়ি নিয়ে গিয়ে স্থানীয় বাজার থেকে ৩০০ টাকায় আড়াই কেজি কাঁচা বাদাম কিনে আনে, এসব বাদাম ভেজে দেন তার দাদি। এরপর বাদাম নিয়ে বের হয় যায় পৌর শহরের অলিগলিতে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রোদ-বৃষ্টি-শীত উপেক্ষা করে বাদাম বিক্রি করে সে। কোনো দিন ৪৫০, আবার কোনো দিন ৫০০ টাকার বাদাম বিক্রি হয়। খরচ বাদে ১৫০-২০০ টাকা লাভ হয় তার, সেই টাকায় চলে সংসার।

কান্না কণ্ঠে নুরুজ্জামান বলেন, বাবা-মা দুজনেই অসুস্থ, দাদি আমার বাদাম ভেজে দেন, সেই সাথে রান্না করেন। আমাদের থাকার জায়গা দুই শতক জমি ব্যতীত আর কিছু নেই। বাদাম না কিনলে, না খেয়ে থাকতে হবে। ছোট বোন মাদরাসায় পড়ে, তার খরচও আমাকে চালাতে হয়।

এ সময় নুরুজ্জামানের দাদি বলেন, এই বয়সে ছেলেটার স্কুলে থাকার কথা ছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সংসারের ভার এখন তার ছোট্ট কাঁধে। এটা ভেবে খুব কষ্ট লাগে।

স্থানীয় সাদেকুল ইসলাম বলেন, ছেলেটা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করে। আমরা চেষ্টা করি সাহায্য করতে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। যদি সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসতেন, তাহলে হয়ত তার জীবনটা এমন হত না।

স্থানীয় মসজিদের ইমাম মো. মিজানুর রহমান বলেন, নুরুজ্জামান আমার প্রতিবেশী। আমিও যথাসাধ্য সাহায্য করি। কিন্তু এই বয়সী ছেলেদের পড়াশোনা করার কথা, খেলার মাঠে সময় কাটানোর কথা। দারিদ্র্য আর পারিবারিক সংকট তাদের শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করছে। যদি সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এগিয়ে আসতেন, তাহলে হয়ত সে আবার পড়ালেখায় ফিরতে পারত।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রুস্তম আলী বলেন, এই পরিবারটি অত্যন্ত অসহায়। আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী সাহায্য করি এবং সরকারি কোনো অনুদান এলে তাদের দেওয়ার চেষ্টা করি।

বীরগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘নুরুজ্জামানের বাবা প্রতিবন্ধী ভাতা পান। তবে এই পরিবারের আরো সহায়তা প্রয়োজন। আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা তাদের সহযোগিতার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব।’

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth