৮ চৈত্র, ১৪৩১ - ২৩ মার্চ, ২০২৫ - 23 March, 2025

রংপুরে বিশ্ববিদ্যালয়  শিক্ষার্থীকে মারধোর,সড়ক অবরোধ: সেনাবাহিনীর লাঠিচার্জ আহত ১০

আমাদের প্রতিদিন
1 week ago
71


মহানগর প্রতিবেদক:

রংপুর নগরীর নবাবগঞ্জ বাজারের সামনে দুই শিক্ষার্থীতে ব্যবসায়ীর মারধোরের ঘটনায় তুলকালাম কান্ড ঘটেছে। এ ঘটনায় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করলে সেনাবাহিনী তাদের বেধড়ক লাঠিচার্জ করে। পরে সেনবাহিনী ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ দুঃখ প্রকাশ করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনায় অন্তত: ১০ জন আহত এবং ১ জনকে আটক করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার ( ৮ মার্চ) রাত ১০ টার দিকে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষার্থী ট্রিপল ই বিভাগের  চতুর্থ বর্ষের শরীফুল ইসলাম ও সৌরভ সরকার নগরীর নবাবগঞ্জ বাজারের সামনে কেনাকাটা করতে যায়। এসময় তারা ফুটপাতে দাড়ালে  ফুটপাতের দোকানীরা তাদের সরিয়ে দেয়। তারা পাশের সিটি পোশাক ঘরের সামনে দাড়ালে মালিক ওসমানগণি তাদেরকে ফুটপাত থেকে সরতে বললে এ নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ওই দোকানের  কর্মচারী তাদের বেধড়ক মারপিট করে।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে  রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে সেখানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সিটি পোশাক ঘরের মালিক  ওসমানগনিকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় সেনাবাহিনী  ঘটনাস্থলে আসে। তারা এসেই শিক্ষার্থীদের বেধড়ক লাঠিপেটা করলে পরিস্থিতি আরও জটিলতায় রুপ নেয়। এনিয়ে সেনাবাহিনীর সাথে তর্কে জড়ায় শিক্ষার্থীরা। তারা সেখানেই বসে পড়েন। খবর শুনে সেখানে আসেন চেম্বারসহ ব্যবসায়ি নেতৃবৃন্দ। পরে সেনাবাহিনী ও ব্যবসায়ী নেতারা এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেয়। এ ঘটনায় ১ জনকে আটক করে নিয়ে গেছে পুলিশ। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এসে শিক্ষার্থীদের বাসে করে নিয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা ফুটপাত থেকে ব্যবসায়িদের উচ্ছেদ করার দাবি জানান।

এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। দুইজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাতেই হাসপাতালে আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে যান ভিসি ড. শওকাত আলী।

 ভূক্তভোগি  আহত দুই শিক্ষার্থী শরীফ ও সৌরভ জানান, আমরা  নবাবগঞ্জ বাজারের পুরো ফুটপাত ব্যবসায়ীরা দখল করে রেখেছেন। পোশাক দেখতে হলে ফুটপাতে দাড়িয়ে দেখতে হয়। আমরা এক দোকানে  কেনাকাটার জন্য দরদাম করে সেখানে দাড়ালে তারা সরে যেতে বলেন। আমরা সেখান থেকে সরে সিটি পোশাক ঘরের সামনের ফুটপাতে দাড়াই। এসময় ওই দোকানের মালিক আমাদেরতে সেখানে থেকে সরতে বলে। আমরা সরে সামনে দাড়ালে তিনি কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাদের বেধড়ক মারতে থাকেন। আমরা  এর প্রতিবাদ করে তাদের বিশ্ববিদ্য্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয় দেই। তখন তিনি আরও তেড়ে আসেন এবং খারাপ ভাষায় গালি দেন এবং আরও মারপিট করতে থাকেন।  বিষয় আমরা তখন আমাদের বন্ধুদের জানাই। এ ঘটনায় এক শিক্ষার্থী শরীফের আঙ্গুল ভেঙ্গে গেছে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন বলেন,  আমরা খবর পেয়ে এসে রাস্তা অবরোধ করার পরপরই পুলিশ আসে। পুলিশ দোকানদারকে আটক করে এবং দোকান সিলগালা করার নির্দেশ দিলে আমরা অবরোধ তুলে নেই। এর একমিনিটের মধ্যেই সেনাবাহিনী এসে কারো কাছে কিছু না শুনেই বেধড়ক লাঠিচার্জ করে। এতে আমাদের ১০/১৫ জন ছাত্র ভাই আহত হয়। আমরা রাস্তায় বসে যাই। তখন সেনাবাহিনী দুঃখ প্রকাশ করলে আমরা অবরোধ তুলে নেই। তিনি বলেন, ফুটপাত পরিস্কার করতে হবে। ফুটপাতে দোকানীরা ব্যবসা করবে, কেউ সেখান দিয়ে হাটতে পারবে না। সেখান দিয়ে হাটলে আঘাক করবে এটা ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা মানবো না।

রংপুর চেম্বার প্রেসিডেন্ট ও নবাবগঞ্জ বাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আকবর আলী জানান, ঘটনা শুনে এসে দেখি সেনাবাহিনী শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করছে। তখন আমরা ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ তাদেরকে বোঝাতে সক্ষম হই। পরে তারা ভুল বুঝতে পারেন এবং ক্ষমা চান। আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি।  তারা চলে গেছে। এ ঘটনার সাথে যে ব্যবসায়ী জড়িত আমরা তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।

রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানার ওসি আতাউর রহমান জানান, এ ঘটনায় ওসমান গণি নামের এক ব্যবসায়ীকে আমরা আটক করে থানায় নিয়ে এসেছি। পরিস্থিতি শান্ত আছে।

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেস্টা ড. ইলিয়াস প্রামাণিক জানান, সেনাবাহিনীর লাঠিচার্জে আমাদের ১০ শিক্ষার্থী এবং ব্যবসায়ীদের মারপিটে ২ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। সেনাবাহিনী এবং ব্যবসায়িরা এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন।  বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ঘটনায় মামলা করবে। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে ভিসি নির্দেশ দিয়েছেন।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth