সমস্যা হবে জানতাম’— রংপুর জেলা পরিষদের CEO-এর মন্তব্য ঘিরে সমালোচনার ঝড়

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী খেয়াঘাট ১৪৩২ বাংলা সনের জন্য প্রায় ২৬ লাখ টাকায় এক বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারা দিয়ে রাজস্বে লাভবান হয়েছে সরকার, তবে স্থানীয় জনগণের ওপর বেড়েছে আর্থিক চাপ। এর মধ্যেই জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) মামুন-অর-রশীদের একটি মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) খেয়াঘাট পরিদর্শন ও মতবিনিময় সভায় গিয়ে তিনি বলেন, ইজারার মূল্য ১৫ লাখ থেকে ২৬ লাখে উঠে গিয়েছিল। তখনই বুঝেছিলাম সমস্যা হবে।
নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারা দিলে তা নীতিগতভাবে ইতিবাচক ধরা হয়। কিন্তু সেই বাড়তি দরকে জেলা পরিষদের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা যখন “সমস্যা হবে বুঝেছিলাম” বলে মন্তব্য করেন, তখন তা প্রশাসনের অবস্থানকে দ্বিমুখী করে তোলে।
সচেতন নাগরিক মাহফুজার রহমান মাহফুজ প্রশ্ন তোলেন, যখন তারা বেশি রাজস্বকে সমস্যা বলেন, তখন প্রশ্ন উঠে—ইজারার আগে সেটা কেন বোঝেননি? যদি বোঝেন, তাহলে ইজারা বাতিল করেননি কেন?
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইজারার আগে টোলহার নির্ধারণ না করেই দরপত্র আহ্বান করা হয়। ফলে এখন ইজারাদার নিজস্বভাবে টোল আদায় করছেন। এতে জনদুর্ভোগের আশঙ্কা বাড়ছে।
নোহালী ইউনিয়নের শিক্ষক মো. আব্দুর রশিদ বলেন, আমার ছাত্ররা স্কুলড্রেস পরে এলেও টোল দিতে হচ্ছে। এটা শিক্ষার পথকে বাঁধাগ্রস্ত করা। প্রশাসন যদি ইজারা দেয়, তাহলে মানবিক দিকটাও দেখতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইজারাদার আবু তালেব বলেন, আগে যেভাবে টোল আদায় করতাম, এখনো সেভাবেই করছি। জন প্রতি ২০ টাকা করে প্রতি বার টোল নিচ্ছি।
প্রশাসনের এক অভিজ্ঞ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইজারা মানেই ব্যবসায়িক চুক্তি। আগে টোল নির্ধারণ না করে টেন্ডার দিলে তখনই জনস্বার্থ হুমকিতে পড়ে। এখন টোল নির্ধারণ করতে গিয়ে জনগণের মুখ চেয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে—এটা প্রশাসনিক দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি। তিনি আরও বলেন, যদি আগে থেকেই অনুমান করা যেত যে সমস্যা হবে, তাহলে সেই ২৬ লাখ টাকার ইজারা বাতিল করা উচিত ছিল।
জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এসব বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা আসেনি। তবে স্থানীয়দের দাবি, বিষয়টি নিয়ে স্বচ্ছ তদন্ত ও গণমুখী টোলহার নির্ধারণ করতে হবে।