চোরাকারবারী রবিউলের ২দিনের রিমান্ড মঞ্জুর: সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি একাধিক আসামীর নাম উল্লেখ করলেও মামলায় নেই
কুড়িগ্রামে চাঞ্চল্য স্বর্ণ চোরাচালান: গডফাদাররা পর্দার আড়ালে
আহসান হাবীব নীলু,কুড়িগ্রাম:
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে এক কোটি ৪০ লাখ টাকা মুল্যের স্বর্ণসহ চোরাকারবারী রবিউল ইসলামের গ্রেপ্তারের ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়েগেলেও পুলিশ এর মুল হোতাকে সনাক্ত করতে পারেনি। এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এরই পেক্ষিতে বৃহস্পতিবার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফুলবাড়ী থানর অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) সারোয়ার হোসেন এ মামলার একমাত্র আসামী রবিউল ইসলামের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। কুড়িগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সংশ্লিষ্ট কোর্টের বিজ্ঞ বিচারক মোঃ মজনু মিয়া দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। রিমান্ড মঞ্জুর হলেও তদন্ত কর্মকর্তা আসামীকে রিমান্ডে নেয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখা কর্মকর্তা প্রদীপ রায়। চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্ত নিয়ে পুলিশের গড়িমসি এবং ঢিলেঢালা কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষ হতাশ। বিজ্ঞ জনের অভিমত বিলম্বের সুযোগে স্বর্ণ চোরাকারবারী চক্রের মুল হোতারা পুলিশের ধরা ছোয়ার বাইরে আতœগোপনে চলে যাবে।
লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোফাজ্জাল হোসেন আকন্দ ১৪টি স্বর্ণের বারসহ এক পাচারকারীকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে গত শুক্রবার (১২/০৫/২৩) বিকালে নিজ দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে জানান, আসামী স্বীকারছেন এ স্বর্ণ চোরাচালানের মুল হোতা ফুলবাড়ীর ব্যবসায়ী সুধীর চন্দ্র সরকার ভানু। এছাড়া দেশের আরো কয়েকজন সহযোগী ছাড়াও ভারতের তিন জন রয়েছে। এর মধ্যে ভারতে আছেন তার মামা মাহমুদুর রহমান। এই মাহমুদুর রহমান ও একরা নামে দুজনের কাছে ইতি পূর্বে রবিউল স্বর্ণের একটি চালান পাঠিয়েছেন। এতো তথ্য উপাত্ত থাকবার পরও মামলায় রহস্যজনক কারণে শুধুমাত্র রবিউলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
সংবাদ সমে¥লনে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করে এ মামলার বাদী ফুলবাড়ী কাশিপুর বিজিবি বিওপি ক্যাম্পের সুবেদার আশরাফ হোসেন বলেন, ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোফাজ্জাল হোসেন আকন্দ স্যার এসব বলেছেন সত্য। কিন্তু আমার উপর নির্দেশনা যা ছিলো সে মোতাবেক মামলার এজাহার দিয়েছি। এজাহারের বাইরে আমার কোন কথা নেই। ঘটনাস্থলে ৪৪টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হলেও সিজার লিস্টে ১৪টি উল্লেখ করা হয়েছে স্থানীয়দের এমন অভিযোগের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমি’ (সুবেদার মামলার বাদি) কোন কথা বলবো না। যা জানার স্যারের কাছ থেকে জেনেনিন বলেই ফোন কেটেদেন।
বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে এ রিপোর্ট লেখা সময় পর্যন্ত লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোফাজ্জাল হোসেন আকন্দ এর সরকারি নম্বর-০১৭৬৯৬০২৩৩০ তে অনেকবার ফোন দিলেও তা রিসিভ হয়নি।
এ ব্যাপারে সুধীর চন্দ্র সরকার ভানু তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কে কি বলেছেন তা আমার জানা নেই। আমি একজন ব্যবসায়ী মানুষ। ঠিকাদারি, সার, টিসিবি এবং মজুদদারী ব্যবসা করি। আমার স্বর্ণের ব্যবসাও নেই। আমি পাচারকারীও নই।
একটি গোয়েদা বিভাগের তথ্য সূত্রে জানাযায়, রবিউল ইসলামের সাথে অন্যতম সহযোগী ফুলবাড়ীর আবুল কালাম আজাদ,আবু তালেব, সোহেল মিয়া ও খবির উদ্দিন। এই চক্রটি দীর্ঘদিন থেকে স্বর্ণ চোরাচালানসহ অবৈধ হুন্ডির ব্যবসা করে আসছে ফুলবাড়ী সীমান্তে।
এছাড়া সীমান্তবর্তী একটি সূত্রের দাবি মতে, সীমান্তে রবিউলকে আটকের সময় স্বর্ণের বার ছিলো ৪৪টি পরে তা চৌদ্দতে নেমে আসে।
কুড়িগ্রাম জেলা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সভাপতি খাইরুল আনম জানান, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বিভাগের সদস্যদের উদাসীনতা এবং অবহেলার কারণে ফুলবাড়ী সীমানÍ স্বর্ণ, অস্ত্র এবং মাদক পাচারের প্রধান রুটে পরিনত হয়েছে। সম্প্রতি অস্ত্র ও স্বর্ণের চালান ধরা পড়লেও সিন্ডিকেটের মুল হোতারা থাকছে ধরা ছোয়ার বাইরে। অথচ স্বর্ণ চোরাকারবারী হিসাবে সুধীর চন্দ্র সরকার ভানু সহ অনেকের নাম সাধারণ মানুষের মুখমুখে। পুলিশের তদন্ত কার্যক্রম ঢিলেঢালা গতিতে চলায় মানুষের মনে নানা সন্দেহ দানাবাধছে।
ঊল্লেখ্য ১৪ টি স্বর্ণের বারসহ রবিউল ইসলাম (৩২) নামে এক স্বর্ণ পাচারকারী যুবককে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি’র) টহলরত দল শুক্রবার (১২/০৫/২৩) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর সীমান্ত দিয়ে পাচারের সময় মোটরসাইকেলসহ হাতেনাতে আটক করে।
এ অঞ্চলে দায়িত্বরত লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোফাজ্জাল হোসেন আকন্দ ১৪টি স্বর্ণের বারসহ এক পাচারকারীকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে ঐদিন বিকালে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত উপস্থাপন করেন। জানান, কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ধর্মপুর সীমান্তের আন্তাজার্তিক মেইন পিলার নং ৯৪২এর সাব পিলার ৮ এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় টহলরত বিজিবি জওয়ানদের সন্দেহ হওয়ায় তাকে আটক করে। এসময় তার কাছে সংরক্ষিত ১৪টি স্বর্ণের বার জব্দ করা হয়। আটক রবিউল ইসলাম ওই এলাকার ধর্মপুর গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে। পরে তার বিরুদ্ধে ফুলবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন সুবেদার আশরাফ হোসেন।
এ ব্যাপারে ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ ফজলুর রহমান জানান, মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা থানর অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) সারোয়ার হোসেন। তদন্ত চলছে। গড ফাদারদের সনাক্ত করতে আসামী রবিউল ইসলামের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করায় কুড়িগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোঃ মজনু মিয়া’র কোর্টে। বিজ্ঞ বিচারক দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। শীঘ্রই রিমান্ডে নেয়া হবে আসামীকে।