১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ - ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ - 26 April, 2024
amader protidin

কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের সুফল মিলছে না কুড়িগ্রামবাসীর!

আমাদের প্রতিদিন
1 year ago
210


কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ  

দারিদ্রপীড়িত কুড়িগ্রাম জেলার সাথে ঢাকার সরাসরি যোগাযোগের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপহার কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের সুফল মিলছে না কুড়িগ্রামবাসীর। টিকিট সংকট আর শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে উত্তরের অবহেলিত কুড়িগ্রাম জেলার মানুষ।

সরজমিনে দেখাযায়,কুড়িগ্রাম রেল ষ্টেশনে ইঞ্জিন চালুরত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রেনে হুমড়ি খেয়ে মানুষজন চড়ছে। ট্রেনে জায়গায় না থাকায় দরজায় অনেকে দাড়িয়ে পড়েছেন। শীতের কনকনে ঠান্ডায় বাঁচ্চা,লাগেজসহ ট্রেনে উঠতে বেগ পেতে হচ্ছে যাত্রীদের। কষ্ট করে হলেও সন্তান,ব্যাগ ইত্যাদি নিয়ে গাদাগাদি করে চড়তে হচ্ছে ট্রেনে। সেখানে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শিশু,নারী আর বৃদ্ধদের। লাল,সবুজ রং সম্বলিত ট্রেনটি আসলে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ছিল না। এটি লালমনিরহাট থেকে আনা একটি শাটল ট্রেন। সকাল ৬টায় কুড়িগ্রাম রেল স্টেশনে পৌছানোর সময় থাকলেও কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস আসেনি। ফলে ট্রেনের দেরি হওয়ায় শাটল ট্রেন দিয়ে ঢাকাগামী যাত্রীদের রংপুর রেল স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরবর্তিতে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস আসলে সেখান থেকে যাত্রী নিয়ে চলে যাবে ঢাকার উদ্দেশ্যে। এমন দুর্ভোগ কুড়িগ্রামবাসীর জন্য নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একটি টিকিটের জন্য কুড়িগ্রাম রেল স্টেশনে লম্বা লাইনে নারী-পুরুষ কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে কেউ মধ্য রাত আবার কেউ ভোর বেলা থেকে দাঁড়িয়ে। এত কষ্ট করেও সোনার হরিণ খ্যাত ট্রেনের টিকিট পাওয়া যেন ভাগ্যের ব্যাপার। হাজারও কষ্ট দূর হয় টিকিট পেয়ে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও টিকিট প্রাপ্তির এই কষ্ট দূর হয়নি কুড়িগ্রামবাসীর। ফলে ট্রেন যাত্রায় দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না দারিদ্রপীড়িত খ্যাত জেলার মানুষের।

ঢাকাগামী যাত্রী মোজাম্মেল হক বলেন,সন্তান নিয়ে শাটল ট্রেনে দাঁড়িয়ে থেকে যেতে হচ্ছে। কখন কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস আসবে সেটাও অনিশ্চিত। পরিবার নিয়ে একটু আরাম দায়ক যাত্রা করব সেটারও উপায় নেই। আমাদের দুর্ভোগ তুলে ধরার মতো কেউ নেই।

আমিনুল ইসলাম বলেন,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া উপহার কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের সুফল আমরা পাচ্ছি না। শিডিউল বিপর্যয়ের অযুহাতে শাটল ট্রেন দিয়ে আমাদের আনা-নেয়া হচ্ছে। শাটল ট্রেনে করে রংপুর গিয়ে আমাদেরকে নানান ধরনের হয়রানি স্বীকার হতে হয়। বারবার ট্রেনে ব্যাগ,বস্তাসহ সন্তানদের নিয়ে রংপুর রেল স্টেশনে ওঠানামা করতে হয়। কুলি খরচ বাড়তি দিয়ে হয়। শতশত যাত্রী গিয়ে রংপুর ঘন্টার পর ঘন্টা বিরম্বনায় থাকতে হয়। শাটল ট্রেন দিয়ে এক ষ্টেশন থেকে অন্য ষ্টেশনে যাত্রী নিয়ে গিয়ে যেমন কুড়িগ্রাম ষ্টেশন কেন্দ্রিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তেমনি সরকারের বাড়তি জ¦ালানী ব্যয় হচ্ছে। রেল কর্তৃপক্ষ সুকৌশলে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস বন্ধ করার একটা ষড়যন্ত্র বলে মনে হয়।

যাত্রী রুনা খাতুন বলেন,আমার জানা মতে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ছেড়ে যায় সাড়ে ৭টার দিকে। এখন এসে শুনলাম কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস আসেনি। তার বদলে শাটল ট্রেনে করে যাত্রী নিয়ে গেছে। এখন বাড়তি টাকা খরচ করে রংপুর গিয়ে ট্রেন ধরতে হবে।

টিকিট ক্রেতা গফুর আলী বলেন,এই শীতের মধ্যে আমরা চারজন মানুষ ভোর ৪টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছি। দুয়েকজন তারও আগে এসেছে টিকিট সংগ্রহ করতে। অনলাইনে তো টিকিট পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে ঠান্ডা উপেক্ষা করে লাইনে দাড়িয়েছি। বাসে ভাড়া বেশি আমাদের জন্য ট্রেনের যাওয়াটাই মঙ্গল।

প্রভাষক আব্দুল কাদের বলেন,কুড়িগ্রাম জেলা বরাবরই বঞ্চনার স্বীকার হয়ে আসছে। ট্রেনের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। টিকিটের তথ্য তুলে ধরলেই বোঝা যাবে কিভাবে আমরা বঞ্চনার স্বীকার হই। কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস কুড়িগ্রাম থেকে উৎপত্তি হলেও এর আসন সংখ্যা মাত্র ১২১টি। এরমধ্যে অনলাইনে ৬০টি বিক্রি হয়। এরমধ্যে শোভন-৫০টি, এসি-৬টি এবং কেবিন-৪টি। বাকি ৬১টি কাউন্টারের জন্য। আর রংপুর স্টেশনের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৫২টির মধ্যে অনলাইনে-৭৩টি বিক্রি হয়। এরমধ্যে শোভন-৫৬টি,এসি-১৪টি,কেবিন-৩টি। অথচ রংপুর এক্সপ্রেসের জন্য কুড়িগ্রাম রেল স্টেশনে টিকিট বরাদ্দ ৪০টি। এরমধ্যে অনলাইনে ১৯টির মধ্যে ১৭টি শোভন,এসি-২টি এবং কেবিন বরাদ্দ নেই। অপরদিকে রংপুর ষ্টেশনে ২০২টি বরাদ্দের মধ্যে অনলাইনে ১০১টি। যার মধ্যে শোভন-৭৮টি,এসি-২১টি এবং কেবিন-২টি বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। জেলার জন্য কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের বরাদ্দকৃত আসন গুলোর মধ্যে অনলাইনে টিকিট অন্য স্টেশনে যাত্রীরা কিনে নেন। শুধুমাত্র নামেই কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসে পরিণত হয়েছে এই  ট্রেন।

সাংস্কৃতিক কর্মী মামুন আহমেদ বলেন, কুড়িগ্রাম জেলার জন্য ট্রেন চালু হলেও পর্যাপ্ত টিকিট সুবিধা রাখা হয়নি।  কুড়িগ্রাম থেকে সকাল-রাতে প্রায় দু’শতাধিক কোচ চলাচল করে ঢাকা,চট্টগ্রাম, সিলেট,কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এসব বাসে গড়ে প্রতিদিন ৬/৭হাজার মানুষ চলাচল করে থাকে। ঈদ,পুঁজা কিংবা সরকারি কোন বিশেষ ছুটিতে এই সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। সেই তুলনায় কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের আসন সংখ্যা আমাদের জন্য অত্যন্ত নগণ্য।

টিকিট সংকট আর ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে প্রায় প্রতিদিনেই ঢাকা,রংপুর,বগুড়াসহ অন্যান্য জায়গায় যাওয়া যাত্রীদের বিড়াম্বনায় পড়তে হয়। এতে করে সময়,অর্থ দুটোই নষ্ট হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম রেল স্টেশনের বুকিং সহকারি মনিরুজ্জামান লিটন বলেন,কুড়িগ্রামের জন্য মাত্র ১২১টি আসন নির্ধারিত হওয়ায় যাত্রীর তুলনায় যা অপ্রতুল। টিকিট কেনার জন্য অনেকেই রাত ১২/১টা থেকে লাইন ধরে থাকে।সকাল ৮টায় টিকিট বিক্রি শুরু করলে সাড়ে ৮টা হতে ৯টার মধ্যে শেষ হয়। এরপরও অনেকে দীর্ঘ সময় লাইনে দাড়িয়ে থেকেও টিকিট না পেয়ে চলে যান। কুড়িগ্রামের জন্য সীমিত আসন হওয়ায় টিকিট বিক্রিতে হিমশীম খেতে হয়।

বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজশাহী মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) অসীম কুমার তালুকদার কুড়িগ্রামবাসীর জন্য কোন সুখবর দিতে পারলেন না। তিনি জানালেন নতুন বগি না আসা পর্যন্ত টিকিট সংকট দূর করা সম্ভব নয়। নতুন বগি আমদানী হলেও সংযোজন করে আসন বৃদ্ধি করা ছাড়া বিকল্প কোন উপায় নেই।

 

 

 

 

 

 

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়