১৮ বৈশাখ, ১৪৩১ - ০১ মে, ২০২৪ - 01 May, 2024
amader protidin

বেপরোয়া ভুলের মাশুল ভোক্তা আর কত দেবে

আমাদের প্রতিদিন
1 year ago
368


বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অনিয়ম

টানা উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় নানাভাবে কাটছাঁট করেও বেশির ভাগ মানুষ যখন ব্যয়ের পাগলা ঘোড়ার সঙ্গে আয়ের লাগাম টানতে পারছেন না, তখনই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল। এর ফলে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোর ওপর বাড়তি খরচের যে চাপ পড়ল, তা শেষ পর্যন্ত ভোক্তার ঘাড়েই গিয়ে চাপবে। অথচ জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে মূল্যস্ফীতি কমানোর তাগিদ ও পরামর্শ দিয়ে আসছেন অর্থনীতিবিদেরা। বিদ্যুতের এ মূল্যবৃদ্ধিতে জীবনযাপনের অত্যাবশ্যকীয় সব পণ্য ও সেবায় মূল্যস্ফীতির আরেকটি ঢেউ নিশ্চিতভাবেই আছড়ে পড়বে।

জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভুল নীতি এবং অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতার মাশুল আর কত গুণবেন নাগরিকেরা? গত এক যুগে প্রাথমিক জ্বালানির উৎস নিশ্চিত না করেই একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।

জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বল্প মেয়াদে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হলেও এক যুগ পরও সেগুলোর মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে তীব্র সমালোচনা থাকার পরও সেগুলোর জন্য গত ১০ বছরে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে সরকারকে। টেকসই ব্যবস্থা গড়ে না তোলায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো সংকটে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের চরম দুর্বলতাগুলো খোলাসা হয়ে পড়েছে। এ বছরের জুন মাসে গ্যাসের দাম ও আগস্ট মাসে জ্বালানি তেলের দাম এক ধাপ বাড়ানো হয়েছে। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত লোডশেডিং করতে হয়।

শীত মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকায় নভেম্বরে এসে লোডশেডিং পরিস্থিতির উন্নতি যখন হচ্ছে, সে সময়েই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এসেছে। ‘গ্রাহক পর্যায়ে এখনই বিদ্যুতের দাম বাড়বে না বলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা কতটা বাস্তবসম্মত? বর্ধিত দাম অনুযায়ী, বিতরণ সংস্থাগুলোকে আগামী মাস থেকে প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ২০ পয়সায় কিনতে হবে। আগে এ দাম ছিল ৫ টাকা ১৭ পয়সা। বিতরণ সংস্থাগুলো বলছে, বাড়তি দামে বিদ্যুৎ কিনতে হলে লোকসানে পড়তে হবে।

এরই মধ্যে একটি সংস্থা বিইআরসির কাছে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন করেছে। এর ফলে কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ ঠেকিয়ে রাখা গেলেও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়বেই। ভোক্তাকে প্রকৃত তথ্য দেওয়াটাই কি সমীচীন নয়? বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ-সংকটে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা থেকে ঋণ পেতে চাইছে সরকার। ঋণ পাওয়ার শর্ত অনুযায়ী বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ভর্তুকি কমানো হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্নটাও জনমনে তৈরি হয়েছে। এ বিষয়েও সরকারের স্বচ্ছ ও পরিষ্কার তথ্যটা জানানো প্রয়োজন।

বাংলাদেশ কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) দাবি করেছে, ভোক্তার বক্তব্য না শুনেই পক্ষপাতদুষ্টভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিইআরসি। ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এম শামসুল আলম মনে করেন, মূল্যবৃদ্ধি না করে লুণ্ঠনমূলক ব্যয় ও অদক্ষতা কমিয়ে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমানো যেত।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বছরে বড় অঙ্কের ভর্তুকি দেয় সরকার। কিন্তু সেই ভর্তুকির সুফল শেষ পর্যন্ত জনগণের কাছে কতটা আর বিশেষ গোষ্ঠীর কাছে কতটা যাচ্ছে, সেটা নিরূপণ করা জরুরি। বছরে সাড়ে ৬ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়তি ধরে দাম বাড়িয়েছে বিইআরসি। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে এ বছর বিদ্যুতের উৎপাদন উল্টো কমেছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে চরম অনিয়ম ও বেপরোয়া জবাবদিহিহীনতার কারণেই আজকের এই সংকট, এতে ভোক্তার কোনো দায় নেই। অথচ খুব সহজ সমাধানের সূত্র হিসেবে তাঁদের ঘাড়েই সবটা দায় চাপিয়ে দেওয়া হয়। ভোক্তার ঘাড়ে নতুন ব্যয়ের বোঝা চাপানোর আগে নীতি নির্ধারকদের অবশ্যই দুর্নীতি ও অদক্ষতা দূর করার পথ ধরতে হবে এবং সেই সঙ্গে ভুল জ্বালানি নীতি থেকে সরে আসতে হবে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়