সাদা শীর্ষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ধান চাষিরা

" ভুক্তভোগী চাষিদের কপালে চিন্তার ভাজ "
আজাদুল ইসলাম আজাদ, পীরগঞ্জ রংপুর :
বোরো মৌসুমের ধানের সাদা শীর্ষ নিয়ে মহা চিন্তায় রয়েছে চাষিরা। হাইব্রিড জাতের ধানের চাষ করে লোকসান বোঝা টানতে হবে চাষিদের এমনটাই ধারনা তাদের। ধান রোপণের শুরু থেকেই ৫ থেকে ৬ বার কীটনাশক স্প্রে করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না ধান চাষিরা। ফলে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে ভুক্তভোগী চাষিদের।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় অধিকাংশ লোকজন কৃষি কাজের সাথে জড়িত এবং কৃষির ওপর নির্ভর। এ উপজেলার অধিক হারে ধানের চাষ হয়ে থাকে। উৎপাদিত ধান নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজেরে বিক্রি করে থাকেন এলাকার চাষিরা। উপজেলা ১ টি পৌরসভা এবং ১৫ টি ইউনিয়নে অধিক হাড়ে হাইব্রিড জাতের ধানের চাষ করা হয়েছে। পাকার আগেই ১০ থেকে ১২ ভাগ ধান জমিতে সাদা শীর্ষ চোখে পরছে। ফলে চাষিদের কপালে চিন্তার ভাজ দেখা দিয়েছ।
বীজ বিক্রেতা বা ডিলাররা বলছেন, ঈদের পর থেকে চাষিরা জমিতে কীটনাশক স্প্রে করে নি যে কারনে মাজরাপোকা ধানের শীর্ষ কেটে সাবাড় করছে। ভালো মানের কীটনাশক স্প্রে করলে মাজরা পোকার আক্রমণ কমে যেতো বলে তারা ধারনা করছে। এছাড়াও এখানে প্রায় ১৫ থেকে ২০ টি কোম্পানির ধান বীজ কৃষকদের মাঝে বিক্রি হয়েছে। বীজের কোন সমস্যা ছিল না। সমস্যা হচ্ছে আবহাওয়া।
উপজেলায় ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো মৌসুমে ধানের চাষ করা হয়েছে বলছে কৃষি বিভাগ।
ধান চাষিরা বলছেন, মৌসুমের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৫ থেকে ৬ বার করে কীটনাশক স্প্রে করেছে, তারপরও পোকা দমন হচ্ছে না। উপজেলা কৃষি বিভাগের লোকজন শুধু মাত্র ইউনিয়ন এবং কৃষি অফিসে বসে সময় পার করে। মাঠ পর্যায়ে ফসলের মাঠ তাদের দেখা মিলে না। কৃষি বিভাগের ইউনিয়ন পর্যায়ে ৩ জন করে উপসহকারী বা (বিএস) রয়েছে তাদের কার্যাক্রম শুধু মাত্র অফিসের কাগজেকলমে এছাড়া তাদের কোন কাজ নেই। এছাড়াও মাঠ পর্যায়ে কিছু প্রদর্শনী রয়েছে সেখানে পরামর্শ বা সেমিনার করে থাকেন বলে চাষীরা দাবি করছেন।
রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, বড় ভগবানপুর গ্রামের লোকনাথ বর্মনের ৫ বিঘা জমিতে সাদা চিটা শীর্ষ দিয়ে ভরে গেছে। কমপক্ষে ১৫/ থেকে ২০ ভাগ সাদা শীর্ষ দেখা গেছে। তার চোখে মুখে চিন্তার ভাঁজ নিয়ে বলেন, ধান আবাদ মৌসুমের খরচ নিয়ে আমি মহা চিন্তায় আছি।
জামালপুর গ্রামের কৃষক মান্নান মিয়া ত ১০ শতাংশ জমিতে হাইব্রিড জাতের ধানেও একই অবস্থা । তিনি বলেন, জমিতে সাদা ধানের শীর্ষ বেড় হয়েছে ৩ বার কীটনাশক স্প্রে করেও সাদা শীর্ষ ঠেকাতে পারছি না।একই এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, কীটনাশক দিয়েও লাভ হচ্ছে না চিটা সাদা শীর্ষ এর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। ধান চাষে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে এখন খরচের টাকা তোলাই কঠিন।
পানেয়া গ্রামের বাদশা মিয়া এবং তপন চন্দ্র বলেন, হাইব্রিড জাতের বীজে এবছর ভ্যাজাল রয়েছে। সব কোম্পানির বীজের একই অবস্থা। তবে আগাম জাতের হাইব্রিড ধানে কিছুটা রোগবালাই কম। নমলা বা লেট সময়ে যে সমস্ত কৃষক ধানের চারা রোপণ করেছে তাদের বেশি ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ ধানের জমিতে মাজরা পোকার আক্রমণে সাদা শীর্ষ দেখা যাচ্ছে। গোছা বা থোপের ভিতর মাজরা পোকার বসবাস যে কারনে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। কীটনাশক দিয়েও এই সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। এ উপজেলায় একসময় চিকন বা (সরু) জাতের ধানের চাষ করা হতো। নানান রকমের রোগবালাইয়ের কারনে সেই সকল ধানের আর দেখা মেলে না। এখন উচ্চ ফলনশীল জাতে ধান চাষে সকলেই ঝুঁকছে।
কৃষি বিভাগের উপসহকারী (বিএস) রা জানান, হঠাৎ করে বৃষ্টি হয়েছে আর বৃষ্টির পরে অনেক কৃষক জমিতে মাজরাপোকা দমনের জন্য কীটনাশক প্রয়োগ করেনি, তাদের জমিতে সাদা শীর্ষ বের হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকার এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আবহাওয়া ভালো ছিল না এবং বৃষ্টির কারনে প্রায় জমিতে মাজরাপোকা আক্রমণ। যতটুকু ক্ষতি হয়েছে সে পর্যন্তই শেষ। আর নতুন করে কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।