৭ ফাল্গুন, ১৪৩১ - ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ - 20 February, 2025

সীমান্তে ফেলানী হত্যার ১৩ বছর আজও বিচারের আশায় পরিবার

আমাদের প্রতিদিন
1 year ago
219


ডা. শেখ মো. নুর ইসলাম, নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম):

আজ ৭ জানুয়ারি। সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যার ১৩ বছর। ২০১১ সালের এই দিনে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ-র গুলিতে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয় ফেলানী। দীর্ঘ সাড়ে চার ঘন্টা কাটাতারে ঝুলে থাকে ফেলানীর মৃত দেহ। গণমাধ্যমসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত। পরে বিএসএফ এর বিশেষ কোর্টে দুই দফায় বিচারীক রায়ে খালাস দেয়া হয় অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে। এ রায় প্রত্যাক্ষান করে ভারতীয় মানবাধীকার সংগঠন মাসুম এর সহযোগিতায় ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টে রীট আবেদন করে ফেলানীর পরিবার। এই হত্যা কান্ডের ১ যুগ পার হয়ে ১৩ বছরে  পড়লেও এখনো সুষ্ঠু বিচার পায়নি ফেলানীর পরিবার।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামের দরিদ্র নূরুল ইসলাম পেটের তাগিতে আর দশজনের মতো পারি জমান ভারতে। পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতের বঙ্গাইগাও এলাকায়। নূরুল ইসলামের বড় মেয়ে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয় বাংলাদেশে। বিয়ের উদ্দেশে নিজ দেশে ভারতের কাটাতার টপকে আসতে হবে তাদের। ৭ জানুয়ারী শুক্রবার। ভোর ৬টা ফুলবাড়ির অনন্তপুর সীমান্তে মই বেয়ে কাটাতার টপকায় ফেলানীর বাবা। পরে কাটাতার টপকানোর চেষ্টা করে ফেলানী। এসময় ভারতীয় বিএসএফ’র গুলিতে বিদ্ধ হয় সে। গুলি বিদ্ধ হয়ে আধাঘন্টা ধরে ছটফট করে কোটাতারেই ঝুলন্ত অবস্থায় নির্মমভাবে মৃত্যু হয় কিশোরী ফেলানীর। এর পর সকাল পৌনে ৭টার থেকে নিথর দেহ কাঁটাতাঁরে ঝুলে থাকে দীর্ঘ সাড়ে ৪ঘন্টা। এঘটনায় বিশ্বব্যাপী তোলপাড় শুরু হলে ২০১৩ সালের ১৩ আগষ্ট ভারতের কোচবিহারে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। বিএসএফ এর এ কোর্টে স্বাক্ষীদেন ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম ও মামা হানিফ। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামী অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফ এর বিশেষ কোর্ট। পরে রায় প্রত্যাক্ষান করে পুন:বিচারের দাবী জানায় ফেলানীর বাবা। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পূর্ন:বিচার শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আবারও আদালতে স্বাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা। ২০১৫ সালের ০২ জুলাই এ আদালত পুনরায় আত্মস্বীকৃত আসামী অমিয় ঘোষকে খালাস দেয়। রায়ের পরে একই বছর ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রীম কোর্টে রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানী শুরু হয়। ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮  সালে কয়েক দফা শুনানী পিছিয়ে যায়। পরে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ করোনা শুরুর আগে শুনানীর দিন ধার্য হলেও শুনানী হয়নি এখনো। এদিকে মেয়ের হত্যাকারীর বিচার না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম  ও মা জাহানারা বেগম।

ফেলানীর বাবা নূরুল ইসলাম বলেন, ফেলানী হত্যার ১৩ বছর হয়ে গেল এখন পর্যনন্ত বিচার পাই নাই। ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টে বিচারটা নিয়া গেলাম, কয়েকবার শুনানীর তারিখ দিলেও তা পিছিয়ে গেছে। কয়েকদিন আগে শুনলাম শুনানী হবে। তবে কবে হবে এর কোন তারিখ পাইনি। আমি আমার মেয়ে ফেলানী হত্যাকারীর বিচার মরার আগে যেতে চাই।

কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকউটর এ্যাড.এস,এম,আব্রাহাম লিংকন জানান, ভারতের মহামান্য সুপ্রিমকোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার রীট তালিকাভূক্ত রয়েছে। সেটি যত দ্রæত শুনানী হবে ততই মামলাটির অগ্রগতি হবে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth