১২ শ্রাবণ, ১৪৩১ - ২৭ জুলাই, ২০২৪ - 27 July, 2024
amader protidin

নাগেশ্বরীতে বাড়ছে ওষুধিগুণ সম্পন্ন ও মশলা জাতীয় চুই ঝাল চাষ সাবলম্বী হচ্ছেন কৃষকরা

আমাদের প্রতিদিন
2 months ago
98


ডা. শেখ মো. নুর ইসলাম, নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম):

খুলনা, যশোর, নড়াইলসহ দক্ষিণের জেলাগুলোতে চুইঝাল চাষ বেশ জনপ্রিয়। বাসাবাড়ি, হোটেল, রেঁস্তোরাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাঁস, গরু, খাসির মাংস ও মাছ ছাড়াও বিভিন্ন খাবারে বাড়তি স্বাদ পেতে এই মসলা বেশ জনপ্রিয় ভোজন রশিকদের কাছে। শুধু তাই নয়, খাবারের স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি ক্যান্সার, হৃদরোগ, ক্ষুধামন্দা, গ্যাস্ট্রিক, এ্যাজমা ও হাঁপানীসহ অসংখ্য রোগের প্রতিশেধক হিসেবেও ব্যবহার করা হয় চুই ঝাল। বিভিন্ন রোগের ওষুধিগুণ থাকায় অধিক ব্যবহৃত এই লতা জাতীয় মসলার চাষ বাড়ছে বাণিজ্যিকভাবেও। বাড়ির আনাচে কানাচে, পরিত্যাক্ত এবং সুপারি বাগানসহ বিভিন্ন গাছে পরজিবী হিসেবে বেড়ে ওঠায় খরচের তুলনায় চুই চাষে অধিক লাভ। তাই ওষুধী গুণ সম্পন্ন ও মসলা জাতীয় চুইঝাল চাষে আগ্রহ বাড়ছে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর কৃষকদের। আর এসব চুইঝাল বিক্রিতেও নেই ঝামেলা। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যায় বাড়ি থেকে। অল্প পুঁজি ও কম পরিশ্রমে অধিক লাভ হওয়ায় চুইঝাল চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন এ উপজেলার অনেক কৃষক। চুই গাছের আকার—আকৃতি ও পরিমাপ অনুযায়ী প্রতিটি চুইঝালের গাছ বিক্রি হয় ৩ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত। নেওয়াশী ইউনিয়নের গোবর্ধ্বনকুটি ব্লকের চাকেরকুটি এলাকার চুইঝাল চাষি হোসেন আলীর সুপারি বাগানে বিভিন্ন গাছের গোড়ায় চুইঝাল লাগিয়েছেন প্রায় ২ শতাধিক, মকবুল হোসেন লাগিয়েছেন প্রায় ৩শ,  মোস্তফা কামাল সাড়ে ৩শ, জালাল উদ্দিনের দেড় শতাধিক এবং মোজাফ্ফর হোসেনের বাগানে রয়েছে দেড় শতাধিক চুইগাছ। কৃষকরা জানান চুইঝাল চাষে তেমন কোনো খরচ নেই। যেকোনো গাছের গোড়ায় বর্ষা মৌসুমে রোপন করে মাঝে মাঝে হালকা জৈব সার ও পানি দিলেই হয়ে যায়। ১ থেকে ৩ বছরের মধ্যেই চুই ঝাল খাওয়া কিংবা বিক্রির উপযোগী হয়। আর এসব গাছ বিক্রি হয় ৩ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত। কৃষক মকবুল হোসেন জানান, চুইঝাল চাষ করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে তার। চুই বিক্রির টাকা দিয়ে তার সংসারের যাবতীয় খরচ চলে। এই টাকায় তিনি ইট কিনে বাড়ি করেছেন। জালাল উদ্দিন জানান, তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে তার সুপারি বাগানের চুইঝাল চাষ করছেন। তিনি এ পর্যন্ত একটি গাছ ৪০ হাজার পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। মোস্তফা কামাল জানান, চুই গাছ হুবহু পান গাছের মতো হওয়ায় এটি গাছের গোড়ায় রোপন করতে হয়। তখন চুইগাছ পরজীবির মতো করে অন্য গাছে আকড়ে ধরে থাকে। সে গাছ বড় ও মোটা হলেই খাবার ও বিক্রি উপযোগী হয়। উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের নাখারগঞ্জ এলাকার রফিকুল ইসলাম জানান তিনি তার সুপারি বাগানে ৪০টি গাছে চুইঝাল লাগিয়েছেন। প্রতি বছর তিনি চুই বিক্রি করেন এক থেকে দেড় লাখ টাকা।

নেওয়াশী ইউনিয়নের উপ—সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, চুইঝাল ঔষধিগুণ সম্পন্ন ও মসলা জাতীয় হওয়ায় চুই চাষের কদর বাড়ছে বিভিন্ন এলাকায়। আমার নিজ উদ্যোগে কৃষকদেরকে পরামশের্র মাধ্যমে আমি আমার ব্লকের কৃষকদেরকে চুই চাষে উৎসাহিত করছি। ফলে এই এলাকায় অনেক চুই চাষি রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের পাশাপাশি এখন নাগেশ্বরীতেও সুপারি বাগান ও বিভিন্ন গাছে সাথী ফসল হিসেবে চুইঝাল চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। শুধু গাছপালা নয়, চুইঝাল চাষ করা যায়, ঢালাওভাবে মাটিতে কিংবা মাচার মাধ্যমেও। এর বাণিজ্যিক প্রসার ঘটাতে আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদেরকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি যাতে দেশের মসলার চাহিদা অনেকাংশে পুরণ হয় সেই লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়