৩০ মাঘ, ১৪৩১ - ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ - 13 February, 2025

রংপুর প্রেসক্লাব ২৯ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ফাঁস ধামাচাপা দিতে বহিষ্কৃত সদস্যরা মরিয়া

আমাদের প্রতিদিন
2 weeks ago
204


রংপুরে কর্মরত সাংবাদিকদের সদস্যভুক্তির মুচলেকায় সরকারি জমি রেজিষ্ট্রি : ৩০ বছরে মানা হয়নি শর্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রংপুর প্রেসক্লাবের নির্মাণ কাজের নামে সরকারী বরাদ্দকৃত ২৯লাখ টাকার লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারের দু’টি সংস্থার নিরীক্ষা কমিটি তদন্তে ওই টাকা আত্মসাতের প্রমান পেয়েছে। এই দুর্নীতির ঘটনা আড়াল করতে ক্লাবের বতর্মান বহিষ্কৃত কমিটির সদস্যরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। নিজেদেও বাঁচাতে কতিপয় বহিরাগতদের নিয়ে সরকারী নির্দেশ অমান্য ও রাষ্ট্রীয় কাজে বাঁধা সৃষ্টি করে গত ২২ জানুয়ারি বুধবার ক্লাবের তালা ভেঙ্গে ফেলেছে অভিযুক্তরা। এ সময় তারা দুর্নীতির গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সরিয়ে ফেলেছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক ১৯৯১ সালে রেজিষ্ট্রেশনকৃত সংগঠন রংপুর প্রেসক্লাব। এই ক্লাবের অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির দায়ে বর্তমান কমিটিকে বহিস্কার করে ১৫ জনুয়ারি সমাজসেবা অধিদপ্তর। প্রেসক্লাবের বর্তমান ভবনটি সরকারি খাস জমির দশমিক ৩৭ শতক (০.৩৭৫০)এর উপর নির্মিত। জমিটি ১৯৯৭ সালে ২২ সেপ্টেম্বর ১০০০ টাকা সেলমি মূল্যে সরকার রংপুর প্রেসক্লাবের নামে সাব কবলা(রেজিষ্ট্রি) করে দেয়। তৎকালিন সময়ে রংপুর প্রেসক্লাবের পক্ষে সভাপতি আব্দুস সালাম ও সাধারন সম্পাদক লিয়াকত আলীর নামে রেজিষ্ট্রি করে দেন সেই সময়ে রংপুর জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব)।

এ সময় মাত্র ২৭জন সাংবাদিককে রংপুর প্রেসক্লাবের সদস্য দেখিয়ে জমি রেজিষ্টি করার জন্য জেলা প্রশাসকের দপ্তরে তৎকালিন রংপুর প্রেসক্লাবের পক্ষে সভাপতি মোজোম্মেল হক ১৯৮০ সালের ৯ নভেম্বর আবেদন জানান। এ তথ্য জানার পরে যারা প্রেসক্লাবের সদস্য হতে পারেননি সেই সব সাংবাদিক জেলা প্রশাসকের দপ্তরে তাদের প্রেসক্লাবের সদস্যভুক্ত করার শর্তে সরকারি জমি রেজিষ্ট্রি করে দেয়ার অনুরোধ জানান। জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে সেই সময়ের প্রেসক্লাবের কমিটি পরে সাধারন সভা করে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে একটি লিখিত মুচলেকা দেয়। ১৯৯৫ সলের ২০জানুয়ারী সভাপতি আব্দুস সালাম ও সাধারন সম্পাদক আবু তালেবের স্বাক্ষরিত ওই মুচলেকায় বলা হয়, ‘দীর্ঘ সময়ে নিজেদের মধ্যে আভ্যন্তরীন জটিলতার কারণে এই জমিটি রেজিষ্ট্রিকরণসহ প্রস্তাবিত ভবনটি নির্মাণ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। বর্তমানে রংপুরের সকল সাংবাদিক অত্র প্রেসক্লাবের সদস্যভুক্ত হয়েছেন,অনুগ্রহ পূর্বক আমাদের বরাদ্দকৃত জমিটি ক্লাবের নামে রেজিষ্ট্রি করে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহন করে প্রস্তাবিত ক্লাব ভবন নির্মাণে সহায়তা করবেন বলে আশা রাখছি...’ এর পরে জেলা প্রশাসক জমিটি ক্লাবের নামে রেজিষ্ট্রি করে দেন।

পরে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু দোকান ঘর বিক্রির সেলামি দিয়ে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হলেও আর্থিক সংকটে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এর পরে রংপুর প্রেসক্লাবে ‘বিশিষ্ট পরমানু বিজ্ঞানী ড.এম এ ওয়াজেদ মিয়া’ মিলনায়তন নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার সচিবের কাছে ২০১১ সালের ১ অক্টোবর আর্থিক অনুদানের আবেদন জাননো হয়। প্রথম পর্যায়ে ৮০লাখ টাকা এবং পরে দ্বিতীয় দফায় ২০লাখ টাকা সরকারি টাকা অনুদান দেয়া হয়।

এই সরকারি টাকা ও কিছু দোকান বিক্রির মোট আড়াই কোটি টাকায় ক্লাবের তৃতীয় ও চতুর্থতলার বর্ধিত অংশ নির্মান কাজ করা হয়। এর পরে ২০২১-২৩ সালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি মাহবুব রহমানের সময় তিনি নির্বাহী কমিটি ও সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ওই ব্যয়কৃত টাকার নিরীক্ষার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সে সময়ে এখন যারা সমাজসেবা অদিপ্তরের প্রশাসকের কাছে ক্লাবের আন্তবর্তীকালিন দায়ীত্ব হস্থান্তর করতে বাঁধা সৃষ্টি করছেন সেই চক্রটির বাঁধার মুখে নানা কৌশলে ৫দফা নিরীক্ষা করার পরও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

কেন নিরীক্ষা প্রতিবেদনের আলোকে অভিযুক্তদের শাস্তি দেয়া সম্ভব হয়নি? সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তৎকালিন সভাপতি মাহবুব রহমান বলেন, আড়াই কোটি টাকার মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে নির্মাণ কাজের ১কোটি ৩লাখ টাকার নিরীক্ষা করে ২৮লাখ ২০ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনার প্রমাণ পায় সর্বশেষ নিরীক্ষা কমিটির সদস্য বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক (ডিএসএ) অফিসের নিরীক্ষক নাসির উদ্দিন ও আবু সায়েদ। তারা গত ২০২৩সালের ২২ জুন ওই নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেন।

নির্মাণ কমিটির সাথে যুক্ত কমিটির সদস্য সদরুল আলম দুলু, সাইফুল ইসলাম জাহাঙ্গির, বর্তামান বহিষ্কৃত সভাপতি মোনাব্বর হোসেন মনা, সাধারন সম্পাদক মেরিনা লাভলী, সাবেক কোষাধ্যক্ষ উত্তর বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার, সম্পাদক রফিক সরকারসহ মোট ১১জনের স্বাক্ষরীত যে হিসাব জমা দেন তাতে  ১কোটি ৩লাখ ৫১ হাজার ৩শত ৫২টাকার ব্যয় হিসাব জমা দেন। সেই হিসেবই নিরীক্ষা করে ২৮ লাখ ২০হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনা প্রমানিত হয়। এ কারনে তারা দুর্নীতির দায় থেকে নিজেদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠেছেন। বাকি  ১কোটি ৪৭ লাখ টাকার নিরীক্ষা করলে আরও প্রায় ৭০ লাখ টাকার আত্মসাতের ঘটনা ফাঁস হওয়ার ভয়ে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। টাকা আত্মসাতের ঘটনায় প্রেসক্লাব সদস্য রেজাউল ইসলাম বাবু বাদি হয়ে রংপুরে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। যা পিবিআই তদন্ত করছেন।

 

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth