দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের চার লেন খুলে দেয়া হয়েছে

উত্তরের মানুষের সড়ক পথে ঈদযাত্রায় যানজটের ভোগান্তি কমবে
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর ঈদে ঘরমুখো উত্তরাঞ্চলের জন্য মানুষের যাত্রা নিরাপদ করতে সাসেক-২ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের মুল চার লেন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া দিয়েছে। গত শুক্রবার টাঙ্গাইল জেলার এলেঙ্গা থেকে রংপুরের মর্ডাণ মোড় পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ ছয় লেনে খুলে দেয়ায় উত্তরের জেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগ যাত্রার সময় অন্ততঃ ২ঘন্টা কমে আসবে। শুধু তাই নয় সড়ক পথে আসা যাত্রীরা যানজটের ভোগান্তির শিকার হবে না। এর ফলে এ অঞ্চলে শিল্প কলকারখানা স্থাপনের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে। পরিবহন ব্যবস্থায় বাড়বে গতি। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো- অপারেশনের (সাসেক)-২ ৮এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোহসিন হাওলাদার জানান, ১৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০২৬ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে এমনটি আশা করা যাচ্ছে। এই সড়ক পথের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হলে রংপুর বিভাগের ৮ জেলার সাথে যাত্রী পরিবহন সময় প্রায় গড়ে আড়াই ঘন্টা কমে আসবে। এখন বিশেষ করে ঈদের সময় এই সড়ক পথে যানজটের কারনে প্রায় ১৬ঘন্টা থেকে ২০ঘন্টা সময় লাগে। স্বাভাবিক সময়ে সময় লাগে প্রায় ৮ঘন্টা থেকে ১০ঘন্টা। এই সড়কের নির্মাণ রংপুর,বগুড়া ও গাইবান্ধা অংশে ৯৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ব্রীজ-কালভার্ট, আন্ডারপাস ও উড়াল সড়কের কাজসহ অন্যান্য কাজ সামান্য কিছু কাজ বাকি রয়েছে। গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ি ও রংপুর জেলার শঠিবাড়ি এলাকায় ভূমি অধিগ্রহনে বিলম্ব হওয়ায় কাজ সম্পন্ন করতে বিলম্ব হয়েছে। এ অংশ ছাড়া বাকি সব কাজ শেষ হয়ে গেছে। বাকি যে সব কাজ রয়েছে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে শেষ হবে। সেভাবে কাজের গতি বাড়ানো হয়েছে। তবে সব কিছু বিবেচনা করে এই ঈদকে ঘিরে চার লেন সড়ক ওপেন করে দেয়া হয়েছে গত শুক্রবার একুশ মার্চ। তিনি আরও বলেন, সড়ক অবকাঠামোর পাশাপশি ইন্টালিজেন ট্রান্সপোর্ট সিসটেম উন্নতিকরণ, টোলপ্লাজা, সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি গবেষনাগার নির্মাণ এবং হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ টেন্ডার দেরিতে হওয়ায় এ কাজ লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে ২০২৬ সালে শেষ হবে। এ প্রকল্পটি সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশনের (সাসেক-২) আওতায় চলছে। সাসেক -২ সূত্রে জানা গেছে, রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বড়দরগা থেকে রংপুরের মর্ডাণ মোড় পর্যন্ত ২৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার সড়কে এখন পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছে ৯৫ শতাংশ। মিঠাপুকুরের শঠিবাড়ী বাজার থেকে দেড় কিলোমিটার
অর্থাৎ ২২ একর জমি অধিগ্রহণ করার পর সেখানে সামান্য কিছু কাজ বাকি
রয়েছে। সেখানকার ভূমি মালিকদের অসহযোগীতার কারণে কাজে বিলম্ব হয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পায়রাবন্দ ইসলামপুর এলাকায় স্বয়ংক্রিয় টোল
প্লাজার নির্মাণ কাজ চলছে। এর সাথে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলমান
রয়েছে। সাসেক -২ কমকর্তা জানিয়েছে, পীরগঞ্জের বড়দরগা থেকে রংপুর মর্ডাণ
মোড় পর্যন্ত ২৩ দশমিক ৮ কিলোমিটা সড়কে ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি
কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে।
জানা গেছে, পীরগঞ্জের বড়দরগা থেকে রংপুরের মর্ডাণ মোড় পর্যন্ত মহাসড়ক
প্রকল্পে ব্যায় ধরা হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি। সূত্র মতে,
সাসেক-২ রংপুর অংশের দুই পাড়ে মোট সড়কের প্রস্থ ২৯ মিটারেরও বেশি। এর মধ্যে
মূল সড়ক ৪ লেন রয়েছে ১৮ দশমিক ২ মিটার। ধীর গতির যানবাহন চলাচলের জন্য
শ্লোমুভিং ভেহিক্যাল ট্রাফিক এসএম ভিটি লেন নির্মাণ করা হচ্ছে। এই
সড়কে বড়দরগায় ৫৪ মিটার, শঠিবাড়িতে ৫৪ মিটার, মিঠাপুরে ৬৯ মিটার ও
জায়গীরহাটে ৩০ মিটার আন্ডারপাস রয়েছে। এছাড়া ২৫ দশমিক ৫ মিটার মর্ডাণ
ব্রীজ ও ৬৭ দশমিক ১৫ মিটার দমদমা ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে। বৈরাগীগঞ্জ ও
পায়রাবন্দে দুটি ইউটার্ণ রয়েছে। মিঠাপুরের গড়ের মাথায় সংযোগ সড়ক (
ইন্টারসেকশন) রয়েছে।
সড়ক বিভাগের সাসেক-২ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প ম্যানেজার-৮ নাশিদ হাসান সিরাজী
জানান, দীর্ঘ দিনের যে এ অঞ্চলের মানুষের দুঃখ ছিল সড়ক পতে যাতাযাত করাতে
যানজটের কারনে চরম ভোগান্তি পোহাতে হতো। রংপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব ৩২২
কিলোমিটার। অথচ সড়ক পথে যেতে সময় লাগে প্রায় গড়ে ১০ঘন্টা। ঈদের সময়
কখনো কখনো ২০ ঘন্টা লেগে যায়। দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী,
লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার জেলাগুলোর সাথে আনুপাতিকহারে একই
রকম সময় লাগে সড়ক পথে যাতায়ত করতে। এই ভোগান্তির অবসান হয়েছে সড়কের
সব চারটি লেন খুলে দেয়ায়। ধীরগতির যানবাহন চলাচলের লেন দুটি খুব দ্রুত খুলে
দেয়ার হবে। হাটিকুমরুল থেকে রংপুরের চার লেন মহাসড়কের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হলে
উত্তরাঞ্চের সাথে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা আমুল পরিবর্তন ঘটবে। এর
পাশাপাশি গড়ে উঠবে শিল্প কলকারখানা। প্রসারিত হবে ব্যবসা বাণিজ্য। এসব
হলে সৃষ্টি হবে ব্যাপক কর্মসংস্থান। এ অঞ্চলের মানুষের যে ঢাকামুখি যাওয়ার
প্রবনতা তাও কমে আসবে।
উল্লেখ্য এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত চার লেন সড়কের কাজ ২০১৯ সালের জুন শুরু হয়।
২০২২ সালের জুনের মধ্যে তা শেষ হওয়ার কথা ছিলো। করোনা মহামাড়ির দুর্যোগ,
রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে বিশ্বজুড়ে উন্মাদনা ও বন্যার কারণে প্রকল্পের কাজ
গতি কমে যাওয়ায় এখন তা ২০২৬ সালের শেষ কারার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।